মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক অনুদান বাতিলের ঘোষণার পরেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে ভারতের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার ক্লিনিক। গত মাসেই হায়দারাবাদে ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের জন্য তৈরি তিনটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতদিন ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা মানবিক কাজের জন্য অনুদান দিত। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার পরই ৯০ দিনের জন্য এই অনুদান স্থগিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যার প্রভাব পড়েছে ভারতেও।
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার ক্লিনিক গড়ে ওঠে হায়দরাবাদে। তার নাম মিত্র ক্লিনিক। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের চিকিৎসা-সহ নানা পরিষেবা দেওয়ার জন্যই এই ক্লিনিক খোলা হয়েছিল। সাধারণ স্বাস্থ্য পরিষেবার পাশাপাশি এইচআইভি-র কাউন্সেলিং, স্ক্রিনিং, চিকিৎসা করা হতো এই সব ক্লিনিকে। এছাড়া, এইচআইভি আক্রান্তদের সামাজিক এবং আইনি সাহায্যও করা হতো এই সব ক্লিনিকের মাধ্যমে। ট্রান্সজেন্ডাররাও সেই সব ক্লিনিকে কাজ করতেন। হায়দরাবাদে মিত্র ক্লিনিকের সাফল্য দেখে পুনে এবং কল্যাণে আরও ২টি ক্লিনিক খোলা হয়েছিল। মার্কিন অনুদান বন্ধের জেরে তিনটি ক্লিনিকই এখন বন্ধ।
আরও পড়ুন -সিল্কিয়ারার থেকেও অবস্থা খারাপ, ৭ দিন পরও তেলাঙ্গানার সুড়ঙ্গে আটকে ৮ শ্রমিক!
মিত্র ক্লিনিকের সঙ্গে জড়িত ট্রান্স হেলথ এক্সপার্ট রচনা জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানুয়ারি মাসের একেবারে শেষে অনুদান বন্ধের ঘোষণা করার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে ক্লিনিক। ‘আমাদের জানানো হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিনিকের জন্য ফান্ডিং বন্ধ করে দিয়েছেন। তারপর থেকেই ক্লিনিক বন্ধ রয়েছে।’মিত্র ক্লিনিকের সঙ্গে যুক্তদের থেকে জানা গিয়েছে, হায়দরাবাদের মিত্র ক্লিনিকে ৭ জন কাজ করতেন। তাঁরা ১৫০ থেকে ২০০ জন এলজিবিটিকিউআইএ-র সদস্যদের প্রতি মাসে পরিষেবা দিয়ে থাকেন। হঠাৎ করে এই সব ক্লিনিক বন্ধের জেরে ওই সব ট্রান্সজেন্ডাররা তো কাজ হারালেনই, পাশাপাশি পরিষেবা নিতে যাঁরা ক্লিনিকে আসছিলেন তাঁদেরও সমস্যা বেড়েছে। এদের মধ্যে অনেকেরই এইচআইভি পজিটিভ। ক্লিনিক বন্ধের জেরে তাঁদের চিকিৎসা নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে।
২০২৪ সালের জুন মাসের তথ্য অনুযায়ী, হায়দরাবাদের দেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার ক্লিনিকে নাম নথিভুক্ত করিয়েছিলেন ৪ হাজার ৯০০ জন। এরমধ্যে ৬ শতাংশ ছিলেন এইচআইভি পজিটিভ। এই ক্লিনিক বন্ধের পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিত্র ক্লিনিকের এক চিকিৎসক বলেছেন, ‘মিত্র ক্লিনিকে আমরা দারুণ কাজ করেছি। সেখানে যা সাফল্য অর্জন করেছি, তার জন্য আমি গর্বিত।’
আরও পড়ুন -সিল্কিয়ারার থেকেও অবস্থা খারাপ, ৭ দিন পরও তেলাঙ্গানার সুড়ঙ্গে আটকে ৮ শ্রমিক!
যুদ্ধের জন্য মিত্র দেশকে অস্ত্র জোগানো থেকে আফ্রিকার গরিব দেশের মানুষের উন্নয়ন, বিভিন্ন খাতে বিশ্বের নানা দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান পেয়ে থাকে। একাধিক মার্কিন প্রেসিডেন্টের শাসন কালে আর্থিক সাহায্যের এ রকম বিভিন্ন প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে বিশ্বের অনেক দেশকেই। এবার সব ধরনের অনুদান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।ট্রাম্প গত জানুয়ারিতে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে সমস্ত বিদেশি সাহায্যে ৯০ দিনের জন্য বিরতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই পর্যালোচনার উদ্দেশ্য হল মার্কিন করদাতাদের অর্থে পরিচালিত প্রকল্পগুলি তাঁর 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নিশ্চিত করা। এই আদেশের পর 'স্টপ ওয়ার্ক' নির্দেশ জারি করা হয়, যা ইউএসএআইডি-কে চরম অস্থিরতার মধ্যে ফেলে দেয়। ফলে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই সংস্থার কার্যক্রম থমকে যায়। ট্রাম্প তাঁর উপদেষ্টা এবং বিলিয়নেয়ার ইলন মাস্ককে এই সংস্থাটি ভেঙে ফেলার দায়িত্ব দিয়েছেন। তাঁরা দুজনেই এই সাহায্যকে অপচয় এবং তহবিলের অপব্যবহার বলে সমালোচনা করেছেন।