বাংলা টেলিভিশনের পরিচিত মুখ দোলন রায়। কয়েক দশক ধরে চুটিয়ে কাজ করেছেন ছোট আর বড় পরদায়। তাঁর অভিনয় যেমন দর্শক পছন্দ করে, তেমনই মন কাড়ে তাঁর খোলামেলা কথা। মনের কথা বলে ফেলতে খুব বেশি ভাবেন না। সম্প্রতি ভাইরাল মিডিয়াকে দেওয়া দোলনের এক সাক্ষাৎকার, যা গত বছর পুজোর আগে তিনি দিয়েছিলেন। কথা বলেছিলেন বর্তমানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। ‘আজকের যে পরিস্থিতি তা ভালো লাগছে না। তবে এই পরিবর্তন তো আমরাই এনেছি। বিক্ষুব্ধ বামপন্থীরাই তো তৃণমূলকে নিয়ে এসেছি। আমার মনে হয় একসঙ্গে কাউকে বেশিদিন রাজত্ব করতে দেওয়া উচিত নয়। এবার ধরলাম তৃণমূলের পর আর কেউ আসবে। কিন্তু প্রশ্ন হল কোন দল আসবে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কার মুখ আপনার মনে আসছে। কোনও দলেরই তো নেই-- তা সে সিপিএম হোক, কী বিজেপি বা কংগ্রেস। এটা আমার খুব ভয় লাগে। মুখ নেই তো কোনও। বুদ্ধদেববাবুর পর তো মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়কে মনে হয়েছিল। মুখ যতদিন না তৈরি হবে এরাই থাকবে। কাকে ভরসা করব। ১৫ বছর বা ২০ বছর কোনও দল থাকলে দুর্নীতি আসবেই। একটুর জায়গায় বেশি দুর্নীতি আসবে। এর আগে কি ধর্ষণ বা খুন হয়নি!’, বলতে শোনা গেল দীপঙ্কর দে-র পত্নী দোলনকে। অভিনেত্রী আরও মনে করেন, সংবাদমাধ্যমের জন্য এখন সব খবর সামনে আসছে। আগে সকালে খবরের কাগজ দিয়েই জানা যেত কোথায় কী হচ্ছে। অভিনেত্রী মনে করেন, এখন দেশ চালাচ্ছে মিডিয়াই। মিডিয়ায়ই পারে সরকার ফেলে দিতে বা একটা হারানো বাচ্চাকে ফেলে দিতে। আর তাই তখনকার রাজনীতির সঙ্গে এখনের তুলনা চলে না। নিজেকে ‘বিক্ষুব্ধ বামপন্থী’ হিসেবে মেনে নিয়ে দোলন আরও বলেন, টলিউড ইন্ডাস্ট্রি বাম জামানায় যা ছিল তার থেকে এখন অনেক উন্নত হয়েছে। তখন চেষ্টা করেও টেকনিশিয়ান স্টুডিয়ো বানানো যায়নি। অনেক আন্দোলন হয়েছে। সবসময়ই খারাপ-ভালো থাকবে। কিন্তু এখন টেকনিশিয়ানরা অনেক ভালো আছেন।রাজনীতি না করার জন্য আজকাল টলিউডের কেউ কেউ কাজ পান না সেটাও মানতে রাজি নন তিনি। পরিষ্কার জানিয়ে দেন তিনি তৃণমূলের মঞ্চে থাকেন ভালো লাগে তাই। কিন্তু সেভাবে রাজনীতি করেন না। তাঁর কথায়, ‘আমি যাই কারণ ভালো লাগে। বয়স হচ্ছে, একটা রাজনৈতিক দলকে সাপোর্ট করাটা তো আমার কর্তব্য। এটা ভুল কথা যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলে কেউ কাজ পায় না। আগে লোক বলত পরিচালক-প্রযোজকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নেই বলে কাজ পাই না। আমি মনে করি না, এরকম কিছু আছে।’নিজের ছবি ‘পাকা কথা’-র প্রসঙ্গও টেনে আনেন। বলেন, ‘আমরা একটা হাসির ছবি বানিয়েছিলাম পাকা কথা। যা করোনা পরবর্তী সময়ে খুব দরকার ছিল। নিষ্পাপ নির্মল হাসির গল্প। আড়াই ঘণ্টা সিনেমা হলে হাসবে তারপর বাড়ি চলে যাবে। সোহম ছিল সেই ছবির নায়ক। সেই সিনেমাটাও তো হল পেল না। মাত্র ৩টে হল পেল। এখেনা তুমি কী বলবে রাজনীতির জন্য হল পায়নি?’এই সাক্ষাৎকারেই তুলনা টানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বলে ওঠেন, ‘খারাপ-ভালো মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাপারে কীভাবে বলব। যোগ্যতাও নেই, ইচ্ছেও নেই। একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই। আপনারা নিজেদের মতো বুঝে নেবেন। একটা সময় বামফ্রন্ট সরকারের প্রয়োজনে রাস্তায় হেঁটেছি। আশুতোষ কলেজের সামনে থেকে হেঁটে শহিদ মিনার অবধি গেলাম আবার ফিরে এলাম। বুদ্ধদেববাবু কোনওদিন ফিরে একটা ধন্যবাদ জানাননি। তখন যদিও ব্যাপারটা বুঝিনি। প্রথমদিকে আমি্ তৃণমূলের মঞ্চে যেতাম না। প্রথম যখন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গেলাম উনি এগিয়ে এসে কথা বলেছিলেন। যেন ঘরোয়া কোনও কথা বলছেন। কোনও খাওয়াদাওয়া হলে দাঁড়িয়ে থেকে বলেন আরেকটু নাও, এটা নাও। এত আন্তরিক ব্যবহার আগে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর থেকে পাইনি। পুজোতে জামা পাঠান, জন্মদিনে শুভেচ্ছা বার্তা। এই হৃদ্যতা বিনিময়ই ওঁর প্লাস পয়েন্ট। এই কালচারটা ছিল নাকি আমাদের সিপিএমের সময়!’দোলন তৃণমূল ও মমতা প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘যে কাজ করবে তার ভালোও হবে, খারাপও হবে। সব খারাপকে কখনই সমর্থন করা যায় না। অন্ধ তো নই। তবে ভালো অনেক হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেষ্টা করেছেন ভালো করতে।’(এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক //htipad.onelink.me/277p/p7me4aup)