বঙ্গতনয়ের বিশ্বজয়, না এই কথাটা এই মানুষটির ক্ষেত্রে বললে অত্যুক্তি করা হবে না। আপনার সঙ্গে যদি ওঁর আলাপ হয় আপনিও এটাই বলবেন। বরং একই সঙ্গে বাঙালি হওয়ার জন্য খানিক গর্ববোধও করবেন। কিন্তু কে ইনি? কী করছেন ভাবছেন? যাঁর কথা বলছি তাঁর নাম প্রদীপ্ত সেনগুপ্ত। থাকেন যাদবপুরের বাঘাযতীনে। তাঁর তৈরি করা অ্যানিমেটেড ছবি পুশ ইন বুটস-দ্য লাস্ট উইশ ছবিটি এই বছরের অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে। সেরা অ্যানিমেটেড ফিচার ছবি ক্যাটাগরিতে মনোনীত হয়েছে প্রদীপ্তর এই ছবিটি।পুরুলিয়ার রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তন ছাত্র হলেন প্রদীপ্ত। তবে তিনি এখন থাকেন লস অ্যাঞ্জেলেসে। জোয়েল ক্রফোর্ড পরিচালিত এই ছবিটিতে তিনি মুখ্য অ্যানিমিস্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন। তবে এই ছবিতে তিনি একা নন। তাঁর স্ত্রী প্রমিতা মুখোপাধ্যায়ও এই ছবিতে কাজ করেছেন। এমনটাই জানান তিনি। তাঁর কথায়, 'আমি একমাত্র বাঙালি নই, আমার স্ত্রী প্রমিতা মুখোপাধ্যায়ও রয়েছে। আমরা একই সঙ্গে এই ছবিতে কাজ করেছি।' তিনি আরও জানান, 'আমার মনে ইস্টার্ন ইন্ডিয়া থেকে আমরাই মাত্র দুজন বাঙালি এবারের অস্কার মনোনয়নে রয়েছি।'প্রদীপ্ত বায়োটেকনোলজিতে বিএসসি করেছেন। তারপর তিনি অ্যানিমেশন নিয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করেন। এরপর ২০০৭ সাল থেকে তিনি পেশাদার ভাবে অ্যানিমেশনের কাজ শুরু করেন। তবে প্রথম কাজ হল একটি টিভি সিরিজ, নাম লিটিল কৃষ্ণা। ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতেই কাজ করেন। এরপর তিনি চিনে চলে যান। ওখানে থাকার সময়ই তাঁর কাছে উইশ ড্রাগনে কাজ করার একটা সুযোগ আসে।কিন্তু একজন অ্যানিমিস্ট হিসেবে প্রদীপ্ত সেনগুপ্তর কী মনে হয়, ভারতে অ্যানিমেশনের অবস্থান কী? ভবিষৎ কী? এই প্রসঙ্গে তিনি বর্তমানকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, 'ভারতে দুর্ভাগ্যবশত এখনও এই বিষয়ে কোনও সচেতনতা নেই। অধিকাংশ লোকজন ভাবেন অ্যানিমেশন মানেই বাচ্চাদের ছবি। কিন্তু সেটা নয়। বাইরের দেশে সেটা হয় না। সব বয়সের মানুষ অ্যানিমেটেড ছবি দেখেন। এটাতে পরিশ্রম অনেক বেশি। আর ছবির গল্পটাও সব বয়সের মানুষের জন্যই। জীবন, পরিবার, বন্ধুদের গল্প আছে এই ছবিতে।'ছোট থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি আঁকতে ভালোবাসতেন প্রদীপ্ত। টম অ্যান্ড জেরি আজও তাঁর প্রিয়। তবে যেহেতু তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র ছিলেন তাই পরিবারের আশা ছিল তিনি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবেন। সেখানে দাঁড়িয়ে পরিবারকে বোঝাতে তাঁর বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। প্রদীপ্ত আরও জানান, 'মা সাপোর্ট করেছিল খুব। আমি যখন এই পেশায় যুক্ত হই তখন ভারতে অ্যানিমেশন তেমন ছিল না। হলিউডে কাজ করব এটাও ভাবিনি।সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত ইনস্টিটিউটের ছাদে বসে থাকতাম কাজ শেখার জন্য। আমার পরিবারের কেউই সিনেমার সঙ্গে যুক্ত ছিল না। অ্যানিমেশন করেও সিনেমা বানানো যায় এটা বাড়ির কারও ধারণা ছিল না।'একদা বায়োটেকনোলজিস্ট আজকের অ্যানিমিস্ট। শুধু তাই নয়, দেশকে, রাজ্যকে, জাতিকে গৌরবান্বিত করে তিনি পৌঁছে গিয়েছেন অস্কারের মঞ্চে। সামনে অস্কার জয়ের হাতছানি তাঁর।