বিয়ের তারিখ ঠিক ছিল ২০০৫ স🌃ালের ১৯ জুন। কিন্তু সে দিন বিয়ে করতে পারেননি শ্রীজাত আর দূর্বা। কী এমন ঘটেছিল? সে কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন কবি। এভাবেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতিচারণ করেছেন কবি।
কী লিখেছেন শ্রীজাত? ‘আমাদের বিয়ের তারিখ স্থির করা হয়েছে। করা হয়েছে মান𝓀ে, আমরাই করেছি একরকম। তিথি-নক্ষত্র মেনে নয়, ছুটির দিন দেখে। সে-দিনটা ছিল রোববার, স্বভাবতই সকলের হাজির হতে একটু বেশি সুব🦋িধে হবে, অন্যান্য দিনের চেয়ে।’
তাঁর কথায়, জুন মাসের মাঝামাঝি রোববার দেখে আংটি-বদল আর সই-সাবুদ। তার সঙ্গে কাছের মানুষজনদের নিমন্ত্রণ। ১৯ জুন ছিল তেমনই এক রোববার। দক্ষিণ কলকা💟তায় এক গির্জার সঙ্গে কথা পাকা হয়ে গেল, সেখানে𝐆ই হবে বিয়ের জমায়েত। শ্রীজাতর বন্ধু অর্জন ছাপাখানার মালিক। তিনি ছাপিয়ে দিলেন কার্ড। আত্মীয়-স্বজনদের জানিয়ে দেওয়া হল, যেন ওইদিন সন্ধেবেলা কোনও কাজ না রাখেন কেউ।
কিন্তু এর পরেই ঘটে গেল কাণ্ড! কী সেটি? কবি লিখেছেন, ‘সব ঠিকঠাক হয়ে য𝔉াবার পর, এক সকালে আমরা পৌঁছলাম ম্যান্ডেভিলা গার্ডেনস-এ পারিজাতের দশতলায়, স্বাতীদি আর সুনীলদাকে 𝄹নেমন্তন্ন করব বলে।... আমাদের আগে থেকেই হাজির ছিলেন মন্দার মুখোপাধ্যায়। আজ ভাবি, ভাগ্যিস ছিলেন সেদিন তিনিও! নইলে এমন আজগুবি ঘটনার সাক্ষী থাকত না একজনও।’
শ্রীজাত লিখেছেন, ‘আমরা বিয়ে করছি শুনে ভীষণ খুশি হলেন সুনীলদা। লুকোতে পারতেন না খুশি, যেভাবে লুকোতে পারতেন রাগ। ঝোলা থেকে বার করে কার্🗹ড দিলাম ওঁর হাতে। বয়ানে চোখ বুলিয়ে হাসিটা স্তিমিত হয়ে এল।’ এর পরেই জানা গেল, ওইদিন ওঁরা থাকছেন না। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘আমরা তার আগের রᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚ𒀱ᩚᩚᩚাতেই আমেরিকা চলে যাব যে, ফ্লাইটের টিকিট কাটা আছে।’
এর পরে শ্রীজাত লিখেছেন, ‘কথাটা শুনে এক মুহূর্তে আমি আর দূর্বা নিভে গেলাম। আমাদের মনের অবস্থা বুঝতে পেরেই বোধহয় যোগ করলেন, ‘ও কিছু নয়, মাস দেড়েক পরই তো ফিরব, তখন একদিন খাওয়াদাওয়া করা যাবে, কেমন?’ ক♛থাটা শুনলাম বটে, কিন্তু মনে ধরল না। জিগ্যেস করলাম, ‘১৮ তারিখ তো আপনারা চলে যাচ্ছেন তাহলে। তার আগে কোনও দিন ফাঁকা আছেন, সন্ধেবেলা? ‘দাঁড়াও তাহলে একবার ক্যালেন্ডার দেখে আসি’ বলে ভেতরের ঘরে চলে গেলেন।’
