আরজি কর নিয়ে যেমন পুলিশ প্রশাসনের অবস্থান নিয়ে সাধারণ মানুষ বারংবার প্রশ্ন তুলছেন, তেমনই বাদ দিচ্ছে। টলিউডের অভিনেতাদের কাঠগড়ায় তুলতে। এবার সেই প্রসঙ্গে মুখ খুললেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। তিনি যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারক🥂ে তুলোধোনা করলেন, তেমনই বাদ দিলেন না দুই বিরোধী শিবিরকেও। কী লিখলেন এই পোস্টে পরমব্রত?
আরও পড়ুন: '৮১ বছর বয়সে এসেও এত কাজ কেন করেন?', উদ্বিগ্ন ভꦡক্তের প্রশ্নে কী জানালেন অমিতাভ?
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় কী লিখলেন আরজি কর নিয়ে?
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এদিন লেখেন, 'কিছু দরকারি কথা। সমাজমাধ্যম থেকে দূরেই থাকি সাধারণত | সম্প্রতি নিজেকে নিয়ে কিছু প্রশ্নের কথা আমার কানে এসেছে আর যে বিষয় নিয়ে এই প্রশ্নগুলি, তা আরও লক্ষ মানুষের মতো আমার কাছেও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এবং সেনসিটিভ, তাই মনে হল কিছু প্রশ্ন বা কিছু কথা আমিও তুলি। প্রথমে আমার প্রশ্ন রাজ্যের শ🌞𓂃াসক দলকে, এরকম একটি ঘটনা একটি সরকারি হাসপাতালের অন্দরে ঘটে কি করে? তাও আবার মহিলাদের জন্যে সুরক্ষিত বলে পরিচিত কলকাতা শহরের বুকে ? তড়িঘড়ি যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই সিভিক পুলিশ কর্মী যদি সত্যিই দোষী হন , তাহলে তিনি রাতে হাসপাতালের ভিতরে কী করছিলেন? ওটা কি তার ডিউটি ক্ষেত্র? বোঝাই যাচ্ছে পুরো সিস্টেমের ভেতরে বাসা বেঁধেছে প্রচুর ঘুণপোকা | সেগুলি সময় থাকতে চিহ্নিত করার দায়িত্ত্ব আপনাদের প্রশাসনের নয়? এই ঘটনার পর প্রশাসনের ভূমিকা কি এরকম হওয়ার কথা ছিল? আপনাদের মনে হয় এই ভয়াবহ ঘটনার পরবর্তী সময়ে আপনাদের পরিস্থিতি হ্যান্ডলিং যথাযথ হয়েছে? কখনও অস্বাভাবিক মৃত্যু, কখনও আত্মহত্যা বলার চেষ্টা কেন হবে? মধ্যরাত্রেই ঘটনাস্থলে ময়নাতদন্ত? এর কি মানে? যে অধ্যক্ষ থাকাকালীন এরকম একটি ঘটনা ঘটে, এবং যে দায় এড়িয়ে মেয়েটির গতিবিধি নিয়েই প্রশ্ন তোলে, তাকে শাস্তিমূলক নির্বাসনে পাঠানো হল না কেন ? উল্টে শহরের আরেকটি মুখ্য মেডিক্যাল কলেজে অধ্যক্ষ পদে আসীন করা তো প্রায় প্রোমোশনের সমান ! এ কোথাকার ন্যায়বিচার?'
মমতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে তিনি বলেন, 'মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী | ওনার দলের বিরুদ্ধে অনেক ক্ষেত্রে অনেক অভিযোগ অনুযোগ থাকা সত্ত্বেও, ওনার সার্বিক কাজের জন্যে , মানুষ আস্থা রেখে বার বার ওনার ঝুলি ভোটে ভরিয়ে দিয়েছে ! কিন্তু এরকম একটি জরুরি এবং স্পর্শকাতর সময়ে প্রত্যুত্তরে কি করলেন🍎? লক্ষ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ কেবলই বিরোধী দের চক্রান্ত বা রাম-বাম নেক্সাস? আরজি করে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা হল কেন? আর সেটিকে আবার বিরোধীদের কাজ বলে চালানোর কি অর্থ? ঘটনাস্থল থেকে তথ্য প্রমান লোপাট করে তাদের কি লাভ ?' বাদ দেন না বিরোধীদের প্রশ্ন করতে। তাঁদের উদ্দেশ্যে লেখেন, 'আমার দ্বিতীয় বক্তব্য তাদের উদ্দেশ্যে, যারা সমাজ মাধ্যমে সব মানুষের, বিশেষ করে আমার মতো সিনেমার লোকেদের নৈতিক দায়িত্ত্বের ইজারা নিয়েছেন | প্রথম দিন থেকে সমস্ত প্রতিবাদের দাবি আমার সীমিত সমাজমাধ্যমের পরিসরে শেয়ার করেছি ! বিচার চেয়েছি , তদন্ত চেয়েছি! আমি সারাদিন আমার সমস্ত ভাবনাগুলিকেকে শুধুমাত্র সমাজমাধ্যমে উদ্গার করি না | তাই যদি না দেখতে পেয়ে থাকেন তাহলে মার্জনা চেয়ে নিচ্ছি , কিন্তু এই অভ্যেসটা এরকমই থাকবে! কারণ নিজের পুরো অস্তিত্বকে সমাজমাধ্যম ভিত্তিক করতে আমি নারা , আমার নিজের মানসিক সুস্থতার জন্যে | যাচাই না করে অর্ধ সত্য বা♉ মিথ্যে শেয়ার করা, ভার্চুয়াল খাপ পঞ্চায়েতে পাবলিক ট্রায়াল করে ভার্ডিক্ট বা বিচার দেওয়া, কেউ নিজের জীবনের শেষ ব্যক্তিগত সুতোটুকু বেআব্রু না করতে চাইলে, তার জীবনে উঁকি মারা থেকে বঞ্চিত হওয়ার রাগ প্রকাশ করা। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, সমাজমাধ্যমের আজ এইগুলিই মুখ্য ভূমিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে! সেই জন্যেই মাঝে মাঝে নিরাপদ দূরত্ব দরকার ! রাত দখল করার যে প্রতীকী আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছিল, তা সাম্প্রতিক সময়ে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্ত বলে আমি মনে করি! রাজ্যের বিরোধী দলগুলির সমর্থকরা যদি প্রত্যাশা করেন সবাই তাদের ন্যারেটিভে গলা মেলাবেন, তাহলে তো ভুল হয়ে যাচ্ছে! প্রত্যেকের ন্যারেটিভ তো ভিন্ন ! আমার তো বটেই ! কারণ আদর্শিক জায়গা থেকে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর লোক আমি! তাও বলি, এই পরিস্থিতিতে আপনাদের সব বিরোধী পক্ষের কিছু কিছু দাবি আমারও দাবি, কিন্তু সব নয়! এবং সেটা আমার নিজের জায়গা থেকে, নিজের মতো করে।'
এরপর নিজের অবস্থায় স্পষ্ট করে পরম লেখেন, 'রাজ্যের শাসকদলের আমি ঘনিষ্ঠ , এই তকমা বারবার গায়ে লাগে আমার ! অতীতেও বহুবার! না আমি শাসকদলের সদস্য বা কর্মী, না আমি তাদের নেতা মন্ত্রী , না আমি তাদের একনিষ্ঠ সমর্থক , না🌺 আমাকে তারা খাওয়ান পরান, না আমি থাকি তাদের কোনও মিটিং মিছিলে! তাহলে বারবার এই কথা শুনতে হয় কেন? নেটিজেনদের বলি, কে কোন মিছিলে কবে গেল , ক পা রাস্তা হাঁটল, কটা কথা বলল, সেগুলো আপনার পছন্দমতো হল কিনা, এই উইচ হান্টিং করতে গিয়ে আসল বিষয়টার প্রতি ফোকাস চলে যাচ্ছে না তো? এটা করে কিছু রাগ ঝাড়া যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু যেখানে আসল কৈফিয়ত চাওয়ার কথা সেখানে ফাঁক থেকে যাচ্ছে ! সারা দেশে মহিলাদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্যে যে সিস্টেমিক চেঞ্জ দরকার , সেটার জন্যে সকলে মিলে দাবি জোরদার করি আসুন !'