আরজি কর কাণ্ড নিয়ে উত্তা🍷ল গোটা রাজ্য রাজনীতি। সমাজের একাংশ পুলিশ প্রশাসনের অবস্থান এবং কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। পথে নেমেছে সাধারণ মানুষ তারকারা। উঠছে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিও। সকলেরই এখন যেন একটাই চাওয়া, নির্যাতিত🅘াকে দ্রুত বিচার দিতে হবে, সঠিক দোষীদের চিহ্নিত করে কঠিনতম শাস্তি দিতে হবে। এই বিষয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে কী জানালেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়? 'খুব দরকার ছাড়া মেয়েদের নাইট শিফট দেওয়া যাবে না' ঘোষণা থেকে এই ঘটনায় আরজি করের প্রিন্সিপালের ভূমিকা, সমস্ত বিষয় নিয়ে কী মন্তব্য তাঁর?
আরও পড়ুন: প্রতিবাদ মিছিলে নিয়মের বহর! ট্রোল্ড হয়েও 💧সিদ্ধান্তে অনড় ইমন, বললেন, 'তুমি রবে নীরবে গাইবই'
আরজি কর কাণ্ডে প্রাথমিক বক্তব্য
প্রথম কথা হল, আমরা এমন একটা সমাজে বাস করছি যেখানে আদি যুগে যা ছিল, আধুনিক এবং উত্তর আধুনিক যুগে একই ভাবে মেয়েদের ভোগ্যপণ্য ভাবেই যেন দেখছে সমাজ। মেয়ে বলতে আজও যেন ভাবা হয় তার শরীরটাই তার সবথেকে বড় সম্পদ। তাই যদি তাকে শাস্তি দিতে হয় তাহলে সবার আগে তার মর্যাদাতে হাত দিয়ে দেওয়া উচিত বলেই মনে করেন অনেকেই। কিন্তু নির্ভয়ার সময় থেকে আমরা যেটা দেখছি সেটা হ𒁏ল ভয়াবহতা। মানে এই তো নয় যে ধর্ষণ প্রথম হল। যবে থেকে মেয়েদের সম্পত্তি বলে ভাবা শুরু করেছে পুরুষ তবে থেকেই তাদের হ্যাঁ তে হ্যাঁ ‘না’ মেলালেই মাশুল হিসেবে মর্যাদায় হাত দিয়ে, শ্লীলতাহানি করে, সম্মানহানি করে, ধর্ষণ করে শাস্তি দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে তোমার না বলার অধিকার নেই। তোমাকে সারেন্ডার করতেই হবে। এখনও পর্যন্ত যা জানা গিয়েছে যে এই ক্ষেত্রেও মেয়েটি যখন চিৎকার করেছে তখন তার শ্বাসরোধ করে বাকি সমস্ত বর্বরতা যা যা করা হয়েছে সেগুলো করেছে নির্যাতকরা। এই যে ভয়াবহতা, এটা কেন দিন দিন বাড়ছে? কোন সাইকোলজি, সোশ্যাল ফ্যাক্টর কাজ করছে? আমরা সবাই কেবল একটা রাজনৈতিক ব্যবস্থার দিকে আঙুল তুলছি। কিন্তু শুধুই কি সেটা? আমরা কি বাড়িতে সঠিক শিক্ষা দিচ্ছি আমাদের সন্তানকে? এত কেন তাহলে আমরা হিংস্র হয়ে উঠছি? অমানবিক হয়ে উঠছি? এতে কোথাও গিয়ে আমাদেরই আমাদের সন্তানদের মানুষ করার ক্ষেত্রে ফাঁক থেকে যাচ্ছে যেটা এতটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। জেনে রাখুন এই মৃত্যু দিয়ে কিন্তু মৃত্যু মিছিল থামবে না। কারণ, যে মেয়েটা চৌকাঠ ডিঙিয়ে রাজপথে এসেছে সে কখনই ভাবেনি যে একটা ছিটকিনির অভাবে তার প্রাণ চলে যেতে পারে, তাও আবার এমন একজন মেয়ের যে নিজে চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। আমাদের চিকিৎসার দায়িত্ব যাদের হাতে তাদের মধ্যেই এরম ভয়াবহ হিংস্রতা, নিষ্ঠুরতা এসে গিয়েছে বা যাচ্ছে। এই জায়গাটা আমার মনে হয় ভেবে দেখা দরকার।
