আপনি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লেনদেন করলে আপনার মোবাইলে একটি মেসেজ আসে। সেখানে আপনার অ্যাকাউন্ট নম্বরের কয়েকটি ডিজিট দিয়ে বলা হয়, ওই লেনদেন কোনও ভাবে আপনি না-করে থাকলে নির্দিষ্ট একটি নম্বরে ফোন করে ব্যাঙ্ককে বিষয়টি জানাতে পারেন। এ ভাবেই ব্যাঙ্ক ভুয়ো আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে গ্রাহকদের সতর্ক করে। তবে সেই সতর্কতামূলক মেসেজও জাল করে প্রতারণার নয়া ফাঁদ পেতেছে জালিয়াতরা, এমনটাই জানাচ্ছে লালবাজার। তা নিয়ে গ্রাহকদের বিশেষ করে শহরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সতর্কও করছে পুলিশ। শহরের প্রবীণদের নিয়ে এসে রীতিমতো 'ক্লাস' নিয়ে লালবাজারের আধিকারিকরা তাঁদের জানালেন, এটিএম জালিয়াত বা ব্যাংক জালিয়াতদের হাত থেকে বাঁচতে তাঁদের কী করতে হবে।এক পুলিশ আধিকারিকের মতে, 'মোডাস অপারেন্ডি' পালটাচ্ছে জামতাড়া, ধানবাদের জালিয়াতরা। তারা জালিয়াতি শুরু করেছিল নিজেদের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ম্যানেজার বা আধিকারিক পরিচয় দিয়ে। তাদের ফাঁদে পা দিয়েছিল অনেকেই। শেষ পর্যন্ত তা এসে দাঁড়িয়েছে সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র বা ছাত্রীতে। যদিও তাদের সেই মূল লক্ষ্য এটিএম কার্ডের নম্বর ও অন্যান্য তথ্য জানা। এখনও তাদের 'টার্গেট' শহরের বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা। পুলিশের কর্তাদের মতে, দেখা গিয়েছে, এই ধরনের ব্যাংক জালিয়াতির ক্ষেত্রে জালিয়াতদের ফাঁদে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাই বেশি পড়েন।লালবাজারের তরফে জানানো হয়েছে, বহু প্রবীণই এটিএম কার্ড ব্যবহার করেন। কিন্তু অনেক বিষয়েই তাঁরা অবহিত নন। অনেক প্রবীণই আবার অনলাইনে ব্যাংকের লেনদেন করতে গিয়ে বিপদে পড়েন। তাঁদের পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়, যদি সমস্যা বা অসুবিধায় পড়েন, তাঁরা যেন এটিএমের বদলে চেক ব্যবহার করেই টাকা তোলেন। তাই এদিনও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বলা হয়, তাঁদের যদি কেউ ফোন করে এটিএম কার্ডের নম্বর চায়, তাঁরা যেন কখনওই না দেন। এ ছাড়াও কেউ যদি দিয়েও ফেলেন, তবে যেন ওটিপি না দেন। সিভিভি নম্বরও যেন তাঁরা কাউকে না দেন। পাশাপাশি, অনলাইন বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেনের ক্ষেত্রেও তাঁদের সচেতন হতে বলা হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীবিহীন এটিএম কাউন্টারে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে শহরের পুলিশ সদর দফতরের তরফে। ব্যক্তিগত ঋণ বা পার্সোনাল লোনের নাম করে প্রতারণা ও জালিয়াতির সম্পর্কে তাঁদের সচেতনও করা হয়। এটিএমে টাকা তুলতে গেলে প্রবীণদের কী করণীয়, তা-ও তাঁদের বোঝানো হয়। এই সম্পর্কে কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে লালবাজার সূত্রে। আসল এসএমএস অ্যালার্টের মতো এই মেসেজেও একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকছে। গ্রাহকদের বলা হচ্ছে, তিনি যদি ওই টাকা না-তুলে থাকেন, তা হলে মেসেজটি রেজিস্টার্ড নম্বর থেকে নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বরে ফরোয়ার্ড করতে হবে। এখানেই সতর্ক করছে পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, অনেক সময় গ্রাহক হয়তো মেসেজ দেখে ভাবতে পারেন, তিনি তো কোনও আর্থিক লেনদেন করেননি। তা হলে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হল কেন? তিনি ভুল করে প্রতারকের পাঠানো নম্বরে ফোন বা মেসেজ করে বসতে পারেন। তা হলেই প্রতারকরা তাঁদের মোবাইল নম্বর বা অ্যাকাউন্টের তখন দূরনিয়ন্ত্রিত উপায়ে নিয়ে নিতে পারে। তার পর অ্যাকাউন্ট থেকে হাতিয়ে নিতে পারে টাকা। এই ধরনের এসএমএস এলে পুলিশের পরামর্শ, ভালো করে দেখে নিন, মেসেজে আপনার অ্যাকাউন্টের কয়েকটি ডিজিট উল্লেখ করে বাকিগুলি 'X' করা আছে কি না। কোনও সন্দেহ হলে সরাসরি ব্যাঙ্কে গিয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। না-হলে লালবাজারের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার হেল্পলাইন নম্বরে--৮৫৮৫০৬৩১০৪ ফোন করে জানানোর পরামর্শ দিয়েছে লালবাজার।