২০১৩–র ২ অগস্ট, শুক্রবার। পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং থানায় মিসিং অভিযোগ দায়ের করল গোর্খাল্যান্ড টাস্ক ফোর্স। স্বয়ং সাংসদই নাকি নিখোঁজ। তাঁর টিকির দেখাও মিলছে না। দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের তৎকালীন সাংসদ ছিলেন সদ্য প্রয়াত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি–র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা যশবন্ত সিং। পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সরব হয়ে আড়াই লক্ষেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে দার্জিলিং থেকে জিতেছিলেন তিনি। কিন্তু কয়েক বছর পার হলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তিনি আর গোর্খাল্যান্ড নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না।২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে জেতার পর পরই দার্জিলিং কেন্দ্রে বিভিন্ন সভায় তৎকালীন সাংসদ যশবন্ত সিং গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আওয়াজ তোলেন। ‘দার্জিলিং জেলার মানুষের সঙ্গে বাঙালিদের কোনও মিল নেই’— এই কথা জানিয়ে তিনি জেলাটিকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করার পক্ষেও প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু কথাতেই শেষ, তার পর এ নিয়ে তাঁর বিশেষ কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার। যাদের সমর্থন ছাড়া বিজেপি–র দার্জিলিং দখল সম্ভব হত না।কিন্তু শেষমেশ সাংসদের নামে থানায় নিখোঁজ অভিযোগ কেন দায়ের করতে হল? সে সময় গোর্খাল্যান্ড টাস্ক ফোর্সের নেতা মনীশ তামাং অভিযোগ করে জানিয়েছিলেন, ২০১৩–র জুলাইয়ের শেষদিকে তাঁরা পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে সাংসদ যশবন্ত সিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে দিল্লিতে যান। কিন্তু সেখানে তাঁদের বলা হয় যে তিনি দিল্লিতে নয় দার্জিলিংয়ে রয়েছেন। তাঁরা ফিরে আসেন। কিন্তু দার্জিলিংয়েও সাংসদের খোঁজ না পেয়ে রীতিমতো হতাশ হয়ে পড়েন তাঁরা। তার পরই বাধ্য হয়ে তাঁরা সাংসদের নামে কালিম্পং থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। মনীশ তামাংয়ের আক্ষেপ, ‘গোর্খাল্যান্ডের হয়ে যখন বলার কথা ঠিক তখনই নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন সাংসদ যশবন্ত সিং।’দীর্ঘদিন দেশের অর্থ, বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মতো গুরুদায়িত্ব সফলভাবে সামলিয়েছেন অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের প্রথম সারির মন্ত্রী যশবন্ত সিং। কিন্তু দার্জিলিং থেকে বিজেপি–র বাংলা জয়ের চাবিকাঠি তাঁর হাতে থাকলেও তেমন কিছু সুবিধা করে উঠতে পারেননি তিনি, এমনই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। রাজস্থান থেকে নিজের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করা যশবন্ত সিং দার্জিলিংয়ের সাংসদ হলেও সে সময় খুব একটা পাহাড়ে আসতেন না। শেষে খোঁজ না পেয়ে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি হল সাংসদের নামে!