আমরা ছোট থেকেই বলে আসি ছেলেরা কাঁদে না। মেয়েরা নমনীয় হয়। ছেলেদের উদ্ধত রূপটাই মানায়। কিন্তু যেটা ভালো, যেটা শুভ সেটা তো সবার জন্যই। আর সেটা কেন ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে বাবা মায়েরা সন্তানদের মধ্যে জাগাতে পারছে না? ধর্ষণ একটা সামাজিক অসুখ। এটা কোনও রাজনৈতিক খুন নয়। ফলে যাঁরা এটা নিয়♔ে রাজনীতি করছেন তাঁদের এই ফারাকটা বুঝতে হবে। এই সমস্যাটা তখনই সমূলে উপড়ে ফেলা যাবে যখন আমরা রাজনীতির আঙিনা থেকে বেরিয়ে বৃহত্তর সমাজে প্রবেশ করছি। আমরা যেন এখন দায় চাপিয়েই শান্তি পাচ্ছি যে ও, রাজ্য সরকার এটা করেনি তাই এটা ঘটেছে। আসলে তো, এটা একটা প্রাতিষ্ঠানিক ফেলিওর, আর এই সমস্যা আরজি করের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। যাঁরা এই প্রতিষ্ঠান চালানোর সঙ্গে যুক্ত সবার আগে দায় তাঁদের নেওয়া উচিত। তাঁদের দায়বদ্ধতা সরকার বহন করে সরকার রাত্রির সাথী চালু করছে।
সিসিটিভি কেন ছিল না? থাকলেও কেন অচল ছিল? আবার থাকলেও এটা দেখতে হবে এই সিসিটিভি যেন পুরুষ সমাজের কাছে দূরবীন না হয়ে দাঁড়ায়, যে♛ন সেটাকে হাতিয়ার করে তারা মহিলাদের প্রতিটা ব্যক্তিগত মুহূর্তে নজরদারি না চালায়।
রাত দখল, প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে কী মত?
এই যে মিছিলগুলো হয় তাতে পিতৃতন্ত্রের একটা করাল ছায়া আছে যার থেকে সমাজ মুক্ত হতে পারছে না। সেটা যে শুধু পুরুষদের মাধ্যমে চালিত হয় সেটা নয়। আমরা মেয়েরাও কিন্তু পিতৃতন্ত্রের মানসিকতার শৃঙ্খল থেকে বেরোতে পারিনি।ꩲ তাই এই জায়গাটা যতক্ষণ না শুধরানো যাবে ততক্ষণ এটা চলবেই। আমাদের মোমবাতি মিছিল চলবে, we want justice স্লোগান উঠবে, মায়ের কোল খালি হবে। আর সেটার প্রমাণ হল, এই ঘটনার পর কতদিন কেটেছে? আর মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় মহিলারা নির্যাতিত হচ্ছে। আমি মোমবাতি মিছিলে এমন পুরুষকে সামিল হতে দেখেছি যাদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি, সম্মানহানির অভিযোগ আছে। তাহলে কি আমি ধরে নেব তারা এই মিছিলে হেঁটে তাদের ভিতরের দানবকে মেরে ফেলল নাকি প্রতীকী প্রতিবাদে সামিল হয়ে সে তার ভিতরের পশুকে নতুন ভাবে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগিয়ে ঢাকার চেষ্টা করছে? এই আসল প্রশ্নগুলো নিয়ে মনে হয় কথা বলা দরকার। রাস্তা দখল, রাত দখল করা ভালো উদ্যোগ, পদক্ষেপ কিন্তু এগুলো যেন এখানেই থেমে না যায়। ঘর থেকেই যেন বদল শুরু হয়। সন্তানকে সঠিক শিক্ষায় মানুষ করব যাতে ছেলেরা মেয়েদের দেখে একটা রক্ত মাংসের পিন্ড না ভাব🐎ে। এটা যেন বোঝে মেয়েটাকে কষ্ট দিলে তার ঠিক ততটাই কষ্ট হবে যতটা আমার হবে। এই বোধটাই আগে জাগানো উচিত। নইলে এর থেকে নিষ্কৃতি নেই।
প্রিন্সিপালের পদত্যাগ নিয়ে কী মত?
