১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব যখন চরমে, তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, 'যারা আমার মানুষের রক্ত নিয়েছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলব?' সেই সময় রাউন্ড টেবিল আলোচনায় মুজিবকে ডেকেছিল পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃত্ব। আজ স্বাধীন বাংলাদেশে সেই মুজিব মন্ত্রেই শেখ হাসিনাকে কড়া ভাষায় জবাব দিলেন সেদেশের ছাত্ররা। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে কোটা-বিরোধী আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে বৃহস্পতিবার। বিকেল গড়াতে গড়াতে মৃত্যু হয় প্রায় ৩০ জন পড়ুয়ার। সেই আবহে শাসকদল আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের 'শান্তিবার্তা' দেন। পাশাপাশি হাসিনা সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের তরফ থেকে আলোচনার প্রস্তাব পাঠানো হয় পড়ুয়াদের। তবে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' নামক মঞ্চ সেই আলোচনার আহ্বান খারিজ করে দিয়ে আন্দোলন জারি রাখার ঘোষণা করেছে। তাঁদের স্পষ্ট প্রশ্ন, 'আমার ভাইয়ের রক্তের উপর দিয়ে কী ভাবে আলোচনার টেবিলে যেতে পারি?' (আরও পড়ুন: '🏅আমার আর কেউ নাই', ছেলের রক্তাক্ত দেহে মাথা রেখে কান্না মায়ের, কাঁদছে বাংলাদেশ)
আরও পড়ুন: হিংসা কবলিত বাংলাদেশ থেকে কোনওক্রমে মেঘায়লে এলেন ২০২ ভারতীয়, ১০১ ༒নেপালি
এদিকে বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্রে দাবি, শুধুমাত্র বৃহস্পতিতেই ছাত্রমৃত্যুর সংখ্যা ৪০ ছাড়িয়েছে বাংলাদেশ জুড়ে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ সহ বিভিন্ন হাসপাতালে এসে পৌঁছেছে একের পর এক ছাত্রের লাশ। বহু মায়ের কান্না এবং আর্তনাদে ভরে উঠেছে হাসপাতাল চত্বরগুলি। ছাত্র-ছাত্রীদের হাহাকারে কান পাতা দায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে। তবে তাও আন্দোলন জারি থেকেছে। এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢাকা পুলিশ এবং ব়্যাবের নির্মম কর্মকাণ্ডের একের পর এক ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছ দিনভর। এতে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজসাহী সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন 🦩প্রান্তে ছড়িয়েছে ছাত্রদের ক্ষোভ। আর পুলিশ রাস্তায় নেমে আন্দোলকারীদের দমন করার চেষ্টায় একের পর এক প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। খালি হয়েছে বহু মায়ের কোল।
আরও পড়ুন: নিজের স্ত্রী ভেবে জনসমক্ষে অন্য মহিলাকে চুম্বন করতে গ✤েলেন বাইডেন! ভাইরাল ভিডিয়ো
বার্তা সংস্থা এএফপি-র রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, গতকাল বাংলাদেশ জুড়ে ২৫ জনের বেশি পড়ুয়া মারা গিয়েছে। অসমর্থিত সূত্রে সেই সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি। তবে এএফপি রিপোর্ট অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশে কোটা-বিরোধী আন্দোলনে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩২ জন পড়ুয়ার। পরে মৃতের সংখ্যা ৩৯ বলে দাবি করা হয়। সেখানে মারমুখী আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তারক্ষীদের ওপরও হামলা চালিয়েছে। তাতে জখম হয়েছেন বহু পুলিশকর্মী, ব়্যাব সদস্য। জ্বলিয়ে দেওয়া হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের গাড়ি। বিভিন্ন ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, ঢাকার উত্তরা, মীরপুর এলাকায় সাঁজোয়া যান নামিয়েছে বাংলাদেশ সেনা। ক্যানটনমেন্ট থেকে কাতারে কাতারে সামরিক যান রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছেছে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের দমন করতে। এদিকে গতকাল বাংলাদেশ টিভির স্টেশনে হামলা চালিয়ে সম🃏্প্রচার বন্ধ করে দেয় আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। শহরের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে ঢুকে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে দেখা গিয়েছে। রাস্তায় কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে দেখা গিয়েছে, পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে ছররা গুলি ছুড়তে দেখা গিয়েছে। এদিকে রাতের দিকে ঢাকা সহ বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট জারি করে হাসিনা সরকার। এই আবহে গতকাল রাত থেকে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।