লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২.২৪ লাখ। কিন্তু গত অর্থবর্ষে মাত্র ৪,৭২০ বাড়িতে পানীয় জলের ট্যাপ বসানো হয়েছে। অব্যবহৃত হয়ে পড়ে রয়েছে অর্ধেকেরও বেশি কেন্দ্রীয় বরাদ্দ। রীতিমতো প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাংলার বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুলল কেন্দ্র।দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে 'জল জীবন মিশন' প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই প্রকল্পের আওতায় দেশের গ্রামীণ এলাকার প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গেও একই কাজ শুরু হয়। কিন্তু কেন্দ্রের অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের চূড়ান্ত গড়িমসিতে রাজ্যে সেই প্রকল্প একেবারেই গতি পায়নি।কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্যের ৪১,৩৫৭ গ্রামে ১.৬৩ কোটি বাড়ি আছে। তার মধ্যে ২২,১৫৫ গ্রামের মাত্র দু'লাখ বাড়িতে পরিশ্রুত পানীয় জলের সংযোগ আছে। আরও বেশি সংখ্যক পরিবারকে পরিশ্রুত পানীয় জলের সংযোগ প্রদানের জন্য গত অর্থবর্ষে যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল, তার মাত্র ০.১৪ শতাংশ পূরণ করেছে রাজ্য। অথচ টাকার কোনও অভাব ছিল না বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। মোদী সরকারের দাবি, গত অর্থবর্ষে ৯৯৯৩.৩৮ কোটি টাকা দিয়েছিল দিল্লি। কিন্তু মাত্র ৪২১.৬৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বাকিটা অব্যবহৃত হয়ে পড়ে রয়েছে। আর্সেনিক বা ফ্লুওরাইড প্রভাবিত এলাকায় পরিশ্রুত পানীয় জল প্রদানের ক্ষেত্রেও একই ছবি ধরা পড়েছে। সেই এলাকাগুলিতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাজ্যকে ১,৩০৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ৫৭৩.৩৬ কোটি টাকা খরচই করে উঠতে পারেনি রাজ্য। অথচ জাতীয় গ্রিন ট্রাইবুন্যালের অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২,৪১৪ টি আর্সেনিক এবং ফ্লুওরাইড প্রভাবিত এলাকার সব বাড়িতে পাইপের মাধ্যমে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একান্ত তা সম্ভবপর না হলে সাময়িকভাবে কমিউনিটি ওয়াটার পিউরিফিকেশন প্যান্টের মাধ্যমে মাথাপিছু প্রতিদিন ৮-১০ লিটার জল দিতে হবে। যা পানীয় জলের পাশাপাশি রান্নার কাজেও ব্যবহৃত হবে।কেন্দ্রের দাবি, গ্রামীণ এলাকার বাড়িতে ট্যাপ জলের সংযোগের জন্য গত ১ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যের কাছে ১,১৪৬.৫৮ কোটি টাকা পড়ে আছে। তা সত্ত্বেও চলতি অর্থবর্ষে বরাদ্দ বাড়িয়ে ১,৬১০.৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজ্য়ের ভাগ ধরে সেই প্রকল্পে সর্বমোট ৫,৫১৫ কোটি টাকা পড়ে আছে। পাশাপাশি, কাজের ভিত্তিতে পরবর্তীতে বাড়তি টাকাও মিলতে পারে। কিন্তু গতবারের লক্ষ্য পূরণ করতে না পারায় এবার রাজ্যের লক্ষ্যমাত্রা একলাফে প্রায় দ্বিগুণ (৬৪.৪৩ লাখ) করেছে কেন্দ্র। সেজন্য মাসিক পরিকল্পনা রাজ্যকে দ্রুত লক্ষ্যমাত্রা পূরণের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। বিশেষত আগামী ৪-৬ মাসে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রাজ্যকে কাজ করতে বলা হয়েছে।এছাড়াও কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের জাতীয় কমিটির কাছে বার্ষিক অ্যাকশন প্ল্যানের রিপোর্টও জমা দেয়নি রাজ্য। যা লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি বলে দাবি করেছে কেন্দ্র।