রেলের জমি। অথচ, সেই জমিতেই যে বহুতল গড়ে মার্কেট কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হচ্ছে, তা নাকি এতদিন জানতেই পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ! বিষয়টি নজরে আসতেই কাজ বন্ধের নির্দেশ জারি করা হয়েছে। এদিকে, ইতিমধ্যেই যে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়ে গেল, সেই ক্ষতিপূরণ কীভাবে হবে, আপাতত সেই হিসাবই কষছে কাজে হাত দেওয়া এবং বর্তমান কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হওয়া পুরকর্তৃপক্ষ।
কথা হচ্ছে পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল পুরনিগমকে নিয়ে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পুর কর্তৃপক্ষ এলাকায় একটি বহুতল নির্মাণ করছিল। উদ্দেশ্য ছিল, নির্মাণকাজ শেষ হলে সেখানেই গড়ে তোলা হবে একটি মার্কেট কমপ্লেক্স। কিন্তু, সেই জমি পুরনিগমের নয়। জমিটি আসলে রেলের।
এই বিষয়ে রেলকে সতর্ক করতে চিঠি পাঠিয়ে গোটা ঘটনা জানান তৃণমূল কংগ্রেসেরই স্থানীয় নেতা রাজু আলুওয়ালিয়া! তাঁর চিঠি আসানসোল রেল ডিভিশনের হাতে পৌঁছতেই কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ফলে আপাতত মার্কেট কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা বিশ বাঁও জলে।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল সিটি বাস স্ট্যান্ড লাগোয়া পুর এলাকার সংশ্লিষ্ট মৌজার ১১১০৫ দাগ নম্বরের ওই জমিটির সম্পূর্ণ মালিকানা তাদের হাতেই রয়েছে। কিন্তু, এত দিন সেটি পতিত জমি হিসাবে পড়ে ছিল। সেই জমিতে নির্মাণকাজের খবর পেতেই জেলা প্রশাসন ও পুর কর্তৃপক্ষকে নির্মাণকাজ বন্ধ করতে বলে রেলের তরফে নোটিশ পাঠানো হয়। অগত্যা কাজ বন্ধ করতে হয়।
বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আসানসোল পুরনিগমের চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানান, বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্প রূপায়িত করা হচ্ছিল। কিন্তু, এখন কাজ বন্ধ। ইতিমধ্যেই নির্মাণে যে বিপুল টাকা ব্যয় করা হয়েছে, সেই ক্ষতিপূরণ কীভাবে হবে, তা নিয়ে পুরবোর্ডের সদস্যদের মধ্যে আলোচনা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, এই গোটা ঘটনার জন্য আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র তথা প্রাক্তন তৃণমূল নেতা তথা বর্তমান বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারিকেই দায়ী করেছেন বর্তমান মেয়র বিধান উপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ২০১৮ সালে এই নির্মাণকাজ শুরু করিয়েছিলেন তৎকালীন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তাঁরা শুধুমাত্র সেই অসমাপ্ত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছিলেন।
এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন জিতেন্দ্র তিওয়ারিও। কিন্তু, একইসঙ্গে আরও একটি তথ্য সামনে এনেছেন তিনি। জিতেন্দ্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'শহরকে যানজট মুক্ত করতে ২০১৮ সালে তৎকালীন রেল কর্তাদের কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে ওখানে বহুতল পার্কিং প্লাজা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বর্তমান পুরবোর্ড সিদ্ধান্ত বদল করে মার্কেট কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ শুরু করেছিল। বাণিজ্যিক কাজে ওই জমি ব্যবহার করার উদ্যোগ নেওয়ার জন্যই বাধা দিয়েছে রেল।'