কালিয়াচক হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্তকে জেরা করতেই মিলল নয়া মোড়। আসিফের বাড়ি থেকেই মꦅিলল ৫টি সেভেন এমএম পিস্তল এবং ৮৪ রাউন্ড কার্তুজ। আর আটক করা হয়েছে আসিফের দুই বন্ধু সাবির আলি ও মহফুজ শেখকে। এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে তাদের হাত রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে। এমনকী আরও সন্দেহভাজন ১৫ জনের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ বলে খবর। বাবা, মা, বোন ও ঠাকুমার খুনি মহম্মদ আসিফকে জেরা করতেই বেরিয়ে আসে একাধিক অসঙ্গতি।
পুলিশ সূত্রে খবর, সাবির আলি এবং মহফুজ শেখ আসিফের বহুদিনের বন্ধু। এই মহফুজকে জেরা করেই জানা গিয়েছে, আসিফ ল্যাপটপ, কম্পিউটার অনেক যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করত। নিজের দোতলার ঘরে কাউকে ঢুকতে দিত না। আসিফের হাতে কোনওদিন টাকা দেখা যায়নি। আর নিজের ঘর থেকেও সে বিশেষ বেরত না। বাড়িতে রাতের বেলা মিস্ত্রীর কাজ করত আসিফ। তদন্তকারীদের অনুমান, তখনইཧ ওই সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছিল।
আসিফের ওই দুই বন্ধুর বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। আর তাতেই সন্ধান মেলে বিরাট অস্ত্র🉐ভান্ডারের। ওই দু’জনের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে ৫টি ৭ এমএম পিস্তল, ৮৪ রাউন্ড গুলি এবং ১০টি ম্যাগাজিন। সাবির আলির বয়ানে অনুযায়ী, বেঙ্গালুরুতে নার্সিং নিয়ে পড়াশোনা করে সেไ। স্কুল থেকেই বন্ধু ছিল সাবির। তিন চারটি মোবাইল ছিল আসিফের। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফোনে ফোন আসত। তবে বন্ধুদের সামনে আসিফ ফোন ধরত না। পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার পরও আর নতুন করে পড়াশোনা করতে চায়নি আর। সাবিরের কথায়, নমাজ পড়ার কথা বললে আসিফ বলত, নমাজ পড়ে কী হবে! আমি টাকা পাব! আসিফের কথা শুনে মনে হত, ওর খুব টাকার দরকার। পুলিশের অনুমান, তাহলে কী জঙ্গি সংগঠনে নাম লিখিয়েছিল আসিফ? এভাবেই কি টাকা রোজগার করতে চেয়েছিল সে? সেটা জানতে পেরেছিল পরিবারের সদস্যরা বলেই খুন হতে হল? তদন্ত শুরু হয়েছে।
এখন ꧅প্রশ্ন উঠছে, কোথা থেকে ওই বিপুল অস্ত্র তাদের কাছে এল তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। কেন ওইসব অস্ত্র মজুত করা হয়েছিল? খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মাধ্যমিকের পর থেকে সায়েন্স নিয়ে পড়ার পরিকল্পনা করে আসিফ। এমনকী মাধ্যমিকের পর থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল, কম্পিউটার কেনার জন্য বাড়িতে চাপ দিয়েছিল আসিফ। প্রায় ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সম্প্রতি ইনভার্টারও কিনেছিল♔ আসিফ। মাঝেমধ্যেই বন্ধুদের বাড়িতে ডেকে এনে পিকনিক করত আসিফ। আসিফ ও তার দাদা আরিফকে কোনওদিনই একসঙ্গে দেখেনি কেউ। আসিফ বা আরিফকে জিজ্ঞেস করলে দু’জনেই বলত, বাড়ির সকলে বাইরে আছেন। ভাল আছেন। সময় হলেই ফিরবেন।
প্রতিবেশীদের দাবি, গত কয়েক মাস ধরে আসিফের বাবা, মা, বোন এবং ঠাকুমাকে পাড়ায় দেখা যাচ্ছিল না🦂। বাড়ির ছোট ছেলে মহম্মদ আসিফ ওরফে হান্নান স্কুলের গণ্ডিও পেরোননি। ওই বাড়িতে একা থাকত সে। কয়েকদিন ধরে আসিফের গতিবিধি দেখে সন্দেহ হচ্ছিল। তখন খবর দেওয়া হয় থানায়। শেষপর্যন্ত বাড়ির জলের ট্যাঙ্ক থেকে পরিবারের চারজনেরই মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কালিয়াচক থানার পুলিশ সূত্রে খবর, সাইবার জালিয়াতি, অপহরণের জন্যেও আসিফকে আটক করেছিল পুলিশ। আসিফ ও তার বন্ধুরা নিজেরাই নিজেদের অপহরণ করে আসিফের বাবার থেকে আড়াই লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছিল। পরে তারা ধরাও পড়ে। হ্যাকারদের সঙ্গেও আসিফের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এই ঘটনায় সাবিরও যুক্ত।
এখানেই শেষ নয়, পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, ২৮ ফ্রেরুয়ারি দুপুরে ঠাণ্ডা পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বাবা, মা, দাদা, বোন এবং ঠাকুমাকে খাওয়ায় আসিফ। সবাই অচৈতন্য হয়ে পড়েন। এরপর তাঁদের হাত–পা বেঁধে দেওয়া হয়, সেলোটেপ লাগিয়ে দেওয়া হয় মুখে। হত্যাকাণ্ডের আগে বাড়ির গুদাম ঘরඣে একটি চৌবাচ্চা তৈরি করে আসিফ। জলও জমিয়েছিল সেই চৌবাচ্চায়। যাতায়াতের জন্য তৈরি করে সুড়ঙ্গও! ঘটনার দিন সুড়ঙ্গ পথেই পাঁচজনকেই আনা হয়। চৌবাচ্চায় ফেলে দেওয়া হয় তাঁদের। কিন্তু আসিফের দাদা আরিফের জ্ঞান ফিরে আসায় পালিয়ে যায় সে।