সিখ ধর্মের প্রধান তীর্থস্থল স্বর্ণ মন্দির। স্বর্ণ মন্দির নামে প্রসিদ্ধ হলেও এটি হরমিন্দর সাহিব বা শ্রী দরবার সাহিব নামেও খ্যাত। তবে এখানে শুধু সিখই নয়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও এসে থাকেন।সিখ ধর্মের পঞ্চম গুরু অর্জনদেব স্বর্ণ মন্দিরের নির্মাণ শুরু করেন। এটি আবার ‘অথ সত তীরথ’ নামেও পরিচিত। স্বর্ণ মন্দির সম্পর্কে কিছু তথ্য জানানো রইল এখানে—১. সুফি সন্ত মিঞা মীর স্বর্ণ মন্দিরের ভিত রেখে ছিলেন। তৃতীয় শিখ গুরু অমর দাস এই মন্দির তৈরির স্বপ্ন দেখলেও, পঞ্চম গুরু অর্জনদেব মন্দিরের প্রধান কাজ শুরু করেন। ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী স্বর্ণ মন্দিরের ভিতরে শিখ ধর্মের প্রাচীন ইতিহাসের উল্লেখ রয়েছে। এই মন্দিরটি অকাল তখতের উপর স্থাপিত। অকাল তখতের অর্থ হল অনন্ত সিংহাসন। পাঁচটি তখতের মধ্যে অকাল তখত প্রথম ও সবচেয়ে পুরনো। মন্দির তৈরির সময়, এটি সোনার চাদরে মোড়া ছিল না। পরে উনবিংশ শতাব্দীতে মহারাজা রঞ্জিত সিং পঞ্জাবকে বহিরাগত আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করেন ও একে পুনরুদ্ধার করেন। তিনিই মন্দিরের ওপরের অংশ সোনায় মুড়ে দেন। ২. স্বর্ণ মন্দির তৈরির আগে প্রথম শিখ গুরু, গুরু নানক এই স্থানে ধ্যানমগ্ন হয়েছিলেন। এই মন্দিরের চারটি মুখ্য দ্বার রয়েছে। চারদিকে এই চারটি দরজা খোলে। এই চারটি দরজার তাৎপর্য, এখানে যে কোনও ধর্মের মানুষের অবাধ বিচরণ রয়েছে। এখানে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলে আসতে পারেন, সকলের জন্য এই দরজা খোলা। রোজ প্রায় এক লাখ পর্যটক স্বর্ণ মন্দিরে ভক্তি-আরাধনার জন্য আসেন।৩. অমৃত সরোবরের মাঝখানে স্বর্ণ মন্দির তৈরি করা হয়েছে। এটিকে সবচেয়ে পবিত্র সরোবর মনে করা হয়। সিখ ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহিব, এই মন্দিরেরই মুখ্য ঘরে সর্বপ্রথম স্থাপিত করা হয়েছিল। ৪. সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি এই মন্দিরকে সোনায় মোড়া হয়েছে। এখানে শিখ ধর্মের প্রাচীন ঐতিহাসিক বস্তুর প্রদর্শনীও করা হয়েছে। ৫. এই মন্দিরের অন্যতম চমকপ্রদ তথ্য হল, গঠনগতভাবে এই মন্দিরের সিঁড়ি উপরের দিকে যায় না। বরং নীচের দিকে নামে। সম্পূর্ণ মন্দির শহরের সমতল থেকে নীচুতে তৈরি করা হয়েছে। এখানে হাতে আঁকা বহু ছবি আছে। স্বর্ণ মন্দিরের ভাস্কর্যে মোগল ও ভারতীয় বাস্তুকলার ছাপ স্পষ্ট।৬. স্বর্ণ মন্দিরে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রান্নাঘর রয়েছে। এখানে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ নিঃশুল্ক ভোজন করে। একে লঙ্গর বলা হয়। এখানে যে খাবার দেওয়া হয়, তা প্রসাদ হিসেবে গৃহীত। গুরু নানক বলেছিলেন, ব্যক্তি উঁচু বা নীচু, যে কোনও জাতিরই হোক না কেন, প্রত্যেককে খাবার খাওয়ানো উচিত। এই মন্দিরে প্রতিদিন প্রায় দু'লাখ রুটি বানানো হয়।৭. শহিদ দিবস, নানক জয়ন্তী বা প্রকাশ উৎসব, লোহড়ি, বৈশাখী, সংক্রান্তি, দীপাবলী ইত্যাদি উৎসবে এখানে অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। জুতো খুলে, পা ধুয়ে মন্দির প্রাঙ্গনে ঢুকতে হয়। মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে কাপড় দিয়ে মাথা ঢাকতে হয়। মন্দিরে ঢোকার মুখে মাথা ঢাকার জন্য কাপড়ও দেওয়া হয়। দরবার সাহিবের ভিতরে গুরুবাণী শোনার জন্য মাটিতে বসতে হয়। মন্দিরে সবসময় জাপুজি অথবা গুরুগ্রন্থ সাহিবের পাঠ চলতে থাকে।