জল ছাড়া একদিনও কাটানো সম্ভব নয়। আপনি হয়তো একদিন ভাত না খেয়ে থাকতে পারবেন। কিন্তু, জল ছাড়া একদিন ভাবা যেন কল্পনার অতীত। কিন্তু, স্বাভাবিক নিয়মানুযায়ী যা কিছু সহজে পাওয়া যায় তাই আমরা অপচয় করি, নষ্ট করি। জল হল এমনই এক জিনিস। যা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। তাই জলের গুরুত্ব জানলেও আমরা এর অপচয় করি।কিছু মানুষের ভুলে প্রচুর পরিমাণে জল নষ্ট ও দূষিত হয়। যতটুকু জল আছে তা হয়ত আর্সেনিক যুক্ত। পানের অযোগ্য। আগে কলের জল, পুকরের জল, নদীর জল, মানুষ প্রাণ ভরে খেতে পারত। কিন্তু, বর্তমানে মানুষের ভুলেই তা হয়েছে দূষিত। ভাবা যায়! এখন বেশিরভাগ মানুষই দাম দিয়ে জল কিনে খায়। কিন্তু, সেই জলও কি আদৌ সুরক্ষিত?বেঁচে থাকার জন্য জল অতি আবশ্যক। বিশুদ্ধ পানীয় জলের প্রয়োজন কতখানি তা কি আমরা সত্যই বুঝি?ধীরে ধীরে কমছে ভূ-গর্ভস্থ জলের পরিমাণ। কলকারখানা, চাষাবাদ ও অন্যান্য গৃহস্থালীন প্রয়োজনে মাটির নীচের জল তোলা হচ্ছে। শেষ হয়ে যাচ্ছে মাটির নিচের জল। বাড়ছে সমস্যা। তাই সংকটের বার্তা দেওয়ার জন্যে প্রতি বছর পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব জল দিবস। কেন এই দিনটিকে চিহ্নিত করা হল জল দিবসের জন্যে? কবে থেকেই বা পালিত হয় এই দিন? একটু ইতিহাস ঘেটে জেনে নেওয়া যাক। জল দিবসের ইতিহাসসালটা ১৯৯২, ২২ ডিসেম্বর, ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে রাষ্ট্রসংঘে পরিবেশ নিয়ে সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সময়ই বিশ্ব জল দিবস পালনের প্রস্তাবটি ওঠে রাষ্ট্রসংঘে। তা গৃহিতও হয়। তারপর, ১৯৯৩ সালের ২২ মার্চ থেকে সমস্ত বিশ্বে জল দিবস হিসেবে উদযাপিত হতে থাকে।দিন পালনের তাৎপর্যধরুন, একদিন ঘুম থেকে উঠে আপনি দেখলেন কোথাও জলের নামগন্ধ নেই। দাম দিয়েও হয়ত পাওয়া যাচ্ছে না। কেমন হবে? এই দিন আসতে আর বেশিদূর নয়। পৃথিবী থেকে দ্রুত নিঃশেষিত হচ্ছে জল। এই জল বাঁচানোর জন্য কিছু তো ব্যবস্থা নেওয়া দরকার! বিশেষজ্ঞরা হয়ত এর অনুমান আগে থেকেই করেছিলেন। তাই এই দিনটিকে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্যই পালন করা হয়। সচেতনতা না বাড়ালে আর হয়ত সেই দিন দূরে নয় যখন জলের জন্য আমাদের কাঁদতে হবে।এ বছরের থিম কী?প্রতি বছরেই এই দিনটিতে রাষ্ট্রসংঘ কোনও বিশেষ থিম বেছে নেয়। এই বছর জল দিবসের থিম হল ভূ-গর্ভস্থ জল। এর প্রাথমিক লক্ষ্য হল ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য পরিশুদ্ধ পানীয় জল ও স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা করা। জলের অপচয়ের কারণে কমছে বিশুদ্ধ জলের মাত্রা। সেই কারণে জলের ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে বলেন, ‘বিশ্ব জল দিবসে আসুন জলের প্রতিটি ফোঁটা সংরক্ষণ করার জন্য আমার অঙ্গীকারবদ্ধ হই। জল সংরক্ষণ এবং নাগরিকদের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য ‘জলই জীবন’ মিশনের মতো অসংখ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’রাষ্ট্রসংঘের তরফ থেকে নিরাপদ পৃথিবী তৈরির জন্য কয়েকটি লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল। তার মধ্যেই ছিল জল সমন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি। আর সেই উদ্দেশ্যেই পালিত হয় প্রতিবছর জল দিবস।এখনও সারা পৃথিবীতে ২০০ কোটি মানুষ বিশুদ্ধ জল থেকে বঞ্চিত। ফলে বিশ্ব জল দিবসে এটাই লক্ষ্য থাক, বিশ্বের জলসংকটকে অতিক্রম করা। মানবজাতিকে যেন সংকটের দিন না দেখতে হয় তাই সচেতন নাগরিক হিসেবে এই দিন পালন করুন।