২২ জানুয়ারি সোমবার। ছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মৃগশিরা নক্ষত্রে মাত্র ৮৪ সেকেন্ডের মধ্যে অযোধ্যার রামমন্দিরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হয়। আর এর পর মঞ্চে বক্তব্য রাখার সময় কেবলই রামনাম নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে শোনা গেল রামায়ণের সেই অর্থে গৌণ চরিত্রগুলি𝓰র প্রসঙ্গও। উঠে এল শবরী, নিষাদ রাজা গুহক, সেতুবন্ধনের কাঠবেড়ালি এবং জটায়ুর নামও। জেনে নেওয়া যাক চরিত্রগুলির বিষয়ে।
- শবরী: ভক্তির এক অসামান্য দৃষ্টান্ত
রামায়ণ মহাকাব্যের এক অসামান্য চরিত্র হলেন শবরী। তিনি ছিলেন একজন বর্ষীয়সী শবর নারী। ঋষি মাতঙ্গ ছিলেন তার গুরু। মৃত্যুর সময় তিনি শবরীকে বলেছিলেন, একদিন রামচন্♈দ্র তার দ্বারে আসবেন। শবরী সেই কথা বিশ্বাস করেছিলেন। তিনি রামচন্দ্রের আগমনের অপেক্ষায় দিনের পর দিন বনবাসে কাটিয়েছিলেন। প্রতিদিন তিনি লাঠি হাতে জামের সন্ধানে বেরিয়ে যেতেন। সেগুলি মুখে দিয়ে স্বাদ নিতেন। যেগুলি মিষ্টি মনে হত, সেগুলি ঝুড়িতে রাখতেন। একদিন সত্যিই রামচন্দ্র শবরীর কাছে এলেন। শবরী তার কাছে সেই মিষ্টি জামগুলো নিবেদন করলেন। লক্ষ্মণ অবাক হয়ে দেখেন, রাম সেই ‘এঁটো’ ফলগুলোই খেয়ে নিচ্ছেন। রাম ꦰলক্ষ্মণকে বললেন, ‘যে ফল ভক্তিতে নিবেদিত হয়, তা কখনই এঁটো হয় না। শবরীর ভক্তির ফল আমার কাছে অত্যন্ত পবিত্র।’ শবরীর এই ঘটনা ভক্তির এক অসামান্য দৃষ্টান্ত। তার ভক্তির কাছে রামচন্দ্রও নতজানু হয়েছিলেন।
- জটায়ু: দৈব পাখি, সীতার হরণ প্রতিরোধকারী বীর
জটায়ু ছিলেন এক দৈব পাখি। সূর্যদেবের অশ্বচালক অরুণের কনিষ্ঠ পুত্র। সম্পাতির ভাই। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বীর ও শক্তিশালী। রামায়ণ অনুসারে, রাবণ যখন সীতাকে হরণ করে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন জটায়ু তাকে বাধা দেন। তিনি রাবণের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ যুদ্ধ করেন। কিন্তু বয়সের ভারে জর্জরিত জটায়ু শেষ পর্যন্ত রাবণের কাছে পরাজিত 🐠হন। রাবণ জটায়ুর ডানা ছিঁড়ে ফেলেন এবং তাকে মাটিতে ফেলে দেন। মৃত্যুপথযাত্রী জটায়ু রাম ও লক্ষ্মণকে দেখেন। তিনি তাদের সীতার হরণের কথা জানান। তিনি বলেন, রাবণ সীতাকে লঙ্কায় নিয়ে গেছে। জটায়ুর এই তথ্য রাম ও লক্ষ্মণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তারা সীতাকে উদ্ধারের জন্য লঙ্কায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। জটায়ু ছিলেন একজন সাহসী ও ন্যায়নিষ্ঠ পাখি। তিনি সীতাকে রক্ষা করার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তার এই আত্মত্যাগ রাম ও লক্ষ্মণের জন্য অনুপ্রেরণা ছিল।
- কাঠবেড়ালি: ক্ষুদ্র প্রাণের বিশাল আত্মত্যাগ
রামায়ণের একটি অসাধারণ চরিত্র হলেন কাঠবেড়ালি। সে ছিল একজন ক্ষুদ্র প্রাণী, কিন্তু তার আত্মত্যাগ ছিল বিশাল। রামচন্দ্র সীতাকে উদ্ধারের জন্য লঙ্কা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু সমুদ্র পার হওয়ার কোন উপায় ছিল না। তখন বানর বাহিনী মিলে সমুদ্রের উপরে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। সেতু নির্মাণে বানর বাহিনী ভারী ভারী পাথর বয়ে আনছিল। কিন্তু কাঠবেড়ালির ক্ষমতা ছিল না ভারী পাথর বয়ে আনতে। তাই সে একটা করে খই নিয়ে এসে সমুদ্রে ফেলছিল। রামচন্দ্র ಌএই দৃশ্য দেখে খুবই খুশি হন। তিনি কাঠবেড়ালির আত্মত্যাগের প্রশংসা করেন। তিনি কাঠবেড়ালিকে তার পিঠে হাত বুলিয়ে দেন। সেদিন থেকে কাঠবেড়ালির পিঠে তিনটি দাগ দেখা যায়। এই দাগ আসলে রামচন্দ্রের🌠 আঙুলের ছাপ। কাঠবেড়ালির এই আত্মত্যাগ আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ক্ষুদ্র দেহের মানুষও বড় কাজ করতে পারে। প্রত্যেকের মধ্যেই কিছু না কিছু গুণ আছে। সেই গুণকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে আমরা বড় কিছু করতে পারি।
- নিষাদ রাজা গুহক: রামায়ণের এক অসামান্য চরিত্র
রামায়ণের অযোধ্য়া কাণ্ডে দেখা মেলে নিষাদ রাজা গুহকের। তিনি রাম, সীতা ও লক্ষ্মণের বনবাসকালে তাদের সহায়তাকারী ও বন্ধু ছিলেন। রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ বনবাসে যাওয়ার পথে গঙ্গা নদীর তীরে পৌঁছালে নিষাদ রাজা গুহক তাদের সেবাযত্নে এগিয়ে আসেন। তিনি তাদের জ꧅ন্য খাদ্য, পানীয় ও চমৎকার বিছানার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু রাম যেহেতু রাজবেশ ত্যাগ করে তপস্বীর মতো দিন কাটাবেন বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন, তাই সেই আতিথেয়তা আর গ্রহণ করেননি তিনি। গুহক রামকে নদী পার হতে সাহায্য করেন। তিনি রামকে জানান যে, তিনি রামকে চিনতে পেরেছেন। তাঁকে সাহায্য করতে পেরে তিনি গর্বিত। চোদ্দো বছর পরে রাম অযোধ্যায় ফিরে আসেন। তিনি গুহকের সঙ্গে সাক্ষা♏ৎ করতে ভোলেননি। তিনি গুহককে তার সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ জানান।
গুহক রামায়ণের এক অসামান্য চরিত্র। তিনি একজন সৎ, দয়ালু ও সাহসী মানুষ ছিলেন। তিনি রামকে তার বনবাসকালে🃏 সহায়তা করেছিলেন। তার এই সহায়তা রামকে বনবাসকালে সহ্য করতে সাহায্য করেছিল।