সিঙ্গুরে বিজেপি প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে হারিয়ে জিতে গেলেন বেচারাম ম🌼ান্না। ২৫ হাজার ৯৩৩ ভোটে জয়ী হলেন তৃণমূল প্রার্থী।
সিঙ্গুর কেন্দ্রে এবারে তৃণমূলের তরফে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বেচারাম মান্না। এই আসনে বিজেপির তরফে দাঁড়াচ্ছেন সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া সিঙ্গুরের রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। অন্য দিকে, বাম-কংগ্রেস-ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) তরফে এই কেন্দ্রে দাঁড়াচ্ছেন সিপিআইএমের সৃজন ভট্টাচারဣ্য।
আজ থেকে বছর ষোলো আগে সরকারের একটা সিদ্ধান্তে শান্ত সিঙ্গুরকে বদলে দিয়েছিল অগ্নিগর্ভে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে লড়াইয়ের পর সেই মাটিই লিখে দিল কৃষক বিদ্রোহের অন্য আখ্যান। একলাখি গাড়ি কারখানা, বহুফসলি জমিতেই হবে। সঙ্গে আছে ব্রিটিশ আমলের কৃষক-বিরোধী জমি অধিগ্রহণ আইন আর বিধানসভা ভোটে বিপুল জয়ের আত্মবিশ্বাস। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ভরসায় ২০০🀅৬’র মে মাসে সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা তৈরির কথা ঘোষণা করে টাটা। সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকরা জানিয়ে দেন, গায়ের জোরে বহুফসলি জমি অধিগ্রহণ তাঁরা মানবেন না। এর পরই শুরু হয় আন্দোলন। সিঙ্গুরের প্রতিবাদের মন বুঝতে দেরি করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে দাঁড়ালেন অনিচ্ছুক কৃষকদের। জমি না—দিতে চাওয়া মানুষগুলোকে জমিতে ফেলে বেধড়ক পেটাল পুলিশ। এরপর সিঙ্গুরের মাটিতে তাপসী মালিক আর রাজকুমার ভুলের মৃত্যু, কৃষক আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। সিঙ্গুরের বিডিও অফিস থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টেনে-হিঁচড়ে বের করে দেয় প্রশাসন। ফিরে এসে মেয়ো রোডে অবস্থানে বসেন তিনি। আড়াই মাস পর জোর করে জমি নেওয়ার প্রতিবাদে ধর্মতলায় তাঁর ২৬ দিনের অনশন সিঙ্গুরের আন্দোলনে মাইলফলক এঁকে দেয়।
২০০ꦚ৭-এর গোড়ায় কারখানা তৈরির কাজ শুরু করে টাটা। কলকাতা হাইকোর্ট রায় দেয়, সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণে ভুল করেনি বাম সরকার। সিঙ্গুরের সানাপাড়ায় ধর্নায় বসেন মমতা। ১৫ দিনের ধর্নায় অবরুদ্ধ হয় দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে। কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন টাটারা। রাজভবনে তত্কালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর মধ্যস্থতায় বুদ্ধদেব—মমতা মুখোমুখি বৈঠক হলেও তা ভেস্তে যায়।
এরপর আরও আড়াই বছর ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট সরকার। সিঙ্গুর সরণি বেয়েই মহাকরণে পৌঁছে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েই জানিয়ে দেন জমি ফেরাবেই তাঁর সরকার। জমি ফেরাতে ২০১১—র জুনে বিধানসভায় পাশ হল সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন ও উন্নয়ন বিল। টাটারা কলকাতা হাইকোর্টে গেলে সেপ্টেম্বরে সিঙ্গল বেঞ্চ রায় দেয়, সিঙ্গুর আইন বৈধ। সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় টাটা মোটর্স। ২০১২—র জুনে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গুর আইন অবৈধ বলে রায় দেয়। জমি ফেরাতে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের জন্য দুটাকা কিলো দরে চালের ব্যবস্থা হয়। তারপর ☂শুধুই অপেক্ষা। অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিল, সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ অবৈধ। অধিগৃহীত সব জমিই কৃষকদের ফিরিয়ে দিতে হবে। ক্ষমতায় আসার পর ঘন ঘন সিঙ্গুরে আসা ছেড়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আট বছর আগে এই সেপ্টেম্বরেই সিঙ্গুরের সানাপাড়ায় জোর করে জমি নেওয়ার প্রতিবাদে ধর্নায় বসেছিলেন মমতা। সেই একই জায়গায় এবার তিনি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মাথায় নিয়ে ফিরিয়ে দিলেন কৃষকের জমি। এত বছর ধরে যাঁরা ক্ষতিপূরণ নেননি তাঁদের হাতে চেক তুলে দেওয়া হয়।