ভারতে করোনা রোগীর চিকিৎসায় একাধিক পদ্ধতি ও ওষুধের সহায়তা নিচ্ছেন চিকিৎসকরা। বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে রোগীমৃত্যুর হার রোধ করতে। তা সত্ত্বেও প্রতিদিন নিত্য-নতুন সমস্যার মুখে পড়ছেন চিকিৎসক, নার্সও স্বাস্থ্যকর্মীরা। করোনা সংক্রমণের জেরে শরীরে তৈরি হওয়া রকমারি জটিল সমস্যা মোকাবিলায় ব্যবহার করা হচ্ছে অক্সিজেন সাপোর্ট থেকে স্টেরয়েড ব্যবহারের মতো বিভিন্ন প্রক্রিয়া। আবার আশঙ্কাজনক রোগীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হচ্ছে প্লাজমা থেরাপি। ম্যাক্স হেল্থকেয়ার সংস্থার গ্রুপ মেডিক্যাল ডিরেক্টর চিকিৎসক সন্দীপ বুধিরাজা জানিয়েছেন, ‘কোনও বাঁধাধরা চিকিৎসা পদ্ধতি বা রোগ প্রতিরোধের নিয়ম এ ক্ষেত্রে কাজ করছে না। তবে গত তিন মাসে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। বেশ কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি অনুমোদিত হওয়ার ফলে দেখ াগিয়েছে, সঠিক সময়ে নানান প্রক্রিয়ার মিশেলে তৈরি চিকিৎসা সুফল দিচ্ছে।’হায়দরাবাদের গান্ধী হাসপাতালের সুপার রাজা রাও বলেন, ‘সংক্রমণের মাত্রা এবং রোগীর শারীরিক পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করে নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ অথবা একাধিক ওষুধের সমন্বয় ব্যবহার করা হচ্ছে। সব রোগীরই রেমডেসিভার বা স্টেরয়েড প্রয়োজন হয় না। রোগীর পরিস্থিতি বিচার কের আমরা ওষুধ ঠিক করি।’জানা গিয়েছে, অক্সিজেন স্যাচুরেশন পয়েন্ট ৯৪% নীচে নামলেই তাঁকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়। বুধিরাজার কথায়, ‘চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে রোগীর পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে পারে। আবার ৮-১২ দিনের ব্যবধানে হাইপারঅ্যাক্টিভ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে সাইটোকাইন স্টর্ম-এর জেরেও শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে পারে। অনেক সময় রোগী ভালো আছেন বললেও আমরা বুঝতে পারি, তিনি কিছু ক্ষণের মধ্যেই আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে পৌঁছবেন।’ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সংকটজনক রোগীর ক্ষেত্রে ডেক্সামিথ্যাসোন অথবা মিথাইলপ্রেডনিসোলন-এর মতো ওষুধ প্রয়োগ করে সাইটোকাইন ঝড় রোধ করা সম্ভব। রোগীর মৃত্যু ঠেকাতে একমাত্র প্রয়োগ করা যেতে পারে ডেক্সামিথ্যাসোন নামক স্টেরয়েড। এই স্টেরয়েড ব্যবহার করে ব্রিটেনে বেশ কিছু রোগীর প্রাণরক্ষা করা সম্ভব হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সুস্থ হয়ে ওঠা কোভিড রোগীর প্লাজমার সাহায্যে আক্রান্ত রোগীরা করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে পারেন, জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এই প্রক্রিয়ায় আকত্রান্তের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আমেরিকায় ২০,০০০ রোগীর উপরে এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগে সুফল লাভ করা গিয়েছে।আবার, কী ভাবে করোনাভাইরাস মানবদেহে প্রভাব ফেলে, তা অনুধাবন করে দিল্লিতে কোভিড-মৃত্যুর হার কমাতে সফল হয়েছেন চিকিৎসকরা। জুন মাসে রোগীমৃত্যুর হার ছিল ৪.১% যা বর্তমানে নেমে দাঁড়িয়েছে ২.৯% তে। নয়া দিল্লির সফদরজং হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান বি কে ত্রিপাঠি জানিয়েছেন, ‘প্রথম দিকে আমরা ভাবতাম, অক্সিজেনের অভাবেই মৃত্যু হচ্ছে। এখন আমরা জানি, রক্তবাহী শিরার ভিতরে রক্ত জমাট বাঁধার ফলে ফুসফুস অচল হয়েও মৃত্যু হতে পারে। এই ভাইরাসের সুবাদে সাইটোকাইন স্টর্ম হতে পারে এবং আনুসঙ্গিক ব্যাক্টেরিয়াজাত সংক্রমণের জেরেও ঘনিয়ে আসতে পারে মৃত্যু। এই সমস্ত সমস্যা এড়াতে শিরার ভিতরে রক্ত জমাট বাঁধা ঠেকাতে আমরা হেপারিন প্রয়োগ করি। সাইটোকাইন ঝড় থামাতে অ্যান্টি-আইএল৬ ওযুধ দিই এবং ব্যাক্টেরিয়াজাত সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিবিধ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।’