প্রসূতিমৃত্যুর জেরে গাফিলতির অভিযোগে হাসপাতালে পুলিশের সামনেই চিকিত্সককে মারধর করলেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা। ঘটনার দৃশ্য ধরা পড়ল সিসি ক্যামেরায়।বৃহস্পতিবার সকালে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে প্রসূতির মৃত্যু ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দক্ষিণ কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতাল। ঘটনা ঘিরে হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে মৃতার পরিবারের লোকজনের হাতাহাতি বাধলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামে বিশাল পুলিশবাহিনী।নিহত যুবতী পিঙ্কি ভট্টাচার্যের (৩০) পরিবারের অভিযোগ, মঙ্গলবার তাঁকে ওই হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। বুধবার অস্ত্রোপচারের সাহায্যে তিনি এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।পিঙ্কির স্বামী তপন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘রকাতে আমাদের জানানো হয়, মা ও শিশু দুজনেই ভালো আছে। সকালে আচমকা আমাদের বলা হয় যে, পিঙ্কি মারা গিয়েছে। চিকিত্সক ও নার্সের অভাবেই ওর মৃত্যু হয়েছে। আমাদের ক্ষতিপূরণ চাই না। জাতীয় মেডিক্যাল কাউন্সিল-এ ামরা অভিযোগ জানাব।’হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে এক শীর্ষস্থানীয় চিকিত্সক বলেন, ‘রোগীর শারীরিক পরিস্থিতির বিবরণ আমরা তাঁর পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলাম। কিন্তু ওঁরা অনেক দেরিতে এসে পৌঁছন। এই নিয়ে কথাবার্তার মাঝেই আচমকা মৃতার পরিবারের লোকজন এক চিকিত্সকের উপরে চড়াও হন।’এই বিষয়ে কলকাতা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) মীরাজ খালিদ বলেন, ‘আমরা কোনও অভিযোগ পাইনি। কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।’সিসিডিভি ফুটেজে এক চিকিত্সককে তপন ভট্টাচার্যের মারধর করার দৃশ্য দেখা গিয়েছে।প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের জুন মাসে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তারকে নিহত রোগীর পরিবারের সদস্যরা বেধড়ক মারধর করলে নিরাপত্তার দাবিতে দেশজুড়ে ধর্মঘটে নামেন চিকিত্সক-সহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। অচলাবস্থা দূর করতে শেষ পর্যন্ত আসরে নামতে হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠিকে।বৃহস্পতিবারের চিকিত্সক নিগ্রহের ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছেন একাধিক চিকিত্সক। ঘটনার সমালোচনা করেছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনও। সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘ঘটনাটি নিন্দনীয়। চিকিত্সকদের উপর এমন আক্রমণ রুখতে কেন্দ্রীয় সরকারকে আইন পাশ করাতে হবে।’অন্য দিকে, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি নির্মল মাজি জানিয়েছেন, ‘এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এমন চলতে পারে না। হাসপাতালের ত্রুটি ছিল কি না, তা প্রমাণ হবে। কিন্তু চিকিত্সায় গাফিলতির অভিযোগে কোনও চিকিত্সকরে তার দায়ে নিগ্রহ করার অধিকার কারও নেই।’