নারকীয় কাণ্ড ঘটে গেল ক্যানিংয়ে।নির্যাতনের শিকার হলেন বিধবা মহিলা। অভিযোগ, পরকীয়া সন্দেহে বেধড়ক মারধর করা হল তাঁকে। এমনকী, জোর করে বিধবা মহিলাকে যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ হয়নি। ওই মহিলার ভাসুর ও প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়ার পর নির্যাতিতার চুল কেটে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠল।বৃহস্পতিবার এই ঘটনাটি ঘটেছে ক্যানিং থানা এলাকার নিকারীঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাবু গ্রামে। ওই গ্রামের বাসিন্দা নির্যাতিতা মহিলার আত্মীয় প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। নির্যাতিতা ক্যানিং থানায় গিয়ে পুরো ঘটনা জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন বছর আগে নির্যাতিতা মহিলার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। ওই বিধবা মহিলা তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে কোনওক্রমে দিন কাটাচ্ছিলেন। ওই মহিলার অভিযোগ, তার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই ভাসুর পরিতোষ সরকার ও প্রতিবেশী কয়েকজন যুবক নিয়মিত তাঁকে কুপ্রস্তাব দিচ্ছিলেন। অবশ্য তাতে রাজি হননি তিনি। এই ঘটনার জেরে তাঁকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতির মধ্যে এক দেওর তাঁদের আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। এরপরই ঘটে যায় বিপত্তি। নির্যাতিতা ওই মহিলা জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়িতে কোনও ফোন না থাকায়, এইদিন মেয়ের খবর নিতে ক্ষুদিরামকে ফোন করেন নির্যাতিতার মা। সেই কারণে ওই যুবক তাঁর ফোনটি নিয়ে ওই ওই মহিলার বাড়িতে আসেন। সেই সময় স্থানীয় ১০-১২ জন ব্যক্তি নির্যাতিতার বাড়িতে চড়াও হয়। নির্যাতিতার অভিযোগ, অভিযুক্তরা প্রথমে তাঁকে বেধড়ক মারধর করে। এরপর তারা অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এলাকায় রটিয়ে দেওয়া হয় যে, ওই যুবকের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে নির্যাতিতার। ওই যুবককেও ধরে বেধড়ক পেটানো হয়। নির্যাতিতা তাঁর ভাসুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, ওই ব্যক্তি মারধর করে প্রথমে তাঁদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। তারপর জোর করে দু’জনের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। নির্যাতন এখানেই থামেনি। প্রকাশ্য রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয়। তাছাড়া ব্লেড দিয়ে ওই মহিলার চুল কেটে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকী, সমস্ত ঘটনা ভিডিও রেকর্ডিং করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।এদিন বিধবা মহিলা ও তাঁর দেওর প্রাণ ভয়ে কোনও রকমে পালিয়ে ক্যানিং স্টেশনে পৌঁছান। স্টেশনেই রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করান। তারপর ওখান থেকে সোজা থানায় চলে যান। সেখানে পৌছে ভাসুর-সহ মোট সাত জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই মহিলা। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাওয়ার পাশাপাশি যাতে তিনি নিরাপদে বাড়িতে থাকতে পারেন, সেই আবেদনও জানিয়েছেন নির্যাতিতা। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ক্যানিং থানার পুলিশ।