কলকাতা লাগোয়া দমদমের নাগেরবাজারে অভিজাত পরিবারের প্রবীণ সদস্যের পচন ধরা দেহ উদ্ধারের ঘটনার কিনারা করল পুলিশ। কল্যাণ ভট্টাচার্য নামে ওই বৃদ্ধকে খুনের ঘটনায় তাঁরই গাড়ির চালক সৌরভ মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জানিয়েছে, কল্যাণবাবুর বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে দিঘায় ফূর্তি করতে যেতে চেয়েছিল সৌরভ। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাঁকে খুন করে গাড়ি নিয়ে চলে যায় অভিযুক্ত।গত ২১ সেপ্টেম্বর নাগেরবাজারের একটি বাগানবাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ৭২ বছর বয়সী বৃদ্ধ কল্যাণ ভট্টাচার্যের পচন ধরা দেহ। ওই বাড়িতে একাই থাকতেন তিনি। আত্মীয়রা তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে না পারায় সেখানে এসে দেখেন দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। ঘরের ভিতর থেকে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। এর পর নাগেরবাজার থানায় খবর দেন তাঁরা পুলিশ এসে ঘর থেকে কল্যাণবাবুর পচন ধরা দেহ উদ্ধার করে। পাশের ঘর থেকে উদ্ধার হয় পোষা কুকুরটি। কিন্তু কল্যাণবাবুর গাড়ির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।গাড়ির সূত্র ধরে তদন্তে নেমে আধিকারিকরা জানতে পারেন সৌরভ মণ্ডল নামে এক যুবক কল্যাণবাবুর গাড়ি চালাতেন। স্থানীয়রা জানান ঘটনার কয়েকদিন আগে তাঁকে একা গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে দেখেছিলেন তিনি। এর পর দুয়ে দুয়ে চার করতে দেরি হয়নি পুলিশের।গাড়ি কোথায় গেল জানতে রাজ্যের সমস্ত টোল প্লাজার সিসিটিভি ফুটেজ ও ফাস্টট্যাগের তথ্য হাতড়ানো শুরু করে পুলিশ। তদন্তকারীরা নিশ্চিত হন কল্যাণবাবুর গাড়ি রয়েছে দিঘায়। এর পর অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত সৌরভ ও গাড়িটিকে উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা।পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় তেমন মেলামেশা করতেন না কল্যাণবাবু। শনিবার শেষ তাঁকে দেখেছিলেন স্থানীয়রা। রবিবার রাত ৮টা নাগাদ নিজেকে কল্যাণবাবুর গাড়ির চালক বলে পরিচয় দিয়ে এক যুবক স্থানীয় দোকানদারদের বলেন, কল্যাণবাবু অসুস্থ। আমাকে ফোন করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডেকেছেন। কিন্তু দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। ঢুকব কী করে? এর পর দরজার পাশের পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢোকে অভিযুক্ত।পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় ধৃত স্বীকার করেছে। বন্ধুদের নিয়ে ফূর্তি করতে দিঘা যেতে কল্যাণবাবুরকাছে তাঁর বিলাসবহুল গাড়িটি চেয়েছিল সে। কিন্তু গাড়ি দিতে অস্বীকার করেন বৃদ্ধ। তখন একাকী বৃদ্ধকে খুন করে সৌরভ। এর পর পোষা কুকুরটিকে পাশের একটি ঘরে বন্ধ করে গাড়ি নিয়ে চম্পট দেয় সে। বাড়ি বাইরে থেকে তালা আটকে।স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোমবার সকালে তাঁরা দেখেন বাড়ির সদর দরজা খোলা। যা সচরাচর দেখা যায় না। তখনই সন্দেহ হয় তাঁদের। ভিতরে গিয়ে বাগানের নরম মাটিতে গাড়ির চাকার দাগ দেখতে পান তাঁরা। তবে কল্যাণবাবুর গাড়িটি তাঁরা দেখতে পাননি।