বীরভূম শান্তিনিকেতন গেলেই অনেকে যেই স্থানে যান, সেটি হল কঙ্কালিতলা। বোলপুর-শান্তিনিকেতন থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মাতৃমন্দির। তবে কঙ্কালিতলা কোনও সাধারণ মাতৃমন্দির নয়। মনে করা হয়, এখানেই পতিত হয়েছিল সতীর কোমর বা কাঁখাল। কাঁখাল থেকেই এসেছে কঙ্কালি শব্দটি, আর স্থানটির নামকরণ করা হয়েছে কঙ্কালিতলা।
আরও পড়ুন - বাংলার এখানেই মন পড়েছিল সতীর? দেশবিদেশের পর্যটকদের কাছে আজও অমোঘ আকর্ষণ এই শক্তিপীঠ
শেষ দেহাংশের কাহিনি
দেবাদিদেব মহাদেবকে ছাড়়াই অনুষ্ঠিত হচ্ছে দক্ষের যজ্ঞ। এই খবর পাওয়ামাত্রই প্রবল রোষে ফেটে পড়েন দেবী সতী। আত্মহুতি দেন। সতীয় বিয়োগ যন্ত্রণা ত্রিলোকেশ্বরকে উন্মাদ করে দেয়। প্রবল রাগে তিনি তাণ্ডব নৃত্য আরম্ভ করেন দেবীর দেহ কাঁধে নিয়ে। এই সময় সেখানে উপস্থিত হন ভগবান বিষ্ণু। তাঁর সুদর্শন চক্র ৫১ ভাগে বিভক্ত করে দেয় সতীর দেহ। কথিত আছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে সেই দেহাংশগুলি পতিত হয়। পরে সেই স্থানগুলিতে গড়ে ওঠে সতীপীঠ। তেমনই বীরভূমের এই স্থানে পতিত হয়েছিল সতীর কোমর।
আরও পড়ুন - বাংলার সতীপীঠের সবকটি কাহিনি এই লিঙ্কে
পটচিত্রে পূজিত হন মা
কঙ্কালিতলায় দেবীর কোনও মূর্তি নেই। পটচিত্রে পূজিত হন মাতৃকাশক্তি। পটেই দেবীকে অর্পণ করা হয় জবার মালা। কঙ্কালিতলা মন্দিরের ভৈরব হলেন রুরু ও দেবী হলেন বেদগর্ভা। বীরভূমের এই সতীপীঠ পৌরাণিক বিশ্বাসমতে, ৫১টি পীঠের শেষ পীঠ। মন্দিরের ঈশান কোণে রয়েছে একটি কুণ্ড। এই কুণ্ডের জলের অলৌকিক ক্ষমতা আছে বলে মনে করা হয়।
কুণ্ডের জলেই পঞ্চশিব
প্রচলিত বিশ্বাস, ওই কুণ্ডের জলেই পতিত হয়েছিল সতীর কোমর। তবে মনে করা হয় সেখানে নিমজ্জিত রয়েছে পঞ্চশিবও। এই পঞ্চশিবকে ১২ বছর অন্তর কুণ্ড থেকে তুলে এনে পুজো করা হয়। পুজো শেষে ফের ওই কুণ্ডের জলেই নিমজ্জিত করে রাখা হয়। বীরভূম লালমাটির দেশ। গরমকালে প্রচণ্ড দাবদাহে চারপাশ ফুটিফাটা হয়ে যায়। শুকিয়ে যায় কঙ্কালিতলার আশেপাশের পুকুরগুলো। কিন্তু কুণ্ডে তখনও জল টলটল করে। মন্দিরের পিছনের অংশে রয়েছে ছায়া সুনিবিড় বনস্পতি ও গাছপালার ভিড়। একটু এগোলেই দেখা যাবে শশ্মান। স্থানীয়দের কথায়, এই শশ্মানে আজও গুপ্ত তন্ত্রের সাধনা করেন তান্ত্রিকরা।
আরও পড়ুন - সতীর অধঃওষ্ঠ থেকে নাম হয়েছে অট্টহাস! বর্ধমানে নদী তীরের জঙ্গলঘেরা এই পীঠে কীভাবে পৌঁছবেন? রইল হদিশ
একান্ন কুমারীর পুজো
কঙ্কালিতলায় চৈত্র সংক্রান্তিতে বড় করে মায়ের উৎসব আয়োজিত হয়। কুণ্ডেই মন্দিরের পুজো হয়। পাশাপাশি মন্দিরকে ঘিরে মেলা বসে। দেবীপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে কুণ্ডের ধারে সতীদেহের ৫১টি খণ্ডকে সংকল্প করে একটি ঘট স্থাপন করা হয়। তার পর পঞ্চবটী গাছের নিচে একান্ন কুমারীর পুজো করা হয়।