প্রয়াত হাংরি আন্দোলনের জনক, কবি ও ঔপন্যাসিক মলয় রায়চৌধুরী। ২৬ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার দুপুরে মৃত্যু হয় তাঁর। কবির পরিবারের তরফে ফেসবুকে মলয় রায়চৌধুরীর মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।১৯৩৯ সালের ২৯ অক্টোবর, সুতানুটি-গোবিন্দপুর-কলকাতা খ্যাত সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারে জন্ম হয় মলয় রায়চৌধুরীর। তাঁর বাবা গৌচপ্রম রায়চৌধুরী ছিলেন চিত্রশিল্পী ও ফটোগ্রাফার।তার মা অমিতা ছিলেন পাণিহাটি স্থিত নীলামবাটির কিশোরীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় (রোনাল্ড রস-এর সহায়ক) বড় মেয়ে। কলকাতার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিষদের সংরক্ষিত সংগ্রহশালার (মিউজিয়াম) তথ্য অনুযায়ী মলয় রায়চৌধুরীর ঠাকুরদা লক্ষীনারায়ণ ছিলেন ভারতবর্ষের প্রথম ভ্রাম্যমাণ ফটোগ্রাফার-শিল্পী। তাঁর দাদা সমীর রায়চৌধুরীও একজন লেখক। প্রসঙ্গত ১৯৬১ সালে এক ইশতেহার প্রকাশিত হয় পাটনায়। সেই থেকে শুরু হয় হাংরি আন্দোলন। যা ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে বঙ্গসাহিত্যের আনাচে কানাচে। প্রতিষ্ঠান বিরোধী সেই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল মূলত মলয় রায়চৌধুরীর হাত ধরেই। জিওফ্রে চসারের একটা কবিতা থেকে হাংরি শব্দটি বেছে নিয়েছিলেন মলয় রায়চৌধুরী। এই আন্দোলনের সঙ্গে মলয় রায়চৌধুরীর দাদা সমীর রাচৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, বিনয় মজুমদার, হারাধন ধাড়া (দবী রায়) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নামও যুক্ত হয়েছিল। এই প্রজন্ম হাংরি প্রজন্ম নামে পরিচিত।১৯৬৪ সালে 'প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার' কবিতাটি লেখার জন্য রাষ্ট্রবিরোধী মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন মলয়। তাকে জেলেও থাকতে হয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়েও তিনি লেখালেখি চালিয়ে গিয়েছেন। সারা জীবনে লিখেছেন দুই শতাধিক গ্রন্থ। কবিতার পাশাপাশি উপন্যাস, প্রবন্ধ, অনুবাদেও তিনি ছিলেন সিদ্ধ হস্ত। 'শয়তানের মুখ', 'জখম', 'ডুব জলে যেটুকু প্রশ্বাস', 'নামগন্ধ চিৎকার সমগ্র', 'কৌণপের লুচিমাংস', 'মাথা কেটে পাঠাচ্ছি যত্ন করে রেখো' তার উল্লেখযোগ্য রচনা। তবে তাঁর সারাজীবনই ছিল বিতর্কিত। ২০০৩ সালে সাহিত্য অ্যাকাদেমি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন মলয় রায়চৌধুরী। বহদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানান অসুখে ভুগছিলেন মলয় রায়চৌধুরী।