করোনা আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার মౠৃত্যু হয়েছে সিটুর প্রাক্তর রাজ্য সম্পাদক, তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামল চক্রবর্তীর। শ্যামলের প্রয়াণে শ🌠োকস্তব্ধ রাজনৈতিকমহল। তবে শ্যামল চক্রবর্তী মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তাঁর একমাত্র মেয়ে অভিনেত্রী ঊষসী চক্রবর্তী। ছোটবেলায় মাকে হারানোর পর বাবার কাছেই বড় হয়েছেন তিনি।বাবার প্রয়াণের পর, শনিবার তাঁর স্মরণে দীর্ঘ ফেসবুক পোস্ট লিখলেন ঊষসী। সেখানে উঠে এল বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ না করতে পারার আক্ষেপ।
ঊষসী ফেসবুকে লেখেন তাঁর বাবার একটাই শেষ ইচ্ছা ছিল- তাঁর দেহ যাতে দাহ না করা হয়, পরিবর্তে দেহ মেডিকেল কলেজে দান করা হয় চিকিত্সা বিজ্ঞানের স্বার্থে। কিন্তু করোনা সেইটুকু ইচ্ছাও পূরণ করতে দিল না। কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন শ্যামালবাবু, স্বভাবতই প্রোটোকল ম💟েনে দাহ করতে হয়েছে দেহ, অঙ্গ দানের প্রশ্নই উঠে না।
অভিনেত্রীর কথায়, ‘বাবার শেষ ইচ্ছে ছিল একটাই। তাঁর দেহ যাতে দাহ ꦆকরা না হয়। মিছিল করে যেন নিয়ে যাওয়া হাসপাতাল। প্রিয় কমরেড অনিল বিশ্বাসের মত যেন চিকিতসকা বিজ্ঞানের স্বার্থে দান করা হয় মরদেহ। শতরূপ আর বিপুলদাকে বারবার করে বলে রেখেছিলেন ‘আমার মেয়ে যদি অন্য কিছু বলে তোমরা শুনবে না। দাহ করবে না। সোজা মেডিকেল কলেজ নিয়ে যাবে’। আমার ‘অন্য কিছু’ বলার প্রশ্ন ছিল না। আমি জানতাম গোটা কলকাতায় মিছিল করে, ইন্টারন্যাশানাল গাইতে গাইতে কোনও একদিন আমরা বাবাকে মহা সমারোহে মেডিকেল কলেজ নিয়ে যাব অন্তিম যাত্রায়। কিন্𝓡তু কোভিড তা হতে দিল না'।
পাশাপাশি ঊষসী লেখেন, তাঁর বাবার শেষ ইচ্ছাটা চিকিত্সা বিজ্ঞানের কাছে বেশ কিছু প্রশ্নও রেখে গেল। কী সেই প্রশ্ন? ‘মৃতদেহে একটি ভাইরাস সত্যিই কতক্ষণ বাঁচতে পারে এই নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য কি আছে? চিকিতসাবিজ্ঞানꦜে কি এই নিয়ে কোনও গবেষণা হয়েছে? যদি না হয়ে থাকে করা হোক। এমন যদি প্রমাণ হয় মৃতদেহে কয়েক ঘন্টা বা কয়েক মুহূর্তের পরে ভাইরাস আর বেঁচে থাকতে পারে না, তাহলে সেই সময়টুকু মৃতদেহ হাসপাতালে সংরক্ষিত রেখে, দরকার হয় প্যাকিং করেই তা তুলে দেওয়া হোক পরিবারের হাতে। সচেতনতা থাকুক । মাস্ক থাকুক। স্যানিটাইজারও থাক। কিন্তু অযথা প্যা🐎নিক বন্ধ হোক'।

কীভাবে বাবাকে মনে রাখবেন ঊষসী চক্রবর্তী? তিনি লেখেন, 'আমি মনে রাখব একজন লড়াকু মানুষ হিসেবে। কল্লোল নাটক দেখতে দেখতে যিনি আমায় ফিসফিস করে বলেছিলেন ‘লড়াইটাই আসল। প্রতিরোধটাই জরুরি। জেতা-হারাটা নয়’। আর মনে রাখব যেকো🐽নও প্রতিকুলতার মধ্যেও ওঁর মনের জোর না হারানোর ‘ম্যাজিকাল’ ক্ষমতার কথা। আর মনে রাখব ‘পার্টি হোল্টাইমার’ হিসেবে ওঁর নিজস্ব গর্বের কথা।
কখনও বিধায়ক, কখনও মন্ত্রী কখনও বা সাংসদ- ওঁর অনেক পরিচয় ছিল। কিন্তু লোকের কাছে আমাদের সে সব বলার যো ছিল না। ‘বাবা কি করেন’ জানতে চাಌইলে বলতে হত একটাই কথা। ‘বাবা পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী। পার্টি হোল্টাইমার। আমরা হোল্টাইমার পরিবার’। ব্যাস আর কিচ্ছু না।
আমার মা সক্রিয় রাজনীতি করার সঙ্গে সঙ্গে চাকরি করতেন। মা মারা যাওয়ার পর তাই আমাদের বেশ অনটনেই পড়তে হয়েছিল। সেই সময়ে সাড়ে আট টাকা মাইনে (প্লাস ৫ টাকা টিফিনের) দিয়ে 𓄧কি ভাবে লেখাপড়া শিখে শেষ অবধি বিএ, এমএ পাশ দিলাম সে কাহিনি আজকাল অনেকেরই রূপকথার মত শোনাবে। কিন্তু আমরা বাবা-মেয়ে খুব সহজেই এই জীবন মেনে নিয়েছিলাম।
অনমন🌳ীয় মনের জোর। মানুষের জ♓ন্য কিছু করার আকাঙ্ক্ষা আর ক্ষমতার শীর্ষে থেকেও সৎ থেকে যাওয়ার জাদুমন্ত্র। আশাকরি এই সবের জন্যই উনি পরের প্রজন্মের সর্ব্বক্ষণের কর্মীদের কাছে উনি উদাহরণ হিসেবে থেকে যাবেন।
যে মিছিল বাবা এত ভালবাসতেন সেই মিছিল করে বাবাকে বিদায় আমরা দিতে পারিনি ঠিকই কিন্তু সান্তনা একটাই - কিন্তু এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বাবার প্রিয়তম লাল পতাকায় তাঁকে💧 মুড়ে দিয়েছেন বাবার কমরেডরা। আর আমরা সবাই গাইতে পেরেছি বাবꩲার প্রিয়তম গান ‘শেষ যুদ্ধ শুরু আজ কমরেড । এস মোরা মিলি এক সাথ।গাও ইন্টারন্যাশানাল । মিলাও মানবজাত’….
লাল সেলাম কমরেড শ্যামল চক্রবর্তী । ম🦋াঠে, ময়দানে, কলে, কারখান💖ায়, মিছিলে স্লোগানে লড়াই জারি থাকবে'।
গত🎃 ৩০শে জুলাই প্রকাশ্যে আসে করোনার উপসর্গ ও ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি শ্যামল চক্রবর্তী। পরের দিন সোশ্যাল মিডিয়ায় বাবার করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে ঊষসী। লড়াই করেছিলেন এই বর্ষীয়ান বাম নেতা, তবে শেষরক্ষা হল না। না-ফেরার দেশে চলে গেলেন জননেতা শ্যামল চক্রবর্তী।