এর পরে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ফিরে এসে বললেন, ‘১৪ তারিখটা দেখছি ফাঁকাই আছে। কেন বলো তো?’ শ্রীজাত লিখেছেন, এই উত্তর শুনে তিনি বলেন, তাঁরা ১৪ তারিখেই বিয়ে করবেন। তাঁর কথা🌊য়, ‘চিরকালের নিয়ম-ভাঙা নীললোহিতও বোধহয় এমন বেপরোয়া জবাব আশা করেননি। সুনীলদা’র মুখে ফিরে এসেছে ছেলেমানুষি হাসি, বললেন, ‘এ কী কাণ্ড, বিয়ের তারিখ বদলে দেবে?’ প্রশ্নে এমন একখানা সমর্থনের খুশি লুকিয়ে ছিল যে, বুঝলাম, নট-নড়ন-চড়ন নিয়মের বাজারে এই দুই বেনিয়মের খরিদ্দার তাঁকে হতাশ করেনি।’
শ্রীজাত বলছেন, ‘তখন আমাদের▨ কারও সেলফোন নেই। বাড়িতে অ༺ভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা বা অনুমতি নেওয়া তো দূর, তাঁদের জানিয়ে যে তারিখ পাল্টাবো, সে-উপায় নেই। আর সে-সুযোগও নেই। কেননা সুনীলদা ভারী ব্যস্ত, তাঁর তারিখ খালি পাওয়া মানে লটারি জেতারই সামিল। তাই আমাদের মনে হয়েছিল, ওঁদের দু’জনকে আমাদের বিয়ের মজলিসে পাবার চেয়ে জরুরি আর কিছু হতে পারে না। ফ্লাইটের টিকিট পাল্টানো যখন হাতে নেই আর, বিয়ের তারিখ তো বদলানো যেতেই পারে।’
এর পরে অল্প সময়ের মধ্যে সমস্তটা বদলে ফেলে নতুন ব্যবস্থা করতে হয়রানিও নেহাত কম হয়নি। বাড়িত⛦ে বুঝিয়ে বলা এবং ইতিমধ্যেই আমন্ত্রিত অতিথি ও আত্মীয়-স্বজনদের আবার করে জানানো তো আছেই, আছে বিয়ের জন্য নতুন করে জায়গা পাওয়া, যাঁরা খাবার তৈরি করবেন, তাঁদের পাওয়া।
শ্রীজাত লিখেছেন, ‘কিন্তু আমাদের সেসব না পেলেও চলবে। স্বাতীদি আর সুনীলদা হাজির থাকলে আমরা খোলা মাঠেও বিয়ে করতে পারি।’ কিন্তু ১৯ বা ১৪, সেবার জুনের এই দুয়ের কোনও তারিখেই বিয়ের কোনও ল🏅গ্ন ছিল না। কবির কথায়, ‘আমাদের 𒅌কাছে অবশ্য ছিল। সুনীলদা আর স্বাতীদির যেদিন আসার সময় হবে, সেদিনের চেয়ে শুভলগ্ন আমাদের জন্য আর কী-ই বা হতে পারে?’
শেষমেশ সেই গির্জাই পাওয়া গিয়েছিল ১৪ তারিখের জন্য, খাবার যাঁরা বানাবেন, তাঁরাও তারিখ খাবার বানাতে প🍬েরেছিলেন। আর বন্ধু অর্জন, বিয়ের কার্ড দু’বার করে ছাপতে বাধ্য হয়েছিলেন।
শ্রীজাত লিখেছেন, ‘১৪ জুন, ২০০৫ সন্ধেবেলা, ছোট-ছোট টুনির জমজমাট রোশনাইয়ে সেজে উঠল গির্জাঘরের শরীর, যেন তারই বিয়♏ে আজ। আর সন্ধে ঘন হতে-না-হতে হাসিমুখে আমাদের আশী🦩র্বাদ করতে এলেন সেই দম্পতি, স্বাতীদি আর সুনীলদা।’
শেষে শ্রীজাত লিখেছেন, ‘আজ তাঁর জন্মদিনে বদলে নেওয়া সেই তারিখটার কথা মনে পড়ল খুব। ১৪ জুন। আমাদের শুভলগ্ন। ১৯-এর পাশ কাটিয়ে উদযাপনের সব আলো যে একাই কেড়ে নিল, সুনীলদার লেখার টেবিলে রাখা একখানা ছোট্ট ক্যালেন্ডারের দৌলতে। আজ মনে হয়, জীবনও যদি বদলে নেওয়া যেত মুহূর্তে! আমরা সু🌱নীলদা’র চলে যাবার দিনটা পিছিয়ে দিতে পারতাম যদি, আমাদের ইচ্ছেমতো...’