ঠাকুরনগর: চৈত্রের রৌদ্দুর। জৈষ্ঠ্যের মতো গা পুড়িয়ে দেওয়া না হলেও মালুম দিচ্ছে আসন্ন গ্রীষ্মকাল কতটা তাপপ্রবাহ বজায় রাখবে। এরই মাঝে ঠাকুরনগরের মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে ৬ এপ্রিল থেকে মেলা বসবে। ঠাকুরবাড়ির উল্টোদিকের মাঠে ইতিমধ্যে স্টল বসে গিয়েছে। ভর দুপুরে ঠাকুরবাড়ির আশেপাশে ইতিউতি মানুষের আনাগোনা। দুপুরের আলস্যে ছায়া খুঁজে নিচ্ছে ঠাকুর বাড়িতে আসা মানুষজন। তবে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের অফিসে আলস্যের দুপুরে চূড়ান্ত ব্যস্ততা। মতুয়া কার্ড করার জন্য। বাংলার রাজনীতিতে অন্যতম বড় ইস্যু 'সিএএ'। তবে ঠাকুরবাড়ির সামনে 'সিএএ' যেন নিষিদ্ধ শব্দ। এই নিয়ে প্রশ্ন করতে গেলেই দূরে সরে গেলেন অনেকেই। সিএএ বিধি কার্যকর হওয়ার পরেই এই ঠাকুরনগরে দেখা গিয়েছিল উল্লাস। তবে গত কয়েক সপ্তাহে সেই আনন্দ যেন ম্লান হয়ে গিয়েছে। ঠাকুরনগরের সেই অনুভূতিকে বুঝতেই হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা পৌঁছে গিয়েছিল ঠাকুরবাড়িতে। সেখানে পৌঁছেই দেখা গেল জোর কদমে চলছে মেলার প্রস্তুতি। তারই সঙ্গে চলছে অন্য এক 'প্রস্তুতি'। সেই 'প্রস্তুতি' এবং সিএএ নিয়ে মানুষের মনে কথা জানার চেষ্টা করল হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা। (আরও পড়ুন: মেঘালয়ে CAA বিরোধী মিছিলের গণপিটুনিতে মৃত বাঙাꩲলি, প্রতিবাদে বিক্ষোভ কলকাতায়)
আরও পড়ুন: পাসপোর্ট বিধি ও নাগরিকত্ব আইনে সংঘাত লাগলে কো⛦নটি প্রাধান্ဣয পাবে? যা বলল আদালত
সাম্প্রতিককালে সিএএ-র কারণেই বারবার খবরে উঠে এসেছে ঠাকুরনগরের নাম। ওপার বাংলা থেকে আসা মানুষজনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যা মতুয়াদের। ঠাকুরবাড়ির অনুগামীরা ছড়িয়ে রয়েছেন বনগাঁ থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গের সীমান্তরবর্তী জেলা🐲গুলিতে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে সেই মতুয়া সম্প্রদায়ের মন জিততে সমর্থ হয়েছিল বিজেপি। প্রতিশ্রুতি ছিল - 'নাগরিকত্ব'। তবে তারা যদি ভারতীয় হয়েই থাকেন, তাহলে ফের কেন নাগরিকত্বের প্রয়োজন? ঠাকুরনগরবাসীর বক্তব্য, 'বেনাগরিক' হওয়ার আশঙ্কা থেকেই সিএএ-র দাবি উঠেছিল। আর সেই সিএএ-র বিধি কার্যকর হওয়ার পরে ঠাকুরনগরে দেখা গিয়েছিল উল্লাস🐠। তবে বিধি কার্যকর হওয়ার প্রায় তিন সপ্তাহ পরে, 'সিএএ' এক সংশয়ের নাম সেখানে।
আরও পড়ুন: স😼িএএ-র জন্য 'যোগ্যতা সার্টিফিকেট' দিতে পারবেন স্থানীয় পুরোহিত, বড় দাবি রিপোর্টে
যে ঠাকুরনগরে কয়েকদিন আগেও সিএএ নিয়ে উল্লাস দেখা গিয়েছে, সেখানে কতজন এখনও পর্যন্ত আবেদন জানিয়েছেন নাগরিকত্বের জন্য? এই প্রশ্নের জবাবের খোঁজে ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের অফিসে তখন প্রায় ১০-১৫ জন আছেন। তবে সেখানে গিয়ে সিএএ-র বিষয়ে প্রশ্ন করতেই সবাই মুখে কুলুপ আঁটলেন। অফিসে সবাই 'মতুয়া কার্ড' করাতে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত অনীহা সত্ত্বেও মুখ খুললেন আবেদন পত্র সংগ্রহ করা এক ব্যক্তি। মতুয়া মহাসংঘের কর্মী হিসেবেই ন⭕িজের পরিচয় দিলেন। নাম জিজ্ঞেস করাতে এক সেকেন্ড থমকে গিয়ে বললেন, 'সুনীল মণ্ডল'। এহেন সুনীল বাবু সিএএ নিয়ে বললেন, 'আমাদের সিএএ নিয়ে কথা বলতে বারণ করা হয়েছে। তবে এখন সেভাবে কেউ আবেদন করছে বলে দেখিনি।'
আরও পড়ুন: 'দেড়🔯 কোটি নয়, ৩-৬ লাখ আবেদন করবেন CAA-তে', দাবি অসমের মুখ্যমন💮্ত্রীর, অভিযোগ NRC নিয়ে
পরে অফিসের সামনেই অপর এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হল। তিনি নিজে মতুয়া মহাসংঘের সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করলেন। তবে নাম প্রকাশে তাঁর অনীহা ছিল। তাঁর সাফ কথা, এখন এই সিএএ-তে আবেদন করা যাবে না। তবে কেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, 'গরিবের জন্য আইন নয়, আইন বড়লোকের জন্য। বড়লোকরা যেভাব꧋ে চালাব𝓀ে, আইন সেভাবে চলবে।' তাঁর দাবি, 'যে আইন পাশ হয়েছে, তাতে ২০১৪ সালের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ২০১৪ সালের পর থেকে যারা এসেছে, তাদের কী করবে সরকার? তারা কী অন্যায় করেছে? যারা এখন বাংলাদেশ থেকে আসছে, সব পাসপোর্টে আসছে। এই যাদের আধার কার্ড বাতিল হয়েছে, তারা সবাই পাসপোর্টে এসেছে এই দেশে। যারা ভিসা নিয়ে এসেছে, তারা ফেরত যায়নি, পাসপোর্টও ফেরত পাঠায়নি। তাদের প্রতি তো অন্যায় করা হবে। তবে এই মতুয়া কার্ডটা করে রাখলে সুবিধা হয়। তবে ভয়ের কিছু নেই। সব সিস্টেমে চলে আসবে। সব প্রক্রিয়াকরণ এখনও চলছে।'
আরও পড়ুন: এনআরসি-র আগে ফিরিয়ে নেওয়া হবে সিএএ-র? জানালেন শাহ
এরপর সেই ব্যক্তি আরও বলেন, 'এখন যারা সিএএ-তে আবেদন করছে, তারা মাতব্বরি করছে। আমার চেনাজানা কেউ করছে না। আমার সংগঠনে যারা আছে, তাদের সবাইকে আমি নিষেধ করে দিয়েছি। এরপর যদি কেউ নিজের ইচ্ছায় করে, সেটা তো কিছু করার নেই। কেই এখন সিএএ-তে আবেদন করে যখন বিপদে পড়বে, তখন তাকে আদালতে ছোটাছুটি করতে হতে পারে। এখন আমাদের কাছে যা খবর, তাতে সিএএ-র সবকিছু বদল নিয়েই আলোচনা চলছে। নাগরিত্বের বিষয় যে উঠেছে, আমরা ভোটার না? তাও একটা নাগরিকত্ব কার্ড দেওয়া হবে। কেন? এনআরসি হবে এরপরে। এখানে বাংলাদেশ থেকে আমরা যারা এসেছি, তারা সবাই তো আধার কাܫর্ড, ভোটার কার্ড করেছি অবৈধ ভাবে। আর কেউ যদি বৈধ ভাবে করে থাকে, তাহলে তার উচিত চুপ করে বসে থাকা। এখন এই নিয়ে যে যত ঘাঁটাঘাঁটি করবে, সে তত বেশি পাগল হবে।