পর্দায় তাঁরা কখনও শুভাকাঙ্ক্ষী, তো কখনও একে অপরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী। কিন্তু বাস্তবে তাঁরা একে অপরের খুব ভালো বন্ধু। সমাজ মাধ্যমের পাতায় চোখ রাখলে তাঁদের বন্ধুত্বের নানা ঝলক চোখে পড়ে। কাদের কথা বলছি ভাবছেন? তাঁরা হলেন রুকমা রায়, গীতশ্রী রায়, শ্রীতমা রায়চৌধুরী, চান্দ্রেয়ী ঘোষ, মল্লিকা মজুমদার, সায়ন্তনী সেনগুপ্ত। কিন্তু তাঁদের এই দারুণ বন্ধুত্বের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল? বন্ধুত্ব দিবসে সেই গল্প জানতেই হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা যোগাযোগ করে রুকমা রায়ের সঙ্গে।অনেকের মতে ইন্ডাস্ট্রিতে নাকি ভালো বন্ধু হয় না, কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে তো একেবারে উল্টো...রুকমা: অনেকেই এই কথা বলেন বটে। তবে আমার ইন্ডাস্ট্রিতেই তো এত ভালো ভালো বন্ধু তৈরি হয়েছে। তাই এই কথাটা আমার কাছে সত্যি হতে পারে না। আমার মনে হয় আমি সত্যি খুব ভাগ্যবতী যে, ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে এমন সব বন্ধু পেয়েছি। ওঁদের সঙ্গে যখন গল্প করি তখন মনেই হয় না যে কর্মসূত্রে আলাপ আমাদের। আমার তো মনে হয় ওঁরা সবাই আমরা ছোটবেলার বন্ধু। কিন্তু এর শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?রুকমা: এটা নিয়ে একটা মজার গল্প আছে। আমাদের দেখা হওয়াটা হঠাৎ করেই। সায়ন্তনী দির জন্মদিনে আমি আমন্ত্রিত ছিলাম। সেখানেই আমাদের প্রথম দেখা। তারপর রাতেও একসঙ্গে ছিলাম। আমার মনে আছে, রাতে শ্রীতমা আমার পাশেই ঘুমিয়েছিল। তারপর সকালবেলা একটা শব্দে আমার ঘুম ভাঙে। আমি ঘুমের ঘোরে ভেবে ছিলাম হয়তো শ্রীতমার ফোনে বাজছে। তখন বেশ রেগে গিয়েই ওঁকে বলি যে, 'তোর ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে।' সত্যি বলছি তখন আমার খেয়ালও ছিল না যে ওঁর সঙ্গে এটাই আমার প্রথম দেখা, বা আমদের মধ্যে সেরকম বন্ধুত্ব নেই।যাইহোক কিন্তু এত কিছুর সত্ত্বেও শ্রীতমা কিছু মনে করে না। উল্টে খুব মিষ্টি করে বলে, 'নো ইটস কবুতর।' তখন বুঝতে পারি বাইরে পায়রা ডাকছে। ওঁর মুখে এই কথাটা শুনে খুব মজা লাগে, আর সেখান থেকেই আমাদের বন্ধুত্বের শুরু। তারপর একে একে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বটা বাড়তেই থাকে। এরপর থেকে আমরা মাঝে মাঝেই সকলে দেখা করতাম, ঘুরতে যেতাম, আড্ডা দিতাম। আলাদা করে আর কিছু করতে হয়নি খুব স্বাভাবিক ভাবেই বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে।বন্ধুত্বের হাত ধরেই তো আসে খুনসুটি, সেখানে কে কার 'লেগ পুল' করেন?রুকমা: ও বাবা, সেটা আমাকেই করা হয় সবচেয়ে বেশি। আমরা সবাই যখন একত্র হই তখন তো আমাকে লেকপুল করার জন্য ওঁরা রীতিমতো তৈরি থাকে। তবে এই বিষয়টাকে আমিও কিন্তু খুব উপভোগ করি।কিন্তু আমাদের এই খুনসুটি কেবল নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তেমনটা নয়। হয়তো রাস্তা দিয়ে হাঁটছি, তখন আমাকে দেখে কেউ বলে উঠল 'কিরণমালা যাচ্ছে,একটা সেলফি তুলবো'। তো সেই সময় সবাই আমার দিকে তাকায়। আমি আমার তাঁদের ফোকাস শিফট করার জন্য আমার পাশের জনের ব্যাপারে কিছু বলতে থাকি। যেমন ধরুন, আমার পাশে তখন যদি গীতশ্রী থাকে, তখন আমি ওঁর সিরিয়াল ‘রাশি’-এর টাইটেল ট্র্যাক গাইতে শুরু করি। তবে এখানেও আমি থেমে নেই। অনেক সময় এমনও হয় আমরা গাড়ি করে যাচ্ছি, তখন আমি কোনও পথচারীকে দেখে নানা মন্তব্য করেছি। আমরা তাঁকে চিনিও না, তবু আমি আগে গাড়ির ভিতর থেকে চিৎকার করতাম, 'ও দাদা আপনার ব্যাগে কী আছে?' কিংবা 'ও বৌদি আপনি কি খাবার নিয়ে যাচ্ছেন?' এইসব বলে। আর আমার এই সব কাণ্ড-কারখানাতে ওঁরা খুব অপ্রস্তুত হয়ে পড়ত। তবে রাগ করেনি কখনওই। আসলে ওঁরাও এই ব্যাপারগুলো মজার ছলেই নেয়। তবে নিজেকে এখন একটু বুঝিয়েছি। এবার বড় হতে হবে, তাই এখন এসব খুব একটা করি না।সকলের সঙ্গেই তো বেশ ভালো সম্পর্ক, কিন্তু তাও যদি আলাদা করে বলি, কার সঙ্গে আপনার ঘনিষ্ঠতা বেশি? রুকমা: ও ভাবে না বলাটা খুব মুশকিল। সকলের সঙ্গেই আমার খুব ভালো সম্পর্ক। কিন্তু তবু যদি আলাদা করে বলতেই হয়, তাহলে শ্রীতমার কথাই বলব। কারণ ওঁর সঙ্গে আমার সবচেয়ে বেশি দেখা হয়। শুটিংয়ের পর, জিমের পর আমরা প্রায়ই দেখা করি। তাছাড়া একসঙ্গে যখন কাজ করছিলাম সায়ন্তনী দির সঙ্গেও আমার প্রচুর আড্ডা হত। আর, আজকের দিনটা নিয়ে বিশেষ কোনও প্ল্যান রয়েছে? রুকমা: আজ কী, আমরা গতকাল থেকেই শুরু করে দিয়েছি। কাল আমরা সবাই একসঙ্গে দেখা করেছিলাম। আজকেও ইচ্ছে আছে দেখা করার। একসঙ্গে বসে আড্ডা দেওয়ার। দেখা যাক কী হয়। যারা আমরা আজ সময় করে উঠতে পারব তাঁরা আজ আবার একসঙ্গে বসব।এখন তো আড্ডা দিয়ে কাটে, কিন্তু ছোটবেলায় আজকের দিনে কীভাবে কাটাতেন? রুকমা: তখন তো ফ্রেন্ডশিপ ডে মানেই ‘ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড’। তবে 'ফ্রেন্ডশিপ ডে'-এর অনেক আগে থেকেই এই নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করে দিতাম। ক'টা ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড কিনব? ক'টা কার্ড কিনব? সেই সব প্ল্যান শুরু করতাম। আমি তো আবার নিজের হাতে ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড বানাতাম। নানা রঙের উল দিয়ে ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড বানিয়ে নিয়ে স্কুলে, কলেজে নিয়ে যেতাম।এখন কি স্কুলের সব বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়? সেই সময়ের এমন কোনও বন্ধু আছে যাঁকে মিস করেন?রুকমা: না, কারণ আমার যখন যাঁর কথা মনে পড়ে, তখন আমি তাঁকে ফোন করেনি। অপেক্ষা করি না, যে সে কখন আমাকে ফোন করবে। আমি আমার দিক থেকে সবসময় চেষ্টা করি যে আমাদের বন্ধুত্বটা যেন অটুট থাকে। মাঝে হয়তো অনেকটা সময় আমরা সময়ের অভাবে দেখা করতে পারিনি বা কথা বলতে পারিনি। কিন্তু তাতে যেন আমাদের সম্পর্কের নির্যাসটা নষ্ট হয় সেটা আমি সব সময় আমি চেষ্টা করি।যেমন সেদিনই সিনেমা দেখতে দেখতে আমার এক বন্ধুর কথা খুব মনে হচ্ছিল। সিনেমাতে একজন অভিনেতা ছিলেন। তিনি এক সময় মেগাতে কাজ করতেন। তখন আমরা ওঁর সিরিয়াল দেখে আমরা নিজেদের মধ্যে মজার ছলেই অভিনয় করতাম। তাই ছবিটা দেখতে দেখতে আমার ওই বন্ধুর কথা খুব মনে পড়ছিল। আমি অপেক্ষা করিনি, সিনেমা শেষ হতেই তাঁকে ফোন করেছিলাম। আজও ওঁকে ফোন করেছি কারণ আজ ওঁর জন্মদিন। তার উপর আজ আবার ফ্রেন্ডশিপ ডে, তাই উইশ তো করতেই হবে।আপনার দিক থেকে তো আপনি বন্ধুত্বের নির্যাস ধরে রাখেন, কিন্তু বন্ধুদের দিক থেকে কি কখনও দূরত্ব অনুভব করেছেন? তাঁরা কি কখনও তারকাসুলভ আচরণ করেছেন আপনার সঙ্গে?রুকমা: না, সেরকম কখনও হয়নি। আমিও তাঁদের সঙ্গে সেই জায়গাটা কখনও তৈরি হতেই দিইনি। বন্ধুত্বে যদি ফর্মালিটি চলে আসে তাহলে সেটার আর বন্ধুত্ব থাকবে না।