ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে দ্রুত পালটে যাচ্ছে সুন্দরবনে গাছের পাতার রং, যার মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু প্রজাতির ম্যানগ্রোভও। গত দুই দিন ধরে এই পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আয়লাতেও এমন অদ্ভূত দৃশ্য দেখা যায়নি সুন্দরবনে। আমফানের পরে অরণ্যের অধিকাংশ গাছের পাতা হলুদ অথবা লাল রঙে বদলে যাচ্ছে। রং পরিবর্তন দেখা দিয়েছে বট, আম, জামরুল, নিম ও কাঁঠাল গাছে। তুলনায় কম হলেও এমন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে ম্যানগ্রোভের কিছু প্রজাতিতেও। দেখে মনে হচ্ছে, গাছগুলি যেন আগুনে পুড়ে গিয়েছে, জানিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীর কুমার জানা। গত কয়েক দিন ধরে তাঁর এলাকা চষে ফেলার পরে একই দৃশ্য দেখেছেন বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধি। কুলতলির বিধায়ক রামশংকর হালদারেরও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাঁর দাবি, ঘূর্ণিঝড়ে সমস্ত গাছই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই কথা বলছেন রায়দিঘির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়।পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হিসেবে সুন্দরবন অঞ্চলে ৪,২০০ বর্গ কিমি সংরক্ষিত জঙ্গল রয়েছে এবং তার বাইরে রয়েছে ৫,৪০০ বর্গ কিমি অঞ্চল। দেখা গিয়েছে, আমফানে প্রায় ১,৫০০ বর্গ কিমি বনাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুন্দরবন ব-দ্বীপ অঞ্চলে মোট ১০২টি দ্বীপ রয়েছে, যার মধ্যে ৫৪টিতে জনবসতি রয়েছে। পশ্চিমবহ্গের মুখ্য বনপাল রবি কান্ত সিনহা জানিয়েছেন, তাঁরা গাছের পাতার রং পরিবর্তনের খবর পেয়েছেন। তিনি জানিয়েচেন, ‘আমরা শুনেছি, কয়েকটি ম্যানগ্রোভ প্রজাতি-সহ গাছের পাতার রং পরিবর্তন হয়েছে। মাটি অত্যধিক লবণাক্ত হলে ম্যানগ্রোভের শিকড় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। একই কারণে অন্যান্য গাছের মধ্যেও পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। তবে এই ক্ষতি সাময়িক না দীর্ঘমেয়াদী, তা খতিয়ে পর্যবেক্ষণের পরেই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।’ আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান বট্যানিকাল গার্ডেন-এর প্রাক্তন যুগ্ম-অধিকর্তা হিমাদ্রি শেখর দেবনাথের মতে, ‘মাটি অতিরিক্ত লবণাক্ত হয়ে পড়লে ম্যানগ্রোভের পাতাও হলুদ হয়ে যেতে পারে। আসলে ম্যানগ্রোভ মিষ্টি ও লবণাক্ত জলের মিশ্রণে বাঁচে। যদি নোনা জল ও পিএইচ-এর অনুপাত গুলিয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে এমন ঘটনা দেখা যেতে পারে।’ রাজ্যের বনমনত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সুন্দরবন অঞ্চলে এমন ঘটনার কথা তিনি শুনেছেন। সরেজমিনে বিষয়টি দেখতে কিছু দিনের মধ্যেই তিনি সুন্দরবন সফর করবেন বলে জানিয়েছেন বনমন্ত্রী।