রাজ্যবাসীর মাথার উপর ছাদ নিশ্চিত করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে চালু হয়েছে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প। কেন্দ্রীয় বঞ্চনা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার এই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করেছে। ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় কিস্তির টাকা ছেড়েছে রাজ্য সরকার। জেলা প্রশাসন সমীক্ষা করার পর কাঁচা বাড়িতে বসবাসকারী পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করে বাড়ি তৈরির জন্য আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, আধিকারিকরা প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনায় যেতেই উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য।
আরও পড়ুন: ‘বাংলার বাড়ি’ নিয়ে গড়িমসি নয়, কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ নবান্নের
জানা যাচ্ছে, প্রথম দফায় টাকা পাওয়ার পর বহু উপভোক্তা এখনও বাড়ি নির্মাণ শুরুই করেনি। সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হল, অন্তত ১৭টি পরিবার টাকা তোলার পর উধাও। এলাকায় গিয়ে তাঁদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসনের তরফে বহু চেষ্টা করেও তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ওই পরিবারগুলিকে খুঁজে বার করতে শুরু হয়েছে তল্লাশি।
এছাড়াও, প্রায় ১২৬টি পরিবার টাকা তোলার পরেও কোনও কাজ না করায় প্রশাসন তাদের কাছ থেকে টাকা ফিরিয়ে নিয়েছে। আরও ৬০টি পরিবারের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রশাসন তাদের চূড়ান্তভাবে নির্দেশ দিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু না করলে অর্থ ফেরত দিতে হবে। কেউ টাকা ফেরত না দিলে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ ও এফআইআর করা হবে বলেও কড়া ভাষায় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। পূর্ব বর্ধমানে এমনই তথ্য সামনে এসেছে।
এবিষয়ে পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েশা রানি জানিয়েছেন, সরকারের উদ্দেশ্য টাকা ফেরত নেওয়া নয়। যাঁরা প্রকৃত অর্থে বাড়ি তৈরি করছেন, তাঁদের পাশে আছে সরকার। কিন্তু, যাঁরা অন্য উদ্দেশ্যে এই টাকা ব্যবহার করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এই জেলায় এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ দেওয়া হয়েছে ৬৪ হাজার ৬৯৯টি পরিবারকে। যাঁরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রথম দফার কাজ সম্পন্ন করেছেন করেছে, তাঁদেরকেই দ্বিতীয় দফার টাকা দেওয়া হচ্ছে। উপভোক্তারা নিজেদের পরিকল্পনা মতো বাড়ি তৈরি করতে পারবেন।
প্রশাসন জানিয়েছে, নির্মাণ সামগ্রী কোথা থেকে কেনা হবে, সেই সিদ্ধান্তও উপভোক্তাদের উপরেই। তবে এই প্রকল্পকে ঘিরে কিছু প্রভাবশালী ও অসাধু ব্যক্তির বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে। জামালপুর ও কাটোয়া মহকুমা থেকে এমন বেশ কিছু অভিযোগ প্রশাসনের কাছে জমা পড়েছে। ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। প্রায় আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও যারা নির্মাণ শুরু করেনি, তাঁদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। বহুবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কিছু উপভোক্তা কাজ শুরু না করে সময় অতিবাহিত করেছেন। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে থাকা এই প্রকল্পে অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে প্রশাসন।