প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত এটা। তবে আমার কথা অন্য, প্রিন্সিপালের নামে একগাদা অভিযোগ উঠছে। কিন্তু সেগুলো সামনে আসার জন্য কেন তিলোত্তমাকে মরতে হল? যদি এত প্রমাণ, এত অভিযোগ থেকে থাকে তাহলে সবাই কেন এতদিন চুপ থাকল? এখন তো মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় খুবই অ্যাক্টিভ থাকে, তাহলে সেখানে কেন আগে সোচ্চার হয়নি কেউ? কেন এমন কোনও প্রমাণ নেই? নিশ্চয় ভদ্রলোকের প্রচুর গাফিলতি, আগের ওঁর কলঙ্কিত ইতিহাসের কথা যদ🅷ি নাই ধরি। এই ক্ষেত্রেও একটি প্রতিষ্ঠানের মাথা হয়েও তিনি নির্যাতিতার বাবা মায়ের সঙ্গে দেখা করার সময় পাননি, বা গোটা ঘটনাকে যেভাবে হ্যান্ডেল করেছেন তার থেকেই তাঁর পাশবিক আচরণ খুব স্পষ্ট। আরজি করের ঘুঘুর বাসা যে বহুদিন ধরেই আছে যে সেটা এখন প্রবল পরাক্রমশালী নেতা কখন বলছেন যখন তিলোত্তমার প্রাণ চলে গেল। তাঁর মেয়েও নাকি এটা স্বীকার করেছে, আগে জানিয়েছে। তাহলে সে এতদিন কেন চুপ ছিল? বাবা হিসেবে এটা সম্ভব? তাহলে সেও সমান অপরাধী। সেই সাংসদ সমান অপরাধী। সমাজ সঞ্জয়দের জন্য খারাপ হচ্ছে না, খারাপ হচ্ছে আমার তোমার নীরবতার জন্য। আমরা নীরবে এই ধরনের অনৈতিক কাজ, দুর্নীতিকে সহ্য করি যাতে আমরা নেক নজরে থাকতে পারি, যাতে আরও কিছু অর্জন করতে পারি সমাজের থেকে, এই অব্যবস্থা থেকে, তাই চুপ থাকি। আর এই চুপ থাকার মাশুল দেয় তিলোত্তমারা। তাই যাঁরা আজ বলছেন আমরা আগে থেকেই জানতাম তাঁরা এই রাষ্ট্র ব্যবস্থার থেকেও আরও বড় দোষী।
আমি প্রতিবাদ করে যে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলাম তাতে কী হয়েছে? আমায় আমার চাকরি বিসর্জন দিতে হয়েছে। কিন্তু আমায় আমার নৈতিকতার সঙ্গে আপোষ 🐭করতে হয়নি। সঠিক সময় মুখ খুললে অনেক খারাপকে সমূলে উৎপাটন 🐼করা সম্ভব।
যদি একজন প্রিন্সিপালকে আরেকটা প্রতিষ্ঠানে বদলি করে দিয়ে যদি🐎 তাঁকꦐে পুরস্কৃত করার প্রয়াসের জন্য আমরা শাসন ব্যবস্থাকে দায়ী করি তাহলে এতদিন সেই অধ্যক্ষর দুর্নীতি সহ্য করার জন্য সমাজকেও দায় নিতে হবে। চিকিৎসক সমাজকে এই দায় নিতে হবে। কেন তাঁরা অধ্যক্ষকে বয়কট করেননি? কেন দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি?
আরও পড়ুন: একে অপরকে সহ্য করতে পারেন না, স্ত্রী ২-র সাফল্য মিলিয়ে দিল কღঙ্গনা-হংসলকে
খুব দরকার ছাড়া নাইট ডিউটি যেন না দেওয়া হয় মহিলাদের, কেন?
অনেক আন্দোলনের পর নারীরা সমান অধিকার অর্জন করেছিল। কিন্তু আজ যেন আমরা আবার সেই পিছিয়ে যাচ্ছি। আমরা মেয়েদের নাইট ডিউটি দিতে ভয় পাচ্ছি, আমরা দিনের বেলাতেও বিপন্ন। তাহলে কি আমরা প্রগতির নামে ধীরে ধীরে পিছিয়ে যাচ্ছি? যতক্ষণ না আমরা মেয়েরা নিজেদের বাড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে ছিটকিনি বন্ধ করছি তাহলে কি ততক্ষণ আমরা হায়না শকুনদের থেকে সুরক্ষিত নই? এই ছিটকিনি লাগাতে লাগাতে, প্রথমে সেমিনার রুম, তারপর রেস্ট রুম, তারপর মনের দরজা জানালায় ছিটকিনি লাগিয়ে দিলাম, বা দিচ্ছি। এরপর তো মুক্ত চিন্তাগুলো প্রবেশের পথ পাবে না। তাহলে আমরা যে এত দরজা জানালা ভাঙলাম সবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথ চলার জন্য সেটার কী হবে? বলা হচ্ছে মেয়েদের খুব দরকার ছাড়া নাইট ডিউটি দেওয়া হবে না। কিন্তু এটার বদলে এটা কেন বলা হচ্ছে না যে মেয়ꦬেদের নাইট ডিউটি দেওয়া হলেও তাদের বাবা মায়েদের চিন্তা করতে হবে না যে আমার মেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে কোথাও তার উপর কেউ ঝাঁপিয়ে পড়বে না। কেন এটা ভাবা হচ্ছে না যে সকালে তার সঙ্গে কারও কুকীর্তি করার ক্ষমতা নেই? সকালে দিনের আলোয় বাসে ট্রামে যে পুরুষরা মেয়েদের সঙ্গে অসভ্য আচরণ করেন তাঁদের কি রাত পর্যন্ত 𓄧অপেক্ষা করতে হয়? হয় না। তাই আগে এই পশুদের মনের ভিতর থেকে অমানবিক জঙ্গল দূর করা দরকার। নইলে মেয়েরা কোথাও সুরক্ষিত নয়।