পাঠান ক্রেজের মধ্যেও রাজকুমার সন্তোষীর গান্ধী গডসে এক যুদ্ধের সাক্ষী হয়ে এলাম। একটি কল্পনাপ্রসূত ঘটনা, একটা চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি রয়েছে প্রেক্ষাপট হিসেবে সঙ্গে আছে মতাদর্শের লড়াই। দেখতে বসে আপনি নিজেই ঘেঁটে ফেলবেন যে কে ঠিক আর ভুল। আপনার নিজের ভাবনাই অনেকটা ওলোটপালোট হয়ে যাবে। একবার মনে করবেন হ্যাঁ, নাথুরাম যা করেছেন, যা বলছেন একদম উচিত কাজ, উচিত কথা। প👍র মুহূর্তেই মনে হবে গান্ধীর এই কথাটা কি ফেলনা? তাঁর কাজ, ভাবনার কি কোনও গভীরতা নেই? এই প্রশ্নের উত্তরꦑ আপনি নিজেই দেবেন। এই ছবিতেই জহরলাল নেহেরু বলেছেন, 'গান্ধীজিকে চেনা সহজ নয়।' আর সেটাই যেন বারংবার ছবিতে ধরা পড়েছে।
ছবি শুরু হচ্ছে বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনꦆতা এসেছে দেশে সেই সময় থেকে। কিন্তু সঙ্গে এনেছে দেশভাগ, দাঙ্গা, ভয়ঙ্কর এক পরিস্থিতিকে। মুসলিমদের উপর শিখরা অকথ্য অত্যাচার চꦕালাচ্ছে। ওদিকে পাকিস্তান থেকে খবর আসছে সেখানে হিন্দু নারীদের উপর অত্যাচার চলছে, শিশুদের বেচে দেওয়া হচ্ছে। আর এই গোটা ঘটনার জন্য অনেকেই গান্ধীজিকে দায়ী করছেন।
গান্ধীজিকে কেবল দেশভাগ নয়, দায়ী করা হয় পাকিস্তানকে প্রতিশ্রুতি মতো ৫৫ কোটি টাকা দেওয়ার জন্য, ত✅াঁকে দায়ী করা হয় মুসলিমদের পক্ষ নেওয়ার জন্য। স্লোগান উঠতে থাকে গান্ধী গদ্দার, খুন কা বদলা খুনের। বলা হয় তিনি বারবার আমরণ অনশন করছেন নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। ভয় দেখিয়ে কাজ হাসিল করতে চাইছেন। একই সঙ্গে সরকার আছে, কিন্তু সংবিধান নয় তাঁর কথা অনুযায়ী চলছে সেটা। আর এই গোটা প্রেক্ষাপট এমন ভাবেই সাজানো হয়েছে আপনার মনেও প্রশ্ন উঠবে তবে কি সত্যি তাই?
অন্যদিকে আছেন ন♉াথুরাম গডসে। বীর সাভারকারের আদর্শে তিনি অনুপ্রাণিত। মুসলিম তোষণ দেখে ক্ষুব্ধ হন তিনি। মনে করেন তাঁর জন্য দেশভাগ হল। হিন্দুরা নিপীড়িত হচ্ছে। এবং তিনি গান্ধী হত্যা করতে চললেন বীর দর্পে। সামনে গিয়ে পর পর তিনটি গুলিও ছোড়েন। কিন্তু একি! গান্ধীজি বেঁচে গেলেন। পাল্টে গেল পর্দার ইতিহাস। নতুন ইতিহাস দেখা গেল পর্দায়।
হ্যাঁ, গান্ধীজি যদি সেদিন না মারা যেতেন, কী হতো, কী হতে পারত সেটাই এই ছবিতে দেখানো হয়েছে। দুই মতাদর্শের মধ্যে লড়াই দেখা গিয়েছে। কেউ কখনও কারও চোখ খুলে দিয়েছে তো, কখনও আরেকজন চোখে আঙুল দিয়ে তাঁর ভুল দেখিয়ে দিয়েছে। দুজনেই গীতা পাঠ করেন। কিন্তু ভাবন🎃া? একদম আলাদা। কী হয় শেষ পর্যন্ত, কার লড়াই যেতে, কে সঠিক প্রমাণিত হয় সেটাই দেখা যায় এই ছবিতে।
গান্ধী গডসে এক য🧜ুদ্ধ ছবির কথা বলতে গেলে যেটা সবার আগে বলতেই হবে সেটা হল এই ছবির কাস্টিং এবং মেকআপ। গান্ধীর চরিত্রে থাকা দীপক আন্তনিকে দেখে আপনার এতটুকু মনে হবে না যে আপনি পর্দায় ছবিটি দেখছেন। জীবন্ত ‘বাপু’কেই তাঁর মধ্যে খুঁজে পাবেন। সেই এক চালচলন, হাতের আঙুল ধরে রাখার ধরন, হাসি। অন্যদিকে নাথুরাম গডসের ছবির সঙ্গে চিন্ময় মন্ডেলকরের মিল না থাকলেও তাঁর অভিনয় এতটাই সাবলীল আর সুন্দর ছিল যে এই ছবিতে তাঁর চরিত্র অবশ্যই আপনার একটা উপরি পাওয়া হবে। এছাড়া জহরলাল নেহেরুর চরিত্রে পবন চোপড়া সহ অন্যান্য চরিত্রে সকলেই যথাযথ। তবে রাজকুমার সন্তোষীর মেয়ে তানিশা সন্তোষী নিরাশ♌ করলেন। তাঁর অভিনয় বড়ই দুর্বল এই ছবিতে।
কাস্টিং ছাড়াও এই ছবির আরেকটি জিনিস যেটা আপনার নজর কাড়বে সেটা হল সংলাপ। একাধিক সংলাপ আপনাকে ভাবাবে, ভাবতে বাধ্য করবে। দোলাচলে ফেলে দিতে পারে। যেমন, 'গডসে একদিনে হওয়া যায়, গান্ধী হতে সারাজীবন লেগে যায়,' 'তোমার গর্ব করা উচিত না লজ্জা পাওয়া সেটা ইতিহাস বলবে,' 'কংগ্রেসের উদ্দেশ্য পার্টি ছিল না, এটা একটা মঞ্চ ছিল যা স্বাধীনতা পেতে সাহায্য করবে,' 'দেশ ধর্মের জন্য হিংসার প্রয়োজন আছে, 'আমরণ অনশন এক ধরনের মানসিক হিংসা' ইত্যাদি। একই সঙ্গে এখানে গান্ধীজি প্রেমকে একপ্রকার বিকার মনে করতেন সেটা দেখানো হয়। বলা হয় তাঁর জন্যই না🦋কি জয়প্রকাশ নারায়ণ এবং তাঁর স্ত্রী, এমনকি তাঁর নিজের সন্তানদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিলেন এই ভাবনার জন্য🎀।
তবে ট্রেলার দেখে এই ছবি নিয়ে যতটা আশা তৈরি হয়েছিল রাজকুমার সেই উচ্চতায় পৌঁছতে পারেননি। অবশ্যই তিনি এই ছবির মাধ্যমে একটা নতুন ভাবনা, নতুন আঙ্গিককে তুলে ধরেছেন। কিন্তু তবুও কিছু একট𒀰া মিসিং ছিল। আসলে জঙ্গল না কাটা, স্বরাজ গ্রাম, জাতিবাদ, সংবিধান, অহিংসা, বিদ্যুৎ প্রকল্প, সহ এত কিছু একসঙ্গে এই ছবিতে পরিচালক দেখাতে 🐭চেয়েছেন যে মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে যাচ্ছিল।
তবে মাঝের অংশটুকু বাদ দিলে, শুরু এবং শেষ, মূলত এক সেলে গান্ধী গডসের থাকা এবং তাঁদের মতাদর্শের লড়াই অনবদ্য😼। শেষ পর্যন্ত কে বদলে গেল, কী হল সেটা দর্শকদের মন ছুঁয়ে যাবেই।
ফলে একদম নতুন কিছুর সাক্ষী থাকতে, কাস্টিং আর সংলাপ দেখতে, ইতিহাস অন্যরকম হতে পারে কি সহ আরও একাধিক প্রশ্নের উত্তꦓর দেখতে এই ছবি দেখা উচিত অন্তত একবার।