জসপ্রীত বুমরাহকে আইপিএল ২০২৫-এর পার্পল ক্যাপ দৌড়ে খুঁজে পাওয়া কঠিন, কারণ প্রায় প্রতিটি দলই সিদ্ধান্ত নেয় তাকে ঠেকিয়ে খেলবে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তার চার ওভারে যে প্রভাব তিনি ফেলেন, তা মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জন্য বিশাল। আইপিএল ২০২৫-এ এখন পর্যন্ত খেলা সাত ম্যাচে বুমরাহ ৬৯টি বল করেছেন, প্রতি ম্যাচে গড়ে প্রায় ১০টি ডট বল করেছেন, যা ৮-এর নীচে ইকোনমি রেট থাকা বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। খলিল আহমেদ এবং জোশ হেজেলউডরা ডট বল শতাংশে বুমরাহর চেয়ে এগিয়ে থাকলেও, তারা প্রতিটি ম্যাচে ৮-এর বেশি রান দিয়েছেন প্রতি ওভারে, যেখানে বুমরাহর ইকোনমি রেট মাত্র ৬.৯৬।
এই বছর পিঠের চোটের কারণে প্রথম চারটি ম্যাচ মিস করার পর যখন থেকে বুমরাহ দলে ফিরেছেন, তখন থেকে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স তাদের সাতটির মধ্যে ছয়টি ম্যাচ জিতেছে এবং পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে এসেছে। প্রথম দুটি ম্যাচে বুমরাহ খুব একটা ছাপ ফেলতে পারেননি। RCB-র বিরুদ্ধে ২৯ রান দিয়ে উইকেটহীন ছিলেন এবং DC-র বিরুদ্ধে ৪৪ রান খরচ করেছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে তিনি দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বুমরাহ। শেষ দুটি ম্যাচে LSG এবং RR-র বিরুদ্ধে বুমরাহ ৮ ওভারে মাত্র ৩৭ রান দিয়ে ৬টি উইকেট শিকার করেছেন।
বুমরাহর এই পারফরম্যান্স এবং সব ধরনের ফরম্যাটে ভারতীয় বোলারের সামগ্রিক প্রভাব বিবেচনা করে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অ্যাডাম গিলক্রিস্ট জসপ্রীতকে ‘বোলিংয়ের স্য়ার ডন ব্র্যাডম্যান’ বলে অভিহিত করেছেন।
অ্যাডাম গিলক্রিস্ট বলেন, ‘সে হয়তো সব সময়ের সেরা ফাস্ট বোলার। যখন আপনি পরিসংখ্যান দেখেন এবং বুঝতে চান যে কোন কোন অবস্থায় ওকে নিজের স্কিল দেখাতে হয়, তখন মনে হয় ব্র্যাডম্যানের মতোই – যিনি অন্যদের তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিলেন – তেমনভাবেই বুমরাহও অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনে এবং পিচে যেভাবে সে বল করে, তাতে বোঝা যায় যে আমরা সত্যিই একজন কিংবদন্তিকে দেখছি।’
আরও পড়ুন … আইপিএল ২০২৫: প্লে-অফের দৌড় থেকে ছিটকে গেল CSK-RR! শেষ চারের লড়াইয়ে এগিয়ে কারা?
ব্র্যাডম্যান একমাত্র ক্রিকেটার যিনি প্রায় ১০০ গড় নিয়ে টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন। ১০ টেস্টের বেশি খেলা কোনও ব্যাটারই ৬৫-এর বেশি গড় ধরে রাখতে পারেননি। গিলক্রিস্টের মতে, বুমরাহও ধীরে ধীরে তার সমসাময়িকদের থেকে ঠিক তেমনই দূরত্ব তৈরি করছেন। গিলক্রিস্ট আরও বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ানরা কখনও কোনও ভারতীয় বোলারকে এত ভয় বা শ্রদ্ধা করেনি যতটা বুমরাহকে করছে।’
আরও পড়ুন … হার্দিক ও সূর্যভাই শেষের দিকে যেভাবে গিয়ার বদলেছে… RR vs MI ম্য়াচ হারের কারণ জানালেন রিয়ান পরাগ
বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে বুমরাহ অস্ট্রেলিয়ার জন্য কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ভারত সিরিজটি ১-৩ ব্যবধানে হেরে গেলেও বুমরাহর দুর্দান্ত বোলিং বারবার অজি ব্যাটারদের বিপদে ফেলেছিল। গিলক্রিস্ট বলেন, ‘একজন ভারতীয় পেসার হিসেবে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক সিরিজে, বুমরাহর মতো ধারাবাহিক পারফরমার আগে আমরা দেখিনি। আমরা ধারাভাষ্য দিতে দিতে সামনে থেকে দেখে অবাক হয়ে গেছিলাম – ও নিঃসন্দেহে সব ফরম্যাটে সেরা বোলার।’
আরও পড়ুন … এটাই ক্রিকেট, এখান থেকেই ও শিখবে… শূন্য করলেও বৈভবের প্রশংসায় রোহিত-শাস্ত্রী
ভারতের প্রাক্তন স্পিনার মুরলী কার্তিক বলেন, ‘ও একজন জাতীয় সম্পদ। যারা ক্রিকেট ভালোবাসে এবং চায় ভারত জিতুক, তারা সকলেই BGT-তে চেয়েছিল যেন বুমরাহ দুই দিক থেকেই বল করতে পারেন। ওর সবচেয়ে বড় গুণ হল খুব দ্রুত পিচের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া। অন্য বোলারদের একটা নির্দিষ্ট লেংথ থাকে, কিন্তু বুমরাহ প্রতিটি পিচ অনুযায়ী সঠিক লেংথে বল করে। ওর অ্যাকশনের অদ্ভুততা নিয়ে অনেকে বলে, কিন্তু তার সঙ্গে যে স্কিল আর ক্রিকেট মস্তিষ্ক রয়েছে, সেটা ওকে অনন্য করে তোলে।’