বৃদ্ধা শোভারানি মজুমদারের মৃত্যুকে নিয়ে ভোট রাজনীতি করছে বিজেপি বলে অভিযোগ তুলল তৃণমূল কংগ্রেস। এমনকী বৃদ্ধার মৃত্যুর শংসাপত্রে যে কারণ বর্ণনা করা হয়েছে, তারও কোনও ভিত্তি নেই বলে সাংবাদিক বৈঠক করে জানালেন তৃণমূল কংগ্রেসের দুই চিকিৎসক রাজনীতিবিদ কাকলি ঘোষদস্তিদার এবং শশী পাঁজা। আবার বৃদ্ধার মৃত্যুর শংসাপত্রে বিজেপি প্রার্থীর স্বাক্ষরকে কেন্দ্র করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। যা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও অন্যায়ের কিছু দেখছেন না বিজেপি প্রার্থী। তাঁর দাবি, এলাকার চিকিৎসকদের ভয় দেখিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার।বিতর্ক শুরু হয় বৃদ্ধার মৃত্যু শংসাপত্র নিয়ে। কারণ সেটি লিখেছেন বিজেপির উত্তর দমদমের প্রার্থী, পেশায় চিকিৎসক অর্চনা মজুমদার। এখন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রশ্ন, বিষয়টি যেখানে তদন্ত–সাপেক্ষ সেখানে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কী করে মৃত্যু শংসাপত্র লিখলেন অর্চনা? সোমবার ভোরে উত্তর দমদমের পাটনা ঠাকুরতলায় নিজের বাড়িতেই মারা যান শোভা মজুমদার। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তাঁর উপর আক্রমণ হয় বলে অভিযোগ। বিজেপির অভিযোগ ছিল, তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ছুটে যান বৃদ্ধার বাড়িতে। চিকিৎসার জন্য বৃদ্ধাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। এরপর চারদিন আগে বৃদ্ধাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাড়িতেই ছিলেন তিনি। সোমবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।ঠিক তারপরেই বৃদ্ধার মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর বাড়িতে যান দমদম উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ডাঃ অর্চনা মজুমদার। তাঁর গলায় ছিল পদ্মের প্রতীক চিহ্ন দেওয়া উত্তরীয়। তিনি ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করেন। যে লেটারহেডে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, সেটি সামনে আসতেই তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। দেখা গিয়েছে, লেটারহেডের শেষ অংশে সই করেছেন বিজেপি প্রার্থী। সেখানেই লেখা রয়েছে, ‘রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৪৪৬৮৮।’ তার নীচে লেখা, ‘প্রার্থী দমদম উত্তর বিধানসভা, ভারতীয় জনতা পার্টি।’ ডেথ সার্টিফিকেটে শোভারানির মৃত্যুর কারণ হিসাবে লেখা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কথা। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদরা জানতে চেয়েছেন, ময়নাতদন্ত না করে শুধু মৃতদেহ দেখে কী ভাবে এমন মন্তব্য করলেন অর্চনা।নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, এমন একজন প্রার্থী ডেথ সার্টিফিকেটে সই করতেই পারেন। কিন্তু তাঁর বিজেপি প্রার্থী হিসেবে পরিচয় শংসাপত্রে উল্লেখ করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিজেপির নাম উল্লেখ করে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া যায় না বলে চিকিৎসকদের মত। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক ডাঃ শান্তনু সেন বলেন, ‘বাংলার মাটিতে সার্বিকভাবে প্রত্যাখ্যাত বিজেপি এতদিন মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করত। এখন বিজেপি প্রার্থী ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করে নিজের নির্বাচনী প্রচার করছেন। এইরকম বিরল নিদর্শন ভারতে কোথাও হয়েছে বলে জানা নেই। ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় কাজ করেছেন। অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হবে।’এই বিষয়ে কাকলি বলেন, ‘এই বিষয়ে সমর্থন আসছে একেবারে সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মন্ত্রী হিসেবে তিনি জানেন, কোনও মামলার তদন্ত চললে তা নিয়ে মন্তব্য করা যায় না। তারপরও কী ভাবে তারই দলের প্রার্থী এমন মন্তব্য করল তা ভেবে আমরা তাজ্জব।’ পেশায় চিকিৎসক শশী পাঁজা বলেন, ‘যে কোনও মৃত্যু দুঃথজনক। কিন্তু বিস্ময়কর হল, সার্টিফিকেটে অর্চনা মজুমদার ওই বৃদ্ধাকে সুস্থ বলে মন্তব্য করেছেন। আবার অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কথাও বলেছেন। একজন সুস্থ মানুষের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয় কী করে?’