বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে কিছু গাছকে খুবই অলৌকিক বলে মনে করা হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, এই গাছগুলিতে দেবতারা বাস করেন। কিছু গাছপালা ঘরের শোভা বাড়ায়, পরিবেশকে পরিষ্কার করে, পাশাপাশি গ্রহ-নক্ষত্রকেও নিয়ন্ত্রণ করে। এমনই একটি গাছ হল শমি যা ভগবান শিবের খুব প্রিয় .এবং যা সমস্ত গ্রহের মধ্যে সবচেয়ে ধীর গতিশীল গ্রহ শনিকে নিয়ন্ত্রণ করতেও কাজ করে। এই গাছের বিশেষ মাহাত্ম্য আছে মহাভারতে৷মহাভারতের কাহিনী: পুরাকালে মহাভারতে পান্ডবদের যখন হস্তিনাপুর থেকে বনবাসে পাঠানো হয়েছিল, তখন পান্ডবরা বনে যাওয়ার আগে তাদের অস্ত্রশস্ত্র এই শমী গাছের আড়ালে লুকিয়ে গেছিল৷ তাই হিন্দুধর্মে এই গাছের বিশেষ মাহাত্ত্ব আছে।অন্যদিকে,শারদীয়া নবরাত্রির দশম দিনে দশেরা পালিত হয়। এই দিনে ভগবান রাম লঙ্কাপতি রাবণকে বধ করেন। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, শ্রী রাম তার স্ত্রী সীতা এবং ভাই লক্ষ্মণ সহ ১৪ বছর বনবাসে ছিলেন। তারপর দুষ্ট, অহংকারী রাবণ, ভগবান শ্রী রামের কুঁড়েঘরে ঋষির ছদ্মবেশে, মা সীতাকে অপহরণ করে এবং তাকে লঙ্কায় নিয়ে যায়।লঙ্কা আক্রমণ করার আগে, শ্রী রাম শমী গাছের সামনে প্রণাম করেছিলেন এবং তাঁর বিজয়ের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। এরপর শ্রীরাম রাবণকে বধ করেন। তখন থেকেই বিশ্বাস করা হয় যে শুধুমাত্র শমীর পাতা স্পর্শ করলেই মানুষের সমস্ত কষ্ট ও সমস্যা দূর হয়। এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে বাড়িতে শমী গাছ লাগালে দেবতাদের আশীর্বাদ সর্বদা বজায় থাকে। এর পাশাপাশি শনিদেবের ক্রোধ থেকেও রক্ষা করে শমি গাছ। শমি পাতা বিতরণ করলে ঘরে সুখ ও সমৃদ্ধি আসে। পুরাণে শমী গাছের মহিমা অনেক বলা হয়েছে।শনিবার শমি গাছ সরাসরি মাটিতে এবং পাত্রে লাগাতে পারেন। বাড়ির প্রধান ফটকের কাছে শমী গাছ লাগানো খুবই শুভ বলে মনে করা হয়।বাড়ির উত্তর-পূর্ব কোণে শমি গাছ লাগাতে হবে। এ কারণে পরিবারকে কখনও আর্থিক সংকটের মতো সমস্যায় পড়তে হয় না। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় শমী গাছ দেখে বেরোন, এটি করলে প্রতিটি কাজে সাফল্য পাওয়া শুরু হয়। বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে, যদি আপনার কুণ্ডলীতে কোনও ধরণের শনি দোষ থাকে বা আপনি সবসময় শনির অশুভ প্রভাব থেকে দূরে থাকতে চান তবে মূল ফটকের বাম দিকে শমী গাছ লাগাতে হবে।সূর্যের রশ্মি শামি গাছের উপর পড়তে হবে। বিজয়াদশমীর দিন শমীর চারা রোপণ করা খুবই শুভ বলে মনে করা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, লঙ্কা আক্রমণে ধ্বংস হওয়া শমী গাছের পূজা করে ভগবান রাম বিজয়ের আশীর্বাদ চেয়েছিলেন।শনি দোষ দূর করে: শমী গাছ শনি গ্রহের প্রতিনিধিত্ব করে৷ বাড়ির পশ্চিম দিকে এই গাছ লাগানো শুভ৷ এই গাছের ডাল দিয়ে যজ্ঞ করা হয় যা শনি দোষ দূর করতে সক্ষম৷ শনির সাড়েসাতি ও চাইয়া থেকেও মুক্তি দিতে এই গাছ৷ভগবান শিবের বিশেষ প্রিয় এই গাছের পাতা: শমী গাছের পাতা ভগবান শিবের বিশেষ প্রিয়৷ শমী গাছের পাতা ভোলেনাথকে অর্পণ করলে তিনি খুবই খুশি হন এবং আশীর্বাদ প্রদান করেন৷গণেশজি প্রসন্ন হন, কাজে বাধা দূর হয়: গণপতি বাপ্পা কে আমরা বিঘ্নহর্তা বলে জানি৷ যেকোনোও কাজ শুরুর আগে আমরা গণেশ ঠাকুরের নাম করে তবে কাজ শুরু করি। এই গণেশ ঠাকুরেরও কিন্তু ভীষন প্রিয় এই গাছের পাতা৷ দুর্বা ঘাসের মত শমী গাছের পাতাও শ্রী গণেশের চরণে নিবেদনকরে যেকোনও ধরনের মনস্কামনা পূর্তি সম্ভব৷