মা–বাবার মধ্যে ঝগড়া। মনোমালিন্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে। কিন্তু বড়দের এই অশান্তির জেরে ছোট্ট শিশুকন্যার জী💖বনে নেমে এসেছিল কষ্ট। কারণ মায়ের কাছে বেড়ে উঠলেও বাবার ভালবাসা–স্নেহ থেকে বঞ্চিত ছিল ছোট্ট মেয়েটি। নানা প্রশ্ন তৈরি হতো তার মনে। যা জিজ্ঞাসা করত তার মাকে। কিন্তু উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারত না। এভাবেই কেটে গিয়েছে একের পর এক দুর্গাপুজো। সে মায়ের কাছে থেকেই একটু একটু করে দুর্গাপুজোর আলো, প্যান্ডেল, ঠাকুর দেখতে শিখেছে। ছোট ছোট আবদার মিটলেও বাবার অভাবে মনের শান্তি মেলেনি।
তবে এবার আট বছরের সেই ছোট্ট মেয়েটির জীবনে খুশির হাওয়া বয়ে নিয়ে এল উচ্চ ন্যায়ালয়। অর্থাৎ কলকাতা হাইকোর্ট। বাবা–মায়ের দূরত্বে তিন বছর বয়স থেকেই মায়ের সঙ্গে থাকে সে। তাই জীবনের প্রথম পাঁচটা দুর্গাপুজোয় বাবার পরশ পায়নি একরত্তি। তবে এবার কলকাতা হাইকোর্টের দৌলতে বাবা–মাকে একসঙ্গে নিয়ে ওই ছোট্ট মেয়েটি দুর্গাপুজোয় আনন্দ করছে। বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের কড়া নির্দেশে এবারের দুর্গাপুজো নিয়ে এল প্রকৃত উৎসবের মেজাজ। এবার বাবার কোলে চড়ে ঠাকুর দেখবে। বাবা🐷–মায়ের সঙ্গে পুজো মার্কেটিং করেছে সে। বাবার কাছে চাইতেই একটা ঘড়িও মিলেছে। এটাই তো চেয়েছিল ছোট্ট মেয়েটি। বাবা–মায়ের হাত ধরে দুর্গা ঠাকুর দেখতে।
আরও পড়ুন: সরকারি হাসপাতালগুলির নিরাপত্তায় বাড়তি জোর, ইলেকট্রিক সাইকেলে কলকাতা পুলিশ
স্কুলজীবনে বন্ধুত্ব যুবক–যুবতীকে পরে কাছাকাছি নিয়ে আসে। তখন সেই সোনালি দিনগুলিতে সবই ভাল লাগছিল। উচ্চশিক্ষা শেষ করে নৈহাটির যুবক কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থায় চাকরি পান। আর যুবতী বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা। বন্ধুত্ব বদলে যায় প্রেমে। তারপর বিয়ে। ২০১৬ সালে তাঁদের জীবনে এল সন্তান সুখ। ছোট্ট মেয়ে আসার পরও ভালই চলছিল। তারপরই ঘটল মনোমালিন্য। সম্পর্কের মধ্যে ঢুকে পড়ে ইগো ক্ল্যাশ। আর তখন থেকেই তিন বছরের মেয়ে মায়ের কাছে বেড়ে ওঠে বাবা ছাড়াই। বিব🍰াহবিচ্ছেদের মামলা হতেই🌞 মেয়েকে দেখতে পেতেন না বাবা। তাই মেয়ের দেখা পাওয়ার জন্য কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বাবা।
খেলা ঘুরল এখান থেকেই। বলা যেতে পারে জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। ওই মামলা চলে যায় বিচারপতি মধুরেশ প্রসাদের ডিভিশন বেঞ্চে। স্পেশাল অফিসারের রিপোর্ট দেখে বেঞ্চ জানায়, ইগো ত্যাগ করে বাবা–মায়ের উচিত সন্তানের কল্যাণ করা। আদালতের নির্দেশ, সপ্তাহে দু’দিন নিজের বাড়িতেই মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন তার বাবা। কিন্তু তাতেও সমস্যা দেখা দেয়। মায়ের সদর্থক পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছিল না। এটা জানতে পেরে আদালতের পর্যবেক্ষণ, সুস্থ পরিবেশে শিশুর বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে হবে। না হলে আদালত কড়া পদক্ষেপ করবে। এই কথা শোনার পর মেয়ের জীবনে একসঙ্গে এল বাবা–মা। দুর্গাপুজোর শপিং থেকে ঠাকুর দেখা চলছে একসঙ্গে। আর ওই ছোট্ট মেয়েটি এখন হাসছে। মেয়ের মা বলছেন, ‘দুর্গাপুজোয় তিনজন ঠাকুর দেখতে বেরোচ্ছি। ঠাকুর দেখে কোনও রেস্তোরাঁয় খাচ্ছি।’ আদালতের নির্দেশ, ‘দুর্গাপুজোর পরেও♚ এভাবেই আগলে রাখতে হবে মেয়েকে।’