ফের একবার উত্তরবঙ্গে সীমান্তে কাঁটাতার দিতে গেলে বিএসএফকে বাধা দিল বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। কোচবিহার জেলার ভোটবাড়ি এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম সীমান্তের এপারে ভারতের দিকে কাঁটাতার দিচ্ছিল বিএসএফ। কাঁটাতারের বেড়া ও লোহার খুঁটি বসানো হয়েছিল অনুপ্রবেশ রুখতে। তবে তাতে আপত্তি বিজিবির। ১ মার্চ সকালে এই নিয়ে বিরোধ দেখা দেয় বিজিবি এবং বিএসএফের। পরে কাঁটতার দেওয়ার কাজ বন্ধ রাখা হয়। বিকেলে বিষয়টি নিয়ে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় পতাকা বৈঠক।
এদিকে বিজিবির কথায় সীমান্তে কাজ বন্ধ করলেও সেখানে জওয়ানের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে বিএসএফ। পরে বিএসএফের ভোটবাড়ি ক্যাম্পের কমান্ডার জালম সিং বিজিবির সঙ্গে বৈঠক করেন। বিজিবির দাবি, বিএসএফ তাদের জানিয়েছে, জেলা প্রশাসনের সহায়তায় সীমান্তে বেড়া নির্মাণ শুরু করেছিল ভারতীয় গ্রামবাসী। এদিকে সীমান্তে থমথমে পরিস্থিতির আবহে বিজিবি টহল বাড়িয়েছে সেই এলকায়।
এর আগেও সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিতে গেলে বারংবার বিএসএফকে বাধা দিয়েছে বিজিবি। তবে সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিজিবি, বিএসএফ শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে নাকি উভয় পক্ষই সীমান্তের ১০০টি স্থান চিহ্নিত করেছিল যেখানে সীমান্ত দেওয়া হবে। এমনই দাবি করা হয় দ্য টেলিগ্রাফের রিপোর্টে। এদিকে দুই দেশই যোগাযোগ স্থাপনের জন্যে একটি নির্দিষ্ট মাধ্যম স্থির কথার বিষয়ে সহমত হয়েছে। সীমান্তে উত্তেজনার মাঝে 'আস্থা' বৃদ্ধির বার্তা দেওয়া হয় দুই পক্ষেই। তবে কোথায় কি? সীমান্তে ফের ভারতকে কাঁটাতার দিতে বাধা বিজিবির।
এর আগে সম্প্রতি মালদার সুকদেবপুরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ছড়িয়েছিল। গত ১৮ জানুয়ারি মালদায় ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে বাংলাদেশিরা চড়াও হয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই সময় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের রুখে দিয়েছিল বিএসএফ। সুকদেবপুরবাসীদের অভিযোগ, ইউনুস জমানাতেই বাংলাদেশিরা ভারতীয় ভূখণ্ডে এসে লুটপাট চালাতে শুরু করেছে। তেহট্ট এলাকাতেও কৃষিজমিতে লুটপাটের অভিযোগ উঠেছিল বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে। অপরদিকে উত্তর দিনাজপুরে অনপ্রেশের ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার। এদিকে উত্তরে জলপাইগুড়িতেও সীমান্তে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে বিএসএফ এবং বিজিবির মধ্যে। সীমান্ত নিয়ে নদিয়াতেও উত্তেজনা ছড়িয়েছিল।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কোদালিয়া নদীর অংশে ৫ কিলোমিটার এলাকায় নাকি বিজিবি নিজেদের 'দখল প্রতিষ্ঠা' করেছিল সম্প্রতি। এই ৫ কিলোমিটার জমি নিয়ে বিএসএফ এবং বিজিবির মধ্যে দেখা দেয় মতপার্থক্য। উল্লেখ্য, এই কোদালিয়া নদী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় দিয়ে। এরপর কিছু দূর বয়ে তা মহেশপুরের মাটিলা সীমান্ত দিয়ে আবার ভারতের রানাঘাটে প্রবেশ করে। এখানেই প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে 'মতপার্থক্য'। উল্লেখ্য, পূর্ব পাকিস্তান আমলে ১৯৬১ সালের মানচিত্রের বরাত দিয়ে বিজিবি দাবি করে, ওই ৫ কিলোমিটার এলাকা তাদের। আবার বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭৫ সালে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী এই পাঁচ কিলোমিটার এলাকা ভারতীয় ভূখণ্ডের অন্তর্গত।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া দিতে গেলে তাতে আপত্তি জানাচ্ছে বিজিবি। এদিকে অনুপ্রবেশকারী বা পাচারকারীদের গুলি করলে তাতেও আপত্তি ওপারের শাসক গোষ্ঠীর। প্রসঙ্গত, বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই সীমান্তে কাঁটাতার দেওয়া নিয়ে সংঘাত দেখা গিয়েছে বিএসএফ এবং বিজিবির মধ্যে। এই আবহে মালদা সহ একধিক জায়গায় ভারতীয় ভূখণ্ডের কাঁটাতার দিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ছে বিএসএফ। এর জেরে সীমান্তের বহু জায়গায় ছড়িয়েছে উত্তেজনা। এই ইস্যুতে বাংলাদেশের দাবি, ১৯৭৫ সালে যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত চুকি দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তা অনুযায়ী, সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫০ গজ ভিতরে 'প্রতিরক্ষা কাঠামো' তৈরি করা যাবে। এদিকে ২০১০ সালে অবশ্য বাংলাদেশ ভারতকে লিখিত আকারে অনুমতি দিয়েছিল যে সীমান্তে ১৫০ গজের ভিতরেও প্রয়োজনে কাঁটাতারের বেড়া দিতে পারবে ভারত। এই কথা নিজে স্বীকার করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী। এখন বাংলাদেশের গদিতে 'মুখ' পরিবর্তনের পরে তাদের অভ্যন্তরীণ সমীকরণ যাই হয়ে থাকুক না কেন, আগের সরকারের স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক আন্তর্জাতিক চুক্তি মানতে বাধ্য তারা।