কম তদ্বির করেননি ইমরান খান। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হল না। ২৭টি অ্যাকশন পয়েন্টের শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় পাকিস্তানকে 'ধূসর তালিকা'-য় রেখে দিল ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)।সন্ত্রাস-বিরোধী আর্থিক নজরদারি সংস্থার তিনদিনের ভার্চুয়াল প্লেনারি বৈঠক শেষে ইসালামাবাদকে হুঁশিয়ারি দেন সভাপতি মার্কাস প্লেয়ের। তিনি জানান, এই বিষয়গুলি সমাধানের জন্য পাকিস্তানকে ‘চিরতরে’ সুযোগ দেওয়া হবে না। বারেবারে এফএটিএফের অ্যাকশন পয়েন্টের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে পাকিস্তানকে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করা হবে বলেও স্পষ্টত হুঁশিয়ারি দেন তিনি।সন্ত্রাসবাদে অর্থের জোগান এবং আর্থিক তছরূপ রুখতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৮ সালে পাকিস্তানকে 'ধূসর তালিকাভুক্ত' করা হয়েছিল। তাতে পাকিস্তানের উপর বাড়তি নজরদারি দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু তারপরও একাধিকবার এফএটিএফের নির্দেশ পূরণ করেনি ইমরান প্রশাসন। গত ফেব্রুয়ারিতেও সেজন্য মুখ পুড়েছিল ইমরানের। তারপরও যে পাকিস্তান শুধরোয়নি, তা শুক্রবার এফএটিএফের কড়া হুঁশিয়ারিতে আবারও আন্তর্জাতিক স্তরে স্পষ্ট হয়েছে। সন্ত্রাস-বিরোধী আর্থিক নজরদারি সংস্থার তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যেহেতু সব অ্যাকশন প্ল্যানের সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে, তাই পাকিস্তানকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব অ্যাকশন প্ল্যান পূরণের আর্জি জানাচ্ছে এফএটিএফ।’ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে প্লেয়ের জানান, ২৭ টির মধ্যে ২১ টি অ্যাকশন প্ল্যানের ‘অধিকাংশ সমাধান’ করেছে পাকিস্তান। বাকি শর্ত পূরণের বিষয়েও নাকি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে ইমরান প্রশাসন। তিনি বলেন, 'তবে এটা স্পষ্ট যে পাকিস্তান অগ্রগতি করলেও তাদের আরও বেশি করতে হবে। পাকিস্তান থেমে যেতে পারবে না। তাদের সংস্কারের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। বিশেষত আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপাতে হবে এবং যারা সন্ত্রাসবাদে অর্থের জোগান দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।' একইসঙ্গে সন্ত্রাস-বিরোধী আর্থিক নজরদারি সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, শুধু ২৭ টি অ্যাকশন প্ল্যান সম্পূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করলেই যে রেহাই মিলবে, তা নয়। বরং সবগুলি সম্পূর্ণ হলে একটি দল পাকিস্তানে যাবে এবং পাকিস্তান যে তথ্য দিয়েছে, তা খতিয়ে দেখবে। ঠিকমতো কাজ হয়েছে কিনা, তাও দেখা হবে। প্লেয়ের বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর পরবর্তী প্লেনারিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে তারা সত্যিই পুরোপুরি এবং কার্যকরীভাবে অ্যাকশন প্ল্যান সম্পূর্ণ করেছে কিনা। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে পাকিস্তান ধূসর তালিকা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে কিনা।’ অর্থাৎ বার্তাটা স্পষ্ট, ইমরানের আশ্বাসে চিঁড়ে ভিজবে। আদতে সব শর্ত পূরণ করতে হবে। তবেই মিলবে 'ধূসর তালিকা' থেকে মুক্তি। তবে সে কাজটা একেবারেই সহজ নয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের। গেটওয়ে হাউসের আন্তর্জাতিক সুরক্ষা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ সমীর পাটিল জানান, যে ছ'টি শর্ত নিয়ে পাকিস্তানের উপর চাপ দিচ্ছে এফএটিএফ, সেগুলিই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। যা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে নির্মূল করতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান আশা করছিল যে ধূসর তালিকা থেকে বের হওয়ার জন্য নজরদারি সংস্থাকে আশ্বস্ত করতে পারবে। কিন্তু এফএটিএফ কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং পাকিস্তানকে পুরো শর্ত পূরণ করতে বলেছে এবং জঙ্গি সংগঠনগুলি যে সরকারি সাহায্য পাচ্ছে, তাও বন্ধ করতে বলেছে। সেই কাজটা করতে পাকিস্তান সমস্যায় পড়বে। কারণ সেগুলিকে তো পাকিস্তান সেনা প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করে। ওই জঙ্গি সংগঠনগুলির প্রতিশোধের ভয়ে সব অ্যাকশন প্ল্যান পূরণের কাজটা সহজ হবে না। আমাদের ধারণা, পরবর্তী এফএটিএফের বৈঠকের আগে আরও নাটক করবে পাকিস্তান। যেমন - জঙ্গিদের পাকড়াও করা, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ শুরু করা।’