পবনপুত্র হনুমান ছিলেন একজন ব্রহ্মচারী। তিনি আজীবন ব্রহ্মচর্য পালন করেছেন। বাল্মিকী রামায়ণে তার পুত্র ছিল এমন কোন তথ্য নেই। তবে প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অঞ্চলগুলোতে প্রচলিত রামায়ণের সংস্করণে হনুমানের পুত্র আছে এমন কথা প্রচলিত আছে।
রাবণের স্বর্ণের লঙ্কা হনুমান তার লেজের আগুন দিয়ে জ্বালানোর পর সেই আগুন নেভাতে সমুদ্রে যান। প্রচণ্ড গরমে তার শরীর থেকে ঝরে পড়া ঘাম সামুদ্রিক প্রাণী মকর -এর মুখের ওপর পড়ে।
এভাবে মকরের গর্ভে আসে এক শিশু। পাতাল লোকের অধীশ্বর রাবণের পুত্র অহিরাবণের সেনাদের হাতে সেই মকর ধরা পড়ে। পরে তারা মকরটির পেট চিড়ে ফেললে শিশুটিকে আবিস্কার করে। তখন তার নাম দেওয়া হয় মকরধ্বজ।
এই মকরধ্বজ পরবর্তীতে প্রাপ্তবয়স্ক হলে অহিরাবণ তার সাহস ও শক্তির প্রমাণ পেয়ে পাতাল লোকের প্রবেশপথের রক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেন।
পরবর্তীতে রামচন্দ্র রাবণের স্বর্ণের লঙ্কা আক্রমণ করলে অহিরাবণ রাম ও লক্ষ্মণকে অপহরণ করেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, দেবী মহামায়ার সামনে তাদের দু'জনকে বলি দেবেন।
এদিকে রাম ও লক্ষ্মণকে খুঁজতে পাতাল লোকে আসেন হনুমান। পাতাল লোকের দ্বারে দেখা হয় অর্ধেক বানর অর্ধেক সরীসৃপ মকরধ্বজ -এর সঙ্গে।
তাঁর পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, 'আমি হনুমান পুত্র মকরধ্বজ!' শুনেই চমকে ওঠেন হনুমান। পরে ধ্যান করে তিনি সব সত্য জানতে পারেন।
কিন্তু পাতাল লোকে যেতে বাধা দেন মকরধ্বজ। কারণ, অহিরাবণ তার শিক্ষক, তার দেওয়া দায়িত্ব থেকে তিনি সরে আসবেন না। তখন হনুমান তাকে পরাজিত করে বেঁধে ফেলেন। এরপর রাম লক্ষ্মণকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
ফেরার পথে রাম মকরধ্বজকে দেখতে পান। তিনি হনুমানের কাছে বিস্তারিত শুনে তাঁকে মুক্ত করেন এবং পাতাললোকের রাজা হিসেবে অভিষিক্ত করেন।
ক্ষত্রিয় বর্ণের জেঠওয়া ( বা জেথওয়া) বংশের লোকেরা দাবী করে, তারা মকরধ্বজের বংশধর। তারা হনুমানকে 'ইষ্টদেবতা' হিসেবে পূজা করে। ভারতের গুজরাট এলাকায় মকরধ্বজের মন্দির আছে।