রণবীর ভট্টাচার্য
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া রাজনীতির আঁতুড়ঘর। নেতারা যান, নেতারা আসেন। এই দুই দিন আগেও যেমন শেখ হাসিনা তাXর নিজের দেশে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রাক্তন হয়ে গেলেন। তবে এর মধ্যেও অনেকে জনগণের কাছে আলাদা হয়েই থেকে যান। আজ বাম-ডান-মধ্যপন্থা, সর্বত্রই শোকাতুর বাঙালি সেই সাদা ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত ꦏশেষ বাঙালি রাজনীতিবিদকে স্মরণ করছেন— বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সেটা ষোলো আনা অর্জন করেছেন তার জীবনে। রাজনীতিবিদ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে আন্দাজ করা একটি দিক, আবার মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এর শাসনকালকে পর্যালোচনা করা আরেকটি আঙ্গিক। প্রায় আড়াই দশক আগে বঙ্গ সিপিএম ভরসা রেখেছিল 'ব্র্যান্ড বুদ্ধ' এর উপর।
আরেকটু পিছনে ফিরলে মনে পড়বে বর্ষীয়ান মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর জমানার কথা। জনমানসে ধারণা ছিল যে সেই জমানায় 'চলছে চলবে' এর মধ্যে বাঙালি চাকরি ভুলেছিল, কারখানার তালার চাবি হারিয়েছিল ট্🎀রেড ইউনিয়নের ধাঁধায় আর পরিবার কেন্দ্রিক বাঙালিকে বাংলার বাইরে যেতে হয়েছিল। বঙ্গের বামপন্থীরা বুঝেছিলেন🌠 যে প্রমোদ দাশগুপ্ত থেকে অনিল বিশ্বাস জমানা, সমাজ, বাজার আর চাহিদা বদলেছিল অনেকটাই।
কমিউনিস্ট দল শিল্প আনছে? ধনতন্ত্র এর আঙ্গিকে চাকরির ফর্মুলা খুঁজছে? ব্র্যান্ড বুদ্ধ এই চোখ কচলানোর কাজটা করেছিল। সেই সময় সবার আগে ভুরু উঁচিয়ে প্রশ্ন করেছিল তার নিজের দল। আর তারপর বাম জমানার শরিক দলগুলো। সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল জমি অধিগ্রহণের বিষয়, যার নেতিবাচক রাজনীতিক পরিণতি ছিল সিঙ্গুর - নন্দীগ্রাম সমস্যা। উইপ্রোর আজিম প্রেমজি বলেছিলেন বু🧸দ্ধবাবু দেশের সেরা মুখ্যমন্ত্রী। বাংলায় এসইজেড তথা অর্থনৈতিক ভাবে বিশেষ জোনের ভাবনা এসেছিল এই ব্র্যান্ড বুদ্ধের হাত ধরেই।
কমিউনিজমের সাথে কি ব্র্যান্ড বুদ্ধের সংঘাত ছিল? এই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর ജহয়তো পলিটব্যুরোর অন্দরেই লুকিয়ে আছে। কিন্তু বাম জমানার লোকাল কমিটি, এরিয়া কমিটি থেকে সংগঠনের তৃণমূল স্তরে, এই ব্র্যান্ড বুদ্ধ আলোড়ন ফেলেছিল অনেকটাই। কিন্তু সকলেই কি আত্মস্থ করতে পেরেছিলেন? এখানেই বোধহয় ২০১১ এর বিপর্যয়ের বীজ লুকিয়ে ছিল। অনেকেই ব্র্যান্ড বুদ্ধ ভাবনকেই গিমিক বলেছিলেন। অনেকের কাছে এটা ছিল সিপিএম এর নিজেকে গ্রহণযোগ্য করার প্রচেষ্টা।
গত দুই লোকসভা নির্বাচনে বামপন্থীদের বাংলা থেকে প্রাপ্তি শূন্য। যেই বিধানসভায় বছর পনেরো আগেও লাল রঙের আধিপত্য ছিল, সেখানেও আজ একরাশ শূন্যতা। এত কিছুর পরেও সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ খোঁজ করতেন, আবদার করতেন অসুস্থ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শেষবারের মত ফিরে আসুন। এখানেই সাফল্য ছিল ব্র্যান্ড বুদ্ধের। আজ যখন স্কুলের চাকরি, ডি এ আন্দোলন আর সব কিছু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা, অনেকেই বলেছেন বুদ্ধ 💞বাবুর জমানায় এরকমটা ছিল না। ব্যক্তি বুদ্ধদেব দলতন্ত্র থেকে আলাদা হয়ে নতুন পথ দেখাতে পেরেছিলেন, কিন্তু সেটাই হয়তো ভোটতন্ত্রকে খুশি করতে পারেননি। তবে ব্র্যান্ড বুদ্ধ রয়ে গিয়েছে, যেখানে আপামর ভদ্রলোক বাঙালি দুর্নীতি দেখে প্রতিবাদ করবে, নিজের রাজ্যে চাকরি খুঁজবে। তাই ব্র্যান্ড বুদ্ধ বামপন্থার একটি অঙ্গ না হয়ে, নতুন রাস্তা চিনিয়েছে বাঙালিকে। এখানেই পরম প্রাপ্তি সদ্য প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)