আরজি কর কাণ্ডকে 'বিরলের থেকে বিরলতম' আখ্যা দিয়ে দোষী সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির দাবি জানিয়েছিল তদন্তকারী সিবিআই। তবে শিয়ালদা আদালতের বিচারক সিবিআইয়ের সেই দাবি মানেননি। চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা শোনান বিচারক। সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে গিয়েছে রাজ্য সরকার এবং সিবিআই। এই নিয়ে জোর চর্চা চলছে গোটা দেশেই। এরই মাঝে এবার অন্য এক মামলায় ফাঁসি নিয়ে বড় পর্যবেক্ষণ করল সুপ্রিম কোর্ট। এই আবহে শীর্ষ আদালত বলে, 'মৃত্যুদণ্ড ব্যতিক্রম, নিয়ম নয়।' (আরও পড়ুন: নজর ছিল গোটা বিশ্বের, সুদের হার নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নিল মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ?)
আরও পড়ুন: কেন মহাকুম্ভে পদপিষ্ট এত জন? ষড়যন্ত্র কি? বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ যোগীর
শীর্ষ আদালত বলে, 'কোনও মামলায় একাধিক খুনের ঘটনা ঘটলেও যে সেটা বিরলতম হিসেবে বিবেচিত হবে, এমনটা নয়। সেখানে যদি অন্তত সংস্কারের যুক্তিসঙ্গত সম্ভাবনা থাকে, তাহলে দোষীকে কম সাজা দেওয়াই বাঞ্ছনীয়।' বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং সন্দীপ মেহতার বেঞ্চে সম্প্রতি একটি মামলা আসে যেখানে এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রী এবং চার কন্যাকে হত্যা করে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল। সেই মামলায় দোষী ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডের সাজা খারিজ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে আদালত। আদালত জোর দিয়ে বলেছে যে অপরাধটি নৃশংস হলেও কারাগারের রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে এই ক্ষেত্রে দোষীর সংস্কারের সুযোগ আছে। (আরও পড়ুন: 'দেহের অবস্থা ভালো না', মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু কলকাতার বৃদ্ধারও)
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বরের রাতে নিজের স্ত্রী এবং চার নাবালিকা মেয়েকে খুন করেছিল এই ব্যক্তি। এর আগে ট্রায়াল কোর্ট এবং এলাহাবাদ হাই কোর্ট সেই ব্যক্তিকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্ট এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ করল। এরই সঙ্গে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, অপরাধের প্রকৃতির বাইরে গিয়ে অপরাধীর পরিস্থিতিও মূল্যায়ন করতে হবে সাজা ঘোষণার ক্ষেত্রে।
এর আগে সঞ্জয় রায়ের ক্ষেত্রে ফাঁসির সাজা যাতে না দেওয়া হয়, তার জন্যে শিয়ালদা আদালতে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের উল্লেখ করেছিলেন সঞ্জয় রায়ের আইনজীবীরা। পরে বিচারক অনির্বাণ দাস সঞ্জয়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। বিচারক আরও বলেছিলেন, আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমনা দিতে হবে সঞ্জয় রায়কে। তার আগে গত ১৮ জানুয়ারি আদালতের তরফ থেকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৩ (ধর্ষণ), ৬৪ (ধর্ষণের সময় এমন ভাবে আঘাত করা, যাতে মৃত্যু হয়), ১০৩ (১) নং (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল সঞ্জয়কে। এই আবহে সঞ্জয়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানা, ৬৬ ধারায় আওতায় আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ১০৩ (১) ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবনের সাজা ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন বিচারক। এদিকে বিচারক নির্দেশ দেন, নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাষ্ট্রকে। বিচারক বলেছিলেন, এই মামলা বিরলের থেকে বিরলতম নয়।