করোনা সংক্রমণের মাত্রা লাফিয়ে বাড়ার পাশাপাশি বর্ষার আগমনে প্রতি বছরের মতো মরশুমি ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপও শুরু হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গে। রাজ্যে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ১০,০০০ পেরিয়ে গিয়েছে শুক্রবার। এর মধ্যে শুধু কলকাতাতেই আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩,৩৫৬। আবার এর আগে জানুয়ারি মাসেই বাংলায় ৫৫০ জন ডেঙ্গিরোগীর সন্ধান পাওয়া যায়, যার মধ্যে ৯০ জন কলকাতাবাসী।নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘এ বছর পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। দ্রিত হারে বেড়ে চলা করোনা সংক্রমণের মোকাবিলা করতে ব্যস্ত অধিকাংশ হাসপাতাল কর্মী ও স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা। এবার আমাদের তার পাশাপাশি ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া নিয়েও সক্রিয় হতে হবে।’এই জটিল পরিস্থিতি সম্পর্কে ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্যকর্তাদের সতর্ক করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ করে উত্তর ২৪ পরগণা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা ও হাওড়ার পরে জেলায় করোনা সংক্রমণের হারও রাজ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ।প্রতি বছর বর্ষায় মশাবাহিত ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গির জেরে কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গে স্বাস্থ্য সংকট দেখা দেয়। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ডেঙ্গিতে যথাক্রমে ২৩,০০০ ও ৪৭,০০০ জন কাবু হন। গত পাঁচ বছরে এই রোগে মারা গিয়েছেন ১৮০ জনেরও বেশি। ম্যালেরিয়ায় গত তিন বছরে ভুগেছেন ৭৫,০০০ জন এবং গত ৫ বছরে এই রোগে মারা গিয়েছেন ১৩০ জনের বেশি। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অমিতাভ নন্দীর মতে, ‘কোভিড, ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার সঙ্গে টাইফয়েড ও ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগের উপসর্গে বেশ কিছু মিল রয়েছে, যেমন গলা জ্বালা ও জ্বর। কারও উপসর্গ দেখা দিলে প্রথমেই ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা করা দরকার। পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হলে রোগীর Covid-19 পরীক্ষা করা জরুরি। তার রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরে আরও এক সপ্তাহ জ্বর থাকলে টাইফয়েড পরীক্ষা করা প্রয়োজন।’ পরিস্থিতি সম্পর্কে অধিবাসীদের সচেতন করতে ইতিমধ্যে বরো পর্যায়ে বেশ কিছু বৈঠক সেরে ফেলেছে কলকাতা পুরসভা। পাশাপাশি মাইক নিয়ে চলেছে প্রচার অভিযান। পুরসভার ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগের প্রধান দেবাশিস বিশ্বাস জানাচ্ছেন, ‘অন্য বছরের মতো এবার আমরা কোনও বাড়িতে ঢুকে মশা জন্মানোর জায়গা পরীক্ষাও করতে পারব না। এই কারণে এবার বাসিন্দাদের নিজেদের বাড়ি দেখতে বলা হয়েছে আর আমরা দেখব রাস্তাঘাট। আমাদের ১৪৪টি ম্যালেরিয়া ও ১৫টি ডেঙ্গি ক্লিনিক রয়েছে।’এ হেন জটিল অবস্থায় গোদের উপরে বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে পুরকর্মীদের অনুপস্থিতি। লকডাউন এবং ঘূর্ণিঝড় আমফানের কারণে কর্মীদের একাংশ তাঁদের গ্রামের বাড়ি থেকে এখনও শহরে এসে পৌঁছতে পারেননি। এ ছাড়া আমফানের তাণ্ডবে শহরে প্রায় ১৫ হাজার গাছ পড়ে আবর্জনা ও জমা জলের পরিমাণ রাতারাতি বাড়িয়ে তুলেছে, যা এখনও পুরোপুরি সাফ করা সম্ভব হয়নি। তার মধ্যে বাংলায় বর্ষা ঢুকে পড়ায় এবার মশার উপদ্রব বাড়বে বলে আশহ্কা পুর আধিকারিকদের।