রবিবার রাতে ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সময়ানুসারে) অনুষ্ঠিত অস্কারের আসরে ইতিহাস তৈরি করেছেন ক্লোয়ি ঝাও। এই চিনা পরিচালক অস্কারের ৯৩ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় মহিলা এবং প্রথম এশিয় মহিলা হিসাবে সেরা পরিচালকের পুরস্কার জিতে নিয়েছেন। এখানে ‘নোম্যাডল্যান্ড’ পরিচালকের সাফল্যে শেষ নয়, এদিন সেরা ছবির পুরস্কারও হাতে উঠেছে ক্লোয়ির। তবে কথায় আছে না ‘গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না’, তেমনটাই ঘটল এই চিনা পরিচালকের সঙ্গে। ক্লোয়ি ঝাও-এর এই ঐতিহাসিক সাফল্য নিয়ে যখন উচ্ছ্বাসে ভাসছে গোটা এশিয়া, তাঁর নাম নিয়ে ধন্য ধন্য করা হচ্ছে মার্কিন,ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে। অথচ এই বিরাট সাফল্যের খবরটা পর্যন্ত জানে না চিনাবাসী। হ্যাঁ, চিনের সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশ করা হয়নি। একথা কারুরই অজানা নয়, চিনের সংবাদমাধ্যম রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত। সোমবার চিনের সংবাদ এজেন্সি জিনহুয়া, জাতীয় ব্রডকাস্টার সিসিটিভি এবং কমিউনিস্ট পার্টিক মুখপত্র পিপলস ডেইলি-তে একটা শব্দও খরচ করা হয়নি ক্লোয়ি ঝাও-কে নিয়ে। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই সম্পর্কিত সমস্ত পোস্ট ব্লক হয়েছে। এমনকি অস্কারের লাইভ স্ট্রিমিং যাতে virtual private network বা VPN-এর মাধ্যমেও দেখা না যায় তা নিশ্চিত করেছিল বেজিং।সিনে-দুনিয়ার উচ্ছ্বাসকে ছিটে-ফোঁটাও নেই চিনে। কিন্তু কেন এই পরিচালকের উপর রোষ বেজিং-এর? মাস খানেক আগেই ক্লোয়ির এক পুরোনো ইন্টারভিউ নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল চিনে। ২০১৩ সালের সেই সাক্ষাত্কারে এই ফিল্মমেকার বলেছিলেন ‘চিন এমন একটা দেশ যেখানে সবর্ত্রই মিথ্যা চোখে পড়বে'। যদিও ক্লোয়ি সেই বিতর্কের সাফাই দিয়ে বলেন তাঁর মন্তব্যের ভুল ব্যাখা হয়েছে। অন্যদিকে ক্লোয়ির এই ঐতিহাস জয় বেশ কিছু প্রশ্ন উস্কে দিয়েছে মার্কিন-চিন সম্পর্ক নিয়েও। অনেকেই এই জয়ের আড়ালে রাজনীতির রং খুঁজে পাচ্ছেন। জন্মসূত্রে চিনা ক্লোয়ি ১৫ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে যান উচ্চশিক্ষার জন্য, এরপর মার্কিন মুলুকে পাড়ি দেন। সেখানেই ইন্ডিপেনডেন্ট পরিচালক হিসাবে ছবি বানান তিনি। অস্কার জয়ের পর মঞ্চে বক্তব্য রাখবার সময়েও চিনের নাম শোনা যায়নি ক্লোয়ির মুখে। পাশাপাশি ক্লোয়িকে পুরস্কৃত করবার মাধ্যমে নিজেদের দীর্ঘদিনের দুর্নামও ঘোচাতে চাইছে অ্যাকাডেমি এমনটাও মত অনেকের। লিঙ্গবৈষম্য, বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগে বিদ্ধ অস্কারের মঞ্চ ক্লোয়িকে পুরস্কা দেওয়ার মধ্যে দিয়ে সেই বদনাম দূর করতে চেয়েছে এমনটাও শোনা যাচ্ছে। তবে অনেকের মধ্যেই চলতি বছর অস্কারের মঞ্চে নিজের যোগ্যতাতেই সেরার পুরস্কার ছিনিয়ে নিয়েছেন ‘নোম্যান্ডল্যান্ড’ পরিচালক । সেখানে অন্য কোনও প্রসঙ্গ টানা অর্থহীন।