দৃশ্য এক—সালটা ২০১৩। তারিখ ৭ জুন। বুধবার ছিল সেদিন। বৃষ্টি নেমেছিল বাংলায়। ওই দিন বিকেলে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ডিরোজিও কল🌠েজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। কামদুনি বাসস্ট্যান্ডে তাঁকে নিতে তাঁর ভাইয়ের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আসতে দেরি করেছিলেন। তাই ওই তরুণী একাই বাড়ির ফেরার পথ ধরেন। কিন্তু ফেরা হয়নি। কারণ ওই তরুণীকে টেনেহিঁচড়ে পরিত্যক্ত একটি মাঠে নিয়ে যায় ৯ দুষ্কৃতী। ꦜসেখানে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়। মাঝরাতে ওই মাঠে মেলে তরুণীর ব্যাগ। আর মেলে ওই তরুণীর ছিন্নভিন্ন দেহ। লাগাতার ধর্ষণ করার পর দুষ্কৃতীরা তাঁর দেহ চিরে দেয় নাভি পর্যন্ত। এই ঘটনায় কেঁপে ওঠে বাংলা।
দৃশ্য দুই—তার পরদিন থেকে আগুন জ্বলে ওঠে কামদুনি গ্রামে। তুমুল আন্দোলন শুরু হয়। সরকারের দরজা থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন এবং আদালতের দরজায় বিচারের আশায় লড়াই করেন টুম্পা–মৌস꧋ুমী কয়ালরা। ২০১৩ সালের ৯ জুন কামদুনি কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত আনসার আলি মোল্লা–সহ তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নিহত তরুণীর সহপাঠী টুম্পা কয়াল এবং মৌসুমী কয়াল। এই ঘটনায় তপ্ত হয়ে ওঠে বিধানসভা। তখন গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং বসিরহাটের তৎকালীন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ হাজি নুরুল ইসলাম। ওই বছরের ১০ জু🌜ন কামদুনি কাণ্ডের তদন্তভার দেওয়া হয় সিআইডিকে। তারপর গ্রেফতার করা হয় মোট ৯ জন অভিযুক্তকে।
দৃশ্য ꦯতিন—২০১৩ সালের ১৭ জুন কামদুনিতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিশ্রুতি দেন ১৫ দিনের মধ্যে ধৃতদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবে পুলিশ। রাজ্য সরকার দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করবে। নির্যাতিতা তরুণীর পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কামদুনির প্রতিবাদ মঞ্চ আন্দোলন চালিয়ে যায় ওই মঞ্চ। ২০১৩ সালের ২৯ জুন জেলা আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়। ১০ দিন পর দেওয়া হয় অতিরিক্ত চার্জশিটও। তারপর গ্রেফতার করা হয়েছিল সইফুল আলি মোল্লা, আনসার আলি মোল্লা, আমিন আলি, ইমানুল হক, গোপাল নস্কর, ভোলা নস্কর, আমিনুর ইসলাম, রফিক গাজি এবং নুর আলিকে। তার মধ্যে হেফাজতে থাকাকালীন মৃত্যু হয় গোপাল নস্করের। যেখানে গণধর্ষণ করা হয়েছিল, সেখানকার কেয়ারটেকার ছিল গোপাল।
দৃশ্য চার—২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর সমাপ্ত হয় কামদুনি কাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া। আড়াই বছর পর ২৮ জানুয়ারি রায় ঘোষণা হয়। দোষীদের মধ্যে আনসার আলি মোল্লা, সইফুল আলি এবং আমিন আলিকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়। আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় শেখ ইনামুল ইসলাম, ভোলানাথ নস্কর এবং আমিনুর ইসলামকে। কামদুনি মামলার রায় তখন ঘোষণা করেন ꧙নগর দায়রা আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়꧙রা বিচারক সঞ্চিতা সরকার। বেকসুর খালাস করা হয় রফিক গাজি এবং নুর আলিকে।
দৃশ্য পাঁচ—আজ, শুক্রবার ২০২৩ সালের ৬ অক্টোবর। কলকাতা হাইকোর্ট অভিযুক্তদের মধ্যে তিন জনের ফাঁসির সাজা মকুব করল। আরও তিনজনের যাবজ্জীবনের সাজা মকুব করল। ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জনকে যাবজ্জীবন সাজার কথা শোনায় আদালত। বাকিদের ছাড়ার কথা জানানো হয়। তাই কামদুনির ঘটনায় রায় ঘোষণা হতেই হতাশায় ভেঙে পড়লেন মৌসুমী কয়াল এবং টুম্পা কয়ালরা। রাস্তাতেই বসে পড়ে কাঁদতে থাকেন তাঁরা। এমনকী জ্ঞানও হারান মৌসুমী। তব🐲ে টুম্পা–মৌসুমীরা জানান, তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন।
আরও পড়ুন: কামদুনির মৌসুমী–টুম্পারা কলকাত🍸া হাইকোর্টের রায়ে হতাশ, রাস্তায় শুয়ে কাঁদলেন
দৃশ্য ছয়—হতাশ টুম্পা আকাশের দিকে চেয়ে বলেন, ‘আমাদের বন্ধুর জন্য আমরা সেই ২০১৩ সাল থেকে লড়াই করছি। আমরা অনেক কিছু সহ্য করেছি। কিন্তু এত বছর অপেক্ষা করে কী হল! প্রমাণ হল এই রাজ্যে কোনও বিচার নেই। কিন্তু এখানে আমরা থেমে যাব না।’ আজ কামদুনি মামলার রায় শুনতে আসেন টুম্পা–মৌসুমীরা। কামদুনির ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত সইফুল আলি এবং আনসার আলি। যাদের ফাঁসির সাজা শুনিয়ে ছিল নিম্ন আদালত। সেখানে আজ তাদের সাজা বদলে গিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড শোনান বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচার🎃পতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ। আর এক ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আমিন আলিকে বেকসুর খালাস করা হয়। নিম্ন আদালতে আমৃত্যু জেলের সাজাপ্রাপ্ত ইমানুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম এবং ভোলানাথ নস্করেরও সাজা মকুব হয়ে গেল। ইতিমধ্যেই ১০ বছর জেলে খেটেছে তারা।