আর্তনাদ, হাহাকার আর চোখের জলের সাক্ষী হয়ে রয়েছে গার্ডেনরিচ। কারণ এখানেই বহুতল ভেঙে পড়ার জেরে মৃত্যুমিছিল꧒ তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে একটা কালো ব্যাগই যেন সম্বল করে এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার বিভাগের সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাইরুল শেখ। এই ব্যাগ নিয়েই সাইরুলের সঙ্গে গ্রামের 🅺বাড়িতে ফেরার কথা ছিল ভাগ্নে নাসিমুদ্দিনের। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সেটা হল না। রোজগারের তাগিদে দৈনিক ৭০০ টাকা মজুরিতে বহুতল নির্মাণের কাজে কলকাতায় এসেছিলেন নাসিমুদ্দিন। রবিবার বেশি রাতে ওই বহুতলের নীচেই চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে নাসিমুদ্দিনের (২৪)।
সোমবার উঁচু বাড়ির ভিড়ে মর্মান্তিক মৃত্যুর সাক্ষী থেকেছে মহানগরী। আর এক পাশে টালির ঝুপড়ি। মাঝে ভেঙে পড়েছে আস্ত একটা ছাদ–সিঁড়ি। ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে ইট–কাঠ–সিমেন্ট–বালি। ধ্বংসস্তূপের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসছে মৃতদেহবাহী স্ট্রেচারগুলি। সেখানেই কলকাতা পুরসভার অ্যাম্বুল্যান্সে ছেলের মৃতদেহ দেখে নাসিমুদ্দিনের বাবা আঞ্জিল শেখ বলেন, ‘সব শেষ হয়ে গেল।’ মুর্শিদাবাদের কোলান রাধাকান্তপুরের বাসিন্দা নাসিমুদ্দিন এসেছিলেন গার্ডেনরিচের ওই বহুতলে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে। সঙ্গে ছিলেন তাঁর শ্যালকও। তিনি হুগলির বাসিন্দা। শেখ আবদুল্লার (১৮) দেহ মিলল ধ্বংস꧟স্তূপের নীচে। এই ছবিই ধরা পড়ল দিনভর।
আরও পড়ুন: বিজেপিতে যোগ দিলেন সুফি সাধক, সংখ্যালঘু ভোট টানতেই উদ্যোগী অমিত🌺 শাহ
এদিকে সারাদিন এভাবেই বাড়ছিল মৃত্যুর সংখ্যা। অবশেষে বিপর্যয়ের বলি গিয়ে দাঁড়াল ৯ জনে। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, সংখ্যাটা ১০। আরও বাড়বে। বেশ কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক আছেন এই মৃত্যুমিছিলে। গার্ডেনরিচে বেআইনিভাবে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ায় ট্র🐈্যাজেডি দেখল শহর কলকাতা। গ্রেফতার করা হয়েছে প্রোমোটারকে। ঘটনাস্থলে যান 🐻মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘোষণা করা হয়েছে মৃতদের পরিবারের জন্য আর্থিক সাহায্য। শামা বেগম (৪৫), হাসিনা খাতুনদের (৫৫) মৃতদেহ এসএসকেএম হাসপাতালের পুলিশ মর্গে নিয়ে আসে কলকাতা পুলিশ। আকবর আলি (৩৪), রিজওয়ান আলম (২৩), মহম্মদ ওয়াসিক (১৯), মহম্মদ ইমরান (২৭), রমজান আলির (৬০) দেহও আসে। সবাইকে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। চারিদিকে তখন শুধুই স্বজন হারানোর কান্নার রোল।
অন্যদিকে রবিবার রাতে ওই বহুতলের দোতলায় ঘুমোচ্ছিলেন নাসিমুদ্দিনরা। মাঝরাতে দুর্ঘটনার খবর পান আঞ্জিল। তার পরেই তিনি আসেন গার্ডেনরিচে। সকালে গার্ডেন꧟রিচ পৌঁছন আকবর আলির শ্যালক শেখ নাসিরুদ্দিন। চোখের জল ফেলে বলেন, ‘শারিকা বেগম হাসপাতালে ভর্তি। ওকে কী করে জানাব, জামাইবাবু আর নেই!’ নির্মীয়মাণ এই বহুতলে থাকা নির্মাণ শ্রমিকরা বেরিয়ে আসতে পারেননি। জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা গিয়েছে তিন শিশু–সহ ১২ জনকে। সব মিলিয়ে আহতের সংখ্যা ১৭ ছাড়িয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১২ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আরও পড়ুন: মার্কিন মুলুকে বন্দু𓃲কবাজের গুলিতে খুন বাংলার পুরুষ নৃত্যশিল্পী, দেহ এল বীরভಌূমে
এছাড়া এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আকাশ পাত্র জানান, রাতে বিকট শব্দে ঘুম ভে🎐ঙে যায়। তারপর তিনি দেখেন, ইটের দেওয়াল–টালির ছাউনির একাংশ ভেঙে পড়েছে। নীচে চাপা পড়েছেন মা নমিতা পাত্র। তড়িঘড়ি উদ্ধার করে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এসএসকেএম হাসপাতালে আনা হয় মইনুল হক,মহম্মদ সাইলুদ্দিন গাজিদের। এঁদের একজনের মেরুদণ্ড ভেঙেছে। আর একজনের পা ভেঙেছে। আবার একজনের কোমর ভেঙেছে। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, অনুমোদন ছাড়াই বহুতলটি নির্মাণ হচ্ছিল। চার ফুট রাস্তার উপর পাঁচতলা বাড়ির ছাড়পত্র মেলে না। ওই বহুতলের প্রোমোটারকে গ্রেফতার করেছে গার্ডেনরিচ থানার পুলিশ। ধৃতের নাম মহম্মদ ওয়াসিম। তাঁর বিরুদ্ধে খুন, খুনের চেষ্টা, নির্মাণ কাজে গাফিলতি–সহ নানা ধারায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত করছে লালবাজারের হোমিসাইড শাখা।