পদ্ম এখন কাঁটা। দুর্গাপুজোর সময় বিজেপিতে দেখা গেল বিভাজনের কাঁটা। দিলীপ ঘোষ–সৌমিত্র খাঁয়ের বিবাদে অষ্টমীর আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়। তাছাড়া বিজেপির দুর্গাপুজোতেও দেখা গেল, অনেক হেভিওয়েট নেতাই গরহাজির। মুকুল রায়–কৈলাস বিজয়বর্গীয়রা সক্রিয় হলেও অনেকের মুখ দেখা গেল না পুজোতে। যে পুজো উদ্বোধন করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই পুজোরই এই হাল। যেখানে বলা হয়েছিল বিভাজন নয়, সবাইকে নিয়েই চলতে হবে সেখানে বিভাজনই প্রকট হল।এখন রাত পোহালেই বিদায়ের সুর বেজে যাবে অর্থাৎ বিজয়া দশমী। কিন্তু বিজেপি নেতাদের দেখা গেল না গেরুয়া শিবিরের পুজোতে। প্রথম থেকেই এই দুর্গাপুজোকে ঘিরে বিজেপির অন্দরে ফাটল তৈরি হচ্ছিল। এক পক্ষ বলছিল, পুজো হবে না। অন্য পক্ষ বলছিল পুজো হচ্ছেই। এখানে একপক্ষ হলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, অন্য পক্ষ হলেন মুকুল রায়। একজন পুজোর বিপক্ষে, অন্যজন পুজোর পক্ষে। তা নিয়ে দ্বন্দ্বের মধ্যেই শুরু বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব।উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভার্চুয়াল ভাষণ দিয়ে উদ্বোধন হয় বিজেপির পুজোর। কিন্তু সেই ভার্চুয়াল সমাবেশে অনুপস্থিত ছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। আমন্ত্রণ জানানো সত্ত্বেও তাঁরা আসেননি। উল্টে দেখা গিয়েছিল শোভন–বৈশাখীকে দিদির পাঠানো উপহার গ্রহণ করতে। এখানে মোদী বনাম দিদি বিভাজন তাঁরাই করেছেন। যে কাঁটা এখন বিজেপি’র গলায় আটকে আছে।অন্যদিকে বিজেপ’র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহাও গরহাজির ছিলেন বিজেপি’র পুজো উদ্বোধনে। মোদীর অনুষ্ঠান এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। এখানেও রাহুলকে ডেকে কেউ মানভঞ্জন করতেও উদ্যোগী হননি। সুতরাং রাহুলের সঙ্গে এখন দলের এবং দলের পুজোর বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।এই বিভাজনের মধ্যে রয়েছেন পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ তথাগত রায়। তিনি রাজ্যপালের পদ ছেড়ে বিজেপিতে সক্রিয় হওয়ার বার্তা দিয়ে বাংলায় ফিরেছেন। প্রাক্তন এই রাজ্য সভাপতি অনাহুত হয়েই রয়ে গিয়েছেন। তাঁকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সুতরাং যে অনৈক্যের ছবি স্পষ্ট হয়েছিল, তা নবমী পর্যন্ত অটুট রয়েছে। তার মধ্যেই ভরা দুর্গাপুজোর মরশুমে সৌমিত্রের কমিটি বাতিল করে কার্যত মুকুলকে বার্তা দিয়েছেন দিলীপ। মুকুল ঘনিষ্ঠ নেতার বিরুদ্ধে তিনি নালিশ ঠুকতেও পিছপা হননি। সৌমিত্র সমান্তরাল সংগঠন চালানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন। মুকুলও পালটা বার্তা দিতে দিলীপকে দুর্গাপুজোয় আমন্ত্রণ জানায়নি। ফলে রাজ্যে পদ্ম ফোটার আগেই কাঁটা গজিয়ে উঠেছে বলে অভিমত রাজনৈতিক মহলের।