আমি হয়ত ট্যালেন্টেড নই, অভিনয়ও পারি না, দেখতেও বাঙালিদের মতো নয়, তবে আমি জানি আমি পরিশ্রমী। যে চরিত্রই করব, সেটাকে পরিশ্রম করে ফুটিয়ে তুলব।…১৩ বছর বয়স থেকে মডেলিং করছি। ভোর ৩টেয় উঠে শ্যুটিং সেরে ইউনিফর্ম পরে স্কুলে যেতাম, ফিরে ফের শ্যুটিং। ৮ টায় বাড়ি এসে পড়াশোনা, কষ্ট করেছি, পেশাদারিত্ব আমি বুঝি।
নতুন 'সত্যবতী' রুক্মিণী মৈত্র
পরনে সুতির শাড়ি, পুরনো এথনিক স্টাইলে ব্লাউজ, হাতে শাঁখাপলা, সিঁথিতে সিঁদুর, কপালে টিপ, এক্কেবারে বাঙালি আটপৌরে সুন্দরী গৃহবধূর বেশে ধরা দিয়েছেন রুক্মিণী মৈত্র। থুড়ি, উনি এখন যে আর রুক্মিণী নন, ‘সত্যবতী’। সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সীর সহধর্মিণী। ১১ অগস্ট পর্দায় এভাবেই দেখা যাবে রুক্মিণী মৈত্রকে। তবে 'ব্যোমকেশ ও দুর্গরহস্য' মুক্তির আগেই রক্মিণী ফের ব্যস্ত, নতুন ছবি 'বুমেরাং'-এর শ্যুটিংয়ে। বুধবার সকালে ফোন করতেই জানালেন, ‘ভোর ৩ পর্যন্ত শ্যুটিং করেছি, আজই (বুধবার) মুর্শিদাবাদ থেকে ফিরলাম, প্রায় ৭ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে এসে ঘুমোচ্ছিলাম, উঠেই দেখি আপনার মেসেজ…(হাসি)’।
রুক্মিণী: আসলে ভালো কাজ হলে আর ঈশ্বরের যদি আশীর্বাদ থাকে, আমার মনে হয় মনের জোরটা উনিই জুগিয়ে দেন। এখন হয়ত বেশি ঘুমোতে পারছি না, তবে একদিন চোখ বন্ধ করে যে স্বপ্ন দেখতাম, আজ সেগুলিই তো সত্যি হচ্ছে। এটাকে আমি এভাবেই দেখি।
অনেকেই বলছেন, 'ব্যোমকেশ ও দুর্গরহস্য' ছবিতে আটপৌরে বাঙালি লুকে আপনাকে ভীষণ মানিয়েছে..
রুক্মিণী: পরিশ্রমের পর এমন প্রশংসা শুনলে কার না ভালো লাগে! এর জন্য আমি পরিচালক বিরসা (বিরসা দাশগুপ্ত) আর শুভেন্দুদা (চিত্রনাট্যকার শুভেন্দু দাশমুন্সি)কে ধন্যবাদ জানাব, কারণ ওঁদেরই প্রথম মনে হয়েছিল এই লুকে আমায় মানাবে। আর একজন অভিনেতা-অভিনেত্রীকে জলের মতো হতে হয়। যে পাত্রে ঢালবে, সেই পাত্রের আকার নিয়ে নিতে হবে, নিজেকে ভাঙতে হবে। তবে লুকটা মানানোটাও বড় বিষয়। এটা বোঝার জন্য দূরদৃষ্টির প্রয়োজন। কারণ, এমনি কাকে কেমন দেখতে তা দেখে কিছুই বোঝা যায় না। এছাড়াও আমার মেকআপ শিল্পী বীথিকা বেনিয়া, আর হেয়ার যিনি করেছেন হেমা মুন্সি, লুকের জন্য জয়ন্তী সেনেরও এখানে যথেষ্ট অবদান রয়েছে।
'সত্যবতী'এখানে অন্তঃসত্ত্বা, এটার জন্য শুনেছি প্রস্থেটিক মেকআপ ব্যবহার করা হয়েছে?
রুক্মিণী: হ্যাঁ, সাধারণত বাংলা ছবিতে অন্তঃসত্ত্বা মহিলা হিসাবে দেখাতে অন্যকিছু দিয়ে পেটটা উঁচু করা হয়। তবে এক্ষেত্রে প্রস্থেটিক মেকআপ ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ বিরসা চেয়েছিলেন পেট দেখা যাক, আর তাতে যেন আমায় প্রকৃত সাড়ে ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বার মতোই লাগে, কোথাও যেন মনে না হয় যে ‘নকল’। সেকারণে প্রায় রোজ দেড়ঘণ্টার মতো প্রস্থেটিক পেট পড়তে হত, যার ওজন ছিল সাড়ে ৪ কেজি। আর ওটার কারণেই আমি অন্তঃসত্ত্বা মহিলার মতোই কষ্ট পেয়েছি। পেটে, কোমরে, হাঁটুতে ব্যাথা হয়ে গিয়েছিল। হাঁটতে গিয়ে যেভাবে একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলার অনুভূতি হয়, আমারও তখন সেই অনুভূতিই হয়েছিল।
প্রস্থেটিক মেকআপ করার জন্য তো দীর্ঘক্ষণ সময় লাগে…
রুক্মিণী: হ্যাঁ, তা তো লাগেই, প্রায় ২-৩ঘণ্টা চেয়ারে বসে থাকতে হয়। তবে এটার জন্য প্রথমে আমি খুব উৎসাহী ছিলাম। প্রস্থেটিক মেকআপের বিষয়টা আমার ভীষণ ইন্টারেস্টিং লাগে। যদিও আমার মুখে এমন কথা শুনে মেকআপ শিল্পী সোমনাথ কুণ্ডু বলেছিলেন, এই প্রথম কারোর মুখে এমন কথা শুনলাম। আমার অবশ্য বিষয়টা ভীষণ সায়েন্টিফিক মনে হয়। পদ্ধতিটাই ইন্টারেস্টিং, বেশ মজার।
অন্তঃসত্ত্বা মহিলার হাঁটা-চলা অন্যদের থেকে আলাদা হয়, সেটার জন্য অনুশীলন করতে হয়েছিল নাকি?
রুক্মিণী: সত্যবতী হওয়ার যখন প্রস্তাব এল, তখনই জিগ্গেস করেছিলেন এই সত্যবতীতে নতুন কী আছে? বলা হল সত্যবতী এখানে অন্তঃসত্ত্বা। তখনই বেশ আগ্রহী হয়েছিলাম। বাংলায় প্রস্থেটিক মেকআপ করে কাজ হয়েছে, তবে এখানে প্রস্থেটিক পেট। ওই পেটটা পরে আমি শ্যুটিংয়ের আগে ওয়ার্কশপ করেছিলাম। যাতে বিষয়টা ‘ন্যাচারাল’ লাগে। তবে যখন পেট পরে শ্যুটিং শুরু করলাম, তখন ওর ওজনই আমাকে দিয়ে সব করিয়ে নিয়েছিল। কোমরে ব্যাথা, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ক্লান্তি, সবই ওই ভারী পেটের কারণে এসে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল, সত্যিই বোধহয় আমি অন্তঃসত্ত্বা, পেটের মধ্যে বাচ্চা বয়ে নিয়ে হাঁটছি। ওটা পরে ভোর ৬ থেকে রাত ১২ পর্যন্ত শ্যুট করার যে কী কষ্ট! এত্ত গরম লাগত, মনে হত নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।একদিন সেট ছেড়ে বের হয়ে গিয়েছিলাম, মনে হচ্ছিল নিঃশ্বাস নিতে পারছি না, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তার উপর ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় শ্যুটিং করছি। তাই নিজের শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে হয়। শরীরের ভিতর থেকে তাপমাত্রা বাড়লেই মুশকিল। বেশ কঠিন…।