এ বছর ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পুজো। বাংলায় বিশ্বকর্মা পুজোর সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি। মনে করা হয়, বিশ্বকর্মা হ🔴লেন সব কলকারখানা, শিল্প, কর্মযজ্ঞের দেবতা। কিন্তু বাংলায় বিশ্বকর্মার যে রূপ, তার সঙ্গে পার্থক্য আছে ভারতের অন্যত্র বিশ্বকর্মার রূপের। এমনকী বাহনও আলাদা।
বিশ্বকর্মার দু’টি রূপ।
একটি বৃদ্ধরূপ। পাকা চুল। পাকা দাড়িগোঁফ, হাতে অক্ষমালা, কমণ্ডলু, বই ধরে আছেন তিনি। তাঁর বাহন হাঁস। অনেকটা ঠিক ব্রহ্মার মতো দেখতে ত🐼াঁকে। এই রূপেই ভারতের বেশির 𓂃ভাগ জায়গায় রয়েছেন তিনি।
আর বাংলায় তার রূপ একদম আলাদা। তিনি তরুণ। চার হাতে হাতুড়ি, বাটালি, কুঠার, দাঁড়িপাল্লা ধরে আছেন। এই বিশ্বকর্মার বাহন হাতি। তাঁকে দেখতে কার্তিক ঠাকﷺুরের মতোই। এই দ্বিতীয় ধরনের মূর্তি সাধারণত বাংলাতেই প্রচলিত।
এছাড়াও বিশ্বকর্মার আর এক রূপবর্ণনা ▨‘বশিষ্ঠপুরাণ’ নামে এক উপপুরাণে পাওয়া যায়। এখানে তাঁর পঞ্চমুখ এবং দশ বাহু। বিশ্বকর্মার এই পঞ্চমুখের নাম সদ্যোজাত, বামদেব, অঘোর, তৎপুরুষ ও ঈশান। এই বিশ্বকর্মার বাহনও হংস। এই বিশ্বকর্মা বলতে সর্বশক্তিমান পরমেশ্বরকে বোঝানো হয়। আবার পাঁচটি মুখের নামকরণ দেখে তাঁর সঙ্গে শিবের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
শুধু চেহারার পার্থক্যই নয়, বাঙালির বিশ্বকর্মা স্বতন্ত্র পুজো এবং রীতিতেও। দক্ষিণ ভারতে দেবশিল্পীর পুজো হয় তিথি মেনে, মহানবমীর দিন। উত্তর ও পশ্চিম ভারতে দিওয়ালির পরের দিন বিশ্বকর্মা পুজো হলেও বাংলায় এই পুজো সৌর ক্যালেন্ডার মেনে হয়। সূর্যের কন্যা রাশিতে প্রবেশ করার দিন (সাধারণত ১৭ সেপ্টেম্বর) পূজিত হন বিশ্বকর্মা। বাকি ভারতের থেকে আলাদাꦰ হয়ে বাংলায় তাঁর পুজো মানে ঘুড়িরꩵ উৎসবও!
ঔপনিবেশিক আমল থেকেই গঙ্গার দু’পারে চটকল এবং শিল্পতালুকগুলিতে বিশ্বকর্মা পুজোর রমরমা বেড❀়েছিল। সেই উৎসব ধর্মীয় আঙিনা ছেড়ে সামাজিক উৎসবে মিশে গিয়েছিল। ব্যারাকপুর, নৈহাটির বন্ধ হওয়া চটকলের বহু অহিন্দু শ্রমিকও এই উৎসবে যোগ দিতেন।
এর সঙ্গে মিশে যায় আরও একটি রীতি। ঘুড়ি ওড়ানো। অনেকে মনে করেন, পশ্চিম ভারতে মকর সংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়ে। এ রাজ্যেও কোথাও কোথাও মকর সংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়ানোর রেওয়াজ রয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলায় বর্ষা বিꩲদায়♏ের অঙ্গ হিসেবে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব ভাদ্র শেষে শরতের আগমনের সূচনা হয়ে ওঠে। অনেকেরই ধারণা, সেটিই বিশ্বকর্মা পুজোর সঙ্গে মিশে গিয়েছে।
কিন্তু এ রাজ্যে বিশ্বকর্মার স্বতন্ত্র চেহারার ক🦂ারণ কী? স্থানীয় দেবতা হিসাবে তাঁর চেহারার বদল তো হয়েছেই, পাশাপাশি অনেকেই মনে করেন এর সঙ্গে মূর্তি নির্মাণেরও যোগ আছে। বিশ্বকর্মা পুজোর পরেই যেহেতু দুর্গাপুজো হয়, তাই সেখানে কার্তিক ঠাকুরের যে রূপ দেখা যায়, তা যেন অনেকটাই বিশ্বকর্মার আদলে। কারও কারও মতে, চেহারা আলাদা হলেও দুই ক্ষেত্রে মুখাবয়ব একই ছাঁচে ঢেলে নির্মিত। আর সেই কারণেই মূর্তি শিল্পীদের কল্পনায় সারা ভারতের বৃদ্ধ বিশ্বকর্মা বাংল🐷া হয়ে যান যুবক।