মৃতদের যথাযথ সম্মানের সঙ্গে শেষকৃত্য সম্পন্ন করায় নজির গড়েছেন তামিলনাডুর সমাজকর্মী পি মণিমারান। গত বুধবার ভেলোর সরকারি হাসপাতালের পাঁচটি বেওয়ারিশ দেহের সত্কার করার পরে মোট ১০০৮টি শেষকৃত্য সম্পূর্ণ করার রেকর্ড গড়লেন বছর তেত্রিশের যুবক।বেশ কিছু দিন ধরে ভেলোর সরকারি হাসপাতালের মর্গে পড়েছিল ওই পাঁচটি দেহ। এক মহিলা-সহ মৃতদের সকলেরই বয়েস ৬৫ বছরের বেশি ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন জোগাড় করে পালার নদীতীরে ওই পাঁচটি দেহ সমাধিস্থ করা হয়।২০০২ সাল থেকে বেওয়ারিশ মৃতদেহ সত্কারের কর্মযজ্ঞ শুরু করেন মণিমারান। মাদার টেরেসাই তাঁর অনুপ্রেরণা, জানিয়েছে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা যুবক। ১৮ বছর বয়সে কলকাতায় মাদারকে দেখতে এসে তিনি খুব কাছ থেকে মিশনারিজ অফ চ্যারিটির সিস্টারদের সমাজসেবামূলক কাজকর্মের সঙ্গে পরিচিত হন।সেই সেবার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে তিনি মৃতদেহের যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে সত্কারের কাজ শুরু করেন। তাঁর এনজিও সংস্থা ওয়াপ্ল্ড পিপল’স সার্ভিস সেন্টার আপাতত গোটা তামিলনাডু ছাড়াও দেশের ১৭টি রাজ্যে এই কাজ করে চলেছে।মন্দিরনগরী তিরুবান্নামালাইয়ের কাছে থালায়ামপাল্লাম গ্রামের এক কৃষক পরিবারের সন্তান মণিমারান অষ্টম শ্রেণির পরে আর স্কুলের চৌকাঠ মারাননি। তবে তাঁর সেবামূলক কাজের জন্য ২০১৫ সালের স্বাধীনতা দিবসে তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার থেকে পেয়েছেন তামিলনাডু সরকারের রাজ্য যুব পুরস্কার। ওই বছরেই পেয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের পুরস্কার এবং আরও কিছু স্বীকৃতি।মণিমারান জানিয়েছেন, শৈশবে মৃতদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পাঠ প্রথম পেয়েছিলেন বাবা পাণ্ডুরঙ্গনের থেকে। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমাদের গ্রামে কুষ্ঠ আক্রান্তদের দেহ কখনও গোরস্থানে সমাধিস্থ করা হত না। তাদের সকলেই মৃণা করেন এবং দেহগুলি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আসা হত। আমাদের চাষের জমি ছিল জঙ্গলের একেবারে পাশে। একদিন সকালে বাবা দেখতে পান, এমনই একটি দেহকে বন্য পশুরা খুবলে বিকৃত করেছে। একটি গভীর কবর খুঁড়ে এর পর তিনি দেহটি সমাধিস্থ করেন। বাবা বলতেন, মৃতদের যথাযোগ্য সম্মান প্রাপ্য।’দেহ সত্কারের জন্য কোনও আর্থিক সাহায্য নেয় না মণিমারানের সংস্থা। বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা বেওয়ারিশ দেহের খবর পেলেই এনজিওর প্রধান দফতরে খবর দেন। তার পর জরুরি কাগজপত্র জোগাড় করার পরে দেহটি সম্মানের সঙ্গে সমাধিস্থ করা হয়।কোথা থেকে টাকা জোগাড় করেন মণিমারান? তিনি জানিয়েছেন, নিজের টি-শার্ট ও কুর্তা বিক্রির ব্যবসা থেকে লাভের ৯০% সমাজসেবার কাজে ব্যয় করেন। তাঁর দাবি, এই সংস্থান আছে বলেই কারও কাছে তিনি সমাজসেবার জন্য অর্থ সাহায্য চান না।