সকালে আস্থা ভোটে জিতে ভাটপাড়া পুরসভা পুনর্দখল। কিন্তু, বেলা ঘুরতে না ঘুরতেই কলকাতা হাইকোর্টে ধাক্কা খেল তৃণমূল কংগ্রেস। ভাটপাড়ার আস্থা ভোটকে বেআইনি বলল হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। খারিজ করে দেওয়া হয়েছে পুরো ভোট প্রক্রিয়া।যদিও এই রায়ের বিরুদ্ধে আগামীকালই হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে তৃণমূল আবেদন করতে চলেছে বলে জানিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।এর আগে, তিন তৃণমূল কাউন্সিলের ডাকা বৈঠকে ভাটপাড়ায় আস্থা ভোট হয়। তৃণমূলের পক্ষে পড়ে ১৯টি ভোট । ভোটাভুটিতে উপস্থিত ছিল না বিজেপি। তা নিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং বলেন, 'বোর্ড আমাদের হাতছাড়া হয়নি। যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন, তিনি ২০ জানুয়ারি বৈঠক ডেকেছিলেন। জোর করে বৈঠক ডেকে ভোট করানো হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংবিধান মানেন না।'তৃণমূলের পালটা দাবি, পুর আইন মোতাবেক অনাস্থা প্রস্তাব আনার ১৫ দিনের মধ্যে বৈঠক ডাকা হয়নি। সেজন্য তিন কাউন্সিলর বৈঠক ডেকেছিলেন। তাই নিয়মভঙ্গের প্রশ্নই ওঠে না। উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, 'এটা মা-মাটি-মানুষের জয়। মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়। মানুষ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে থাকলে এরকম হয়। লোকসভা ভোটের ফল বেরোনোর পর অর্জুন এলাকায় তাণ্ডব করেছেন। তৃণমূল কাউন্সিলরদের রিভলভার দেখিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তৃণমূলের লোকেরাই তৃণমূলে ফিরে এসেছেন।'প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের ঠিক আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান অর্জুন সিং। তাঁর সঙ্গে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখান ভাটপাড়ার ১১ জন তৃণমূল কাউন্সিলর। ফলে তৈরি হয় অচলাবস্থা। তৃণমূল পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে বিজেপি। তখনকার মতো তৃণমূল দুর্গ রক্ষা করতে সক্ষম হলেও লোকসভা ভোটে অর্জুনের জয়ের পর বদলে যায় রাজনৈতিক সমীকরণ। ভাটপাড়া বিধানসভাতেও জেতেন অর্জুন পুত্র পবন। ফলে এলাকায় আরও শক্ত হয় অর্জুন শিবিরের ভিত।এবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিজেপি। আগের অনাস্থা ভোটে যাঁরা তৃণমূলের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই এবার অর্জুন শিবিরে নাম লেখান। তাঁদের সমর্থনে ৩৫ কাউন্সিলর বিশিষ্ট ভাটপাড়া পুরসভা য় তৃণমূলের বিরুদ্ধে ২৬টি ভোট পড়ে। ফলে সহজেই বোর্ড দখল করে বিজেপি।পুরপ্রধানের চেয়ারে বসেন অর্জুনের ভাইপো সৌরভ।ভোটাভুটিতে হেরে গেলও হাল ছাড়তে নারাজ ছিল ঘাসফুল শিবির। কাউন্সিলরদের দলে ফিরিয়ে আনতে শুরু হয় তৎপরতা। কয়েক দফা বৈঠকের পর ৬ নভেম্বর তৃণমূলে ফিরে আসেন ১২ জন কাউন্সিলর। আগের পাঁচ কাউন্সিলর-সহ তৃণমূলের কাউন্সিলর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭।এরপর ৬ ডিসেম্বরে সৌরভের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে তৃণমূল। কিন্তু, নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে গেলে ভোটাভুটি না হওয়ায় ৩০ ডিসেম্বর পুরসভার অর্থ দপ্তরের আধিকারিকের কাছে আস্থা ভোটের দাবি জানান তিন তৃণমূল কাউন্সিলর।