বামফ্রন্ট সরকারের শেষ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জীবনাবসান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। ২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আজ, বৃহস্পতিবার সকালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজনৈতিক মহলে। তারিখটা ছ🅷িল ১৩ মে ২০১১। মোটা কাঁচের চশমার উপর থমথমে চোখ দুটো মহাকরণ থেকে বেরিয়ে একবা༒র থমকে গিয়েছিল। ততক্ষণে নামের আগে ‘প্রাক্তন’ বিশেষণটা চিরতরে বসে গিয়েছিল পাম অ্যাভিনিউর বাসিন্দার। গাড়িতে ওঠার পথে সংবাদমাধ্যম ছেঁকে ধরলে উত্তর একটাই ছিল, ‘বাংলার মানুষকে একদিন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে তাঁরা শিল্প চান না কৃষি চান। আর সেদিন যদি উত্তর শিল্প হয় তাহলে আজকের ভোটের ফলাফল তাঁদের জন্য খুব সুখের হবে না।’
১৯৪৪ সালের ১ মার্চ উত্তর কলকাতা যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সেই পরিবারের আর এক বিখ্যাত মানুষ হলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। যিনি হলেন বুদ্ধবাবুর সম্পর্কে কাকা। ১৯৬১ সালে কলকাতার শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় থেকে মানবিকী বিদ্যা নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক উত্꧙তীর্ণ হন। ১৯৬৪ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলা নিয়ে কলা বিভাগে সাম্মানিক স্নাতক হন। স্কুলজীবনে এন.সি.সি–তে যোগদান করেন। কলেজ জীবনেও এন.সি.সি’র ক্যাডেট (নৌ–শাখা) ছিলেন।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শেষবারের মতো গাড়িটা বেরিয়ে গেল। একটু ফ্ল্যাশ ব্যাকে গেলে ১১টা বছর কেটে গেল। কটা ভারী শিল্