কদিন আগেই আরজি কর কাণ্ড নিয়ে মুখ খুলেছিলেন তসলিমা নাসরিন। তবে সেখানে যতটা না নির্যাতিতার হয়ে সুর চড়িয়েছিলেন, তার থেকে বেশি ছিল মমতা প্রসঙ্গ। এমনকী, লেখেন ‘পশ্চিমবঙ্গের মমতা দিদি তো বাংলাদেশের হাসিনা আপার মতো ভোটারবিহীন নির্বাচনে জিতে আসেননি।’ এতে অনেকেরই ধারণা হয়, বুঝি বা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্๊ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ নিচ্ছেন তিনি। যা নিয়ে কমেন্টে অনেকেই তুলোধনা করে তাঁকে। এখানেই শেষ নয়, একাধিক সংবাদ প্রতিবেদনও লেখা হয়। তবে এবার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন বাংলাদেশের লেখিকা।
তসলিমা নাসরিন তাঁর ফেসবুকে লম্ব পোস্ট করেন এই নিয়ে। আর সেখানে লেখেন, ‘আমার অতি সাধারণ কোনও মন্তব্যকে মিডিয়া বলে 'বিস্কোরক মন্তব্য'।𝔉 হাসিনা আর মমতাকে নিয়ে আমার এক লাইনের একটি মন্তব্য নিয়ে মিডিয়া বলছে 'মমতার পাশে তসলিমা'। কী ছিল সেই মন্তব্য? হাসিনা যেহেতু ভোটে জিতে ক্ষমতায় বসেননি, তাঁকে পদচ্যুত করা যত সহজ, মমতা যেহেতু ভোটে জিতে ক্ষমতায় বসেছেন, তাঁকে পদচ্যুত করা তত সহজ হবে না। দূর থেকে করা আমার এই মতের সঙ্গে মমতার পাশে থাকার কোনও সম্পর্ক নেই। ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে আমার পছন্দ করার কোনও কারণ নেই।’
এরপর জানান মমতার কারণে এক সময় বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। তাঁর লেখা একটি সিরিয়াল বন্ধ করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তসলিমা লেখেন, ‘তিনি আমার বিশ🐎াল অর্থনৈতিক ক্ষতি করেছেন। 'দুঃসহবাস' নামে আমার লেখা একটি মেগা সিরিয়াল মহাসমারোহে শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে তিনি আকাশ ৮-কে হুমকি দিয়ে চিরকালের জন্য এর প্রচার বন্ধ করে দিয়েছেন, পুলিশ পাঠিয়ে দুঃসহবাসের সমস্ত বিজ্ঞাপন খুলে নিয়েছেন। মেগা সিরিয়ালটি হয়তো বছরের পর বছর চলতো, আর আমি হাতে নিয়মিত পেতাম আমার জীবিকা নির্বাহের অর্থকড়ি। কিন্তু ജতিনি তা হতে দেননি। আকাশ ৮ চ্যানেলেরও কম ক্ষতি করেননি, মেগাসিরিয়ালটির প্রায় ১০০ এপিসোডের স্যুটিং করে রেখেছিল আকাশ ৮, তাদের সব টাকা জলে যায়।এমন বড় সর্বনাশ করেছিলেন কিছু ইসলামী মৌলবাদীকে খুশি করার জন্য। আর কোনও কারণ নেই।’
সঙ্গে লেখেন, কীভাবে তৃণমূল সরকার তাঁর পশ্চিমবঙ্গে পা রাখার দরজা পুরো বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকী, তাঁর ভিসায় লেখা রয়েছে, ভারতের যে কোনও রাজ্যেই ভ্রমণ করতে পারেন তিনি, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া। ২০০৭ এর নভেম্বর মাসের পর থেকে কলকাতায় পা রাখতে পারেননি তিনি। কিন্তু এই শহরে থাকবেন বলেই, ইউরোপ ত্যাগ করেছিলেন। লিখলেন, ‘ওখানের বিভিন্ন সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারি না। মমতা বন্দোপাধ্যায়কে অনেকগুলো খোলা চিঠি লেখার পরে൩ও তিনি ভ্রুক্ষেপ করেননি। তাঁর ঔদ্ধত্য এবং অহংকার সীমাহীন, একজন নির্বাসিত নিরীহ বা𒆙ঙালি লেখকের জন্য নারী হয়ে, বাঙালি হয়ে তাঁর সামান্য বিবেচনাবোধ, সামান্য সহানুভুতি বা সহমর্মিতা নেই। সিপিএমের কিছুই তিনি মানেন না, কিন্তু সিপিএমের অমানবিক তসলিমা বিতাড়ন তিনি খুব মানেন।’
আরও পড়ুন: বউয়ের ৩ বার গর্ভপাত করান! ‘মদ্যপ’𒁏 হয়ে গাড়ি চালানো সম্রাট কী যুক্তি🃏 দেন তা নিয়ে
সবশেষে তসলিমা লেখেন, ‘যেহেতু তিনি আমার মস্ত ক্ষতি করেছেন, তাই বলে দড়ি ধরে মারো টান বলে আমি তাঁকে ক্ষমতা থেকে টেনে না🍃মাবো, এমন তো প্রশ্নই ওঠে না। গত কয়েকদিন থেকে ইসলামী ফ্যাসিস্টরা যেভাবে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আরোহণ করছে, তা প্রত্যক্ষ্য করায় এবং তার প্রতিবাদ করায় আমি ব্যস্ত আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে সরিয়ে ইসলামি ফ্যাসিবাদ আসছে, নারীর জীবন দুর্বিষহ করার জন্য আর তো কিছুর দরকার নেই। পশ্চিমবঙ্গে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে, এবং নারীর নিরাপত্তার জন্য যে আন্দোলন চলছে, সেটি, আমি সশরীরে উপস্থিত না থেকেও যে ১০০ ভাগ সমর্থন করছি, তা বলাই বাহুল্য । চার দশকের বেশি তো নারীর সমানাধিকারের জন্যই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করছি। এ তো কোনও অজানা তথ্য নয়।’