যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সঠিক কিটের অভাবে পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ চিকিৎসক প্রাইভেট প্র্যাক্টিস বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন, যার ফলে বিপাকে পড়তে হচ্ছে রোগীদের। কলকাতা থেকে শুরু করে উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের প্রান্তিক এলাকায় পুরনো অসুখে ভোগা রোগীরা চিকিৎসকের অভাবে বিপদে পড়েছেন। বীরভূমের সিউড়ির বাসিন্দা বর্ষীয়ান সংগীতশিল্পী স্বপ্না চক্রবর্তী যেমন জানিয়েছেন, ‘আমাদের মতো শহরে লোকে আটপৌরে ডাক্তারের চেম্বারে যেতেই অভ্যস্ত। কিন্তু লকডাউনে সেগুলির বেশিরভাগই বন্ধ রয়েছে বলে অসুবিধা হচ্ছে। সৌভাগ্যক্রমে মাত্র কয়েক জন চিকিৎসক বাড়ি এসে রোগী দেখছেন।’বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিকিৎসকদের সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে বেসরকারি ক্লিনিক ও চেম্বার চালু করার জন্য আবেদন জানান। কিন্তু চিকিৎসকদের দাবি, তার জেরে চিকিৎসক-সহ বহু মানুষ করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় পড়বেন। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম-এর সম্পাদক কৌশিক চাকি জানিয়েছেন, সঙ্গত কারণেই ফোন ও ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে রোগী দেখার জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ দিয়েছে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া। ছোটখাটো ক্লিনিক ও ডাক্তারের চেন্বার চালু করার অন্যতম বাধা হল সামাজিক দূরত্ব বিধি মানা, রোগীদের স্ক্রিনিং ও তাঁদের সফর ইতিহাস নথিভুক্ত করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও পরিকাঠামোর অভাব। রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা নির্দেশিকায় হাসপাতালে রোগী দেখা চিকিৎসকদের পিপিই, এন৫ মাস্ক ইত্যাদি আবশ্যিক করা হয়েছে। কৌশিকবাবুর দাবি, গত ২৮ এপ্রিল মুখ্যংমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বিষয়গুলি আলোচিত হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, চেম্বার খোলা রাখলে অতিমারির প্রকোপ বাড়ার সম্ভাবনা যে বাড়বে না, সে প্রতিশ্রুতি কে দেবে? তা ছাড়া, নিরাপত্তার কারণে সরকারি বিধি বলবৎ করার বিপুল খরচ কে দেবে? একই প্রশ্নের জবাব না পেয়ে বেসরকারি ক্লিনিক ও চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ রাখতে বাধ্যে হয়েছেন বাংলার অধিকাংশ চিকিৎসক।শুধু ছোটখাটো ক্নিনিক ও চেম্বারই নয়, সমস্যায় পড়েছে বড় হসপিটাল চেনগুলিও। এএমআরআই হাসপাতালের তরফে তাঁদের মুখপাত্র জানিয়েছেন, রোটেশন পদ্ধতিতে ওপিডি বিভাগে রোগী দেখছেন তাঁদের ৪০% চিকিৎসক। রোগীদের ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। যাঁরা হাসপাতালে আসছেন, তাঁদেরও সামাজিক দূরতচ্ব বজায় রাখতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসানো হচ্ছে।শহর কলকাতায় তবু রোগীদের জন্য কিছু বিকল্প ব্যবস্থার সুবিধা রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ছোট শহরগুলিতে রোগীদের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার আশু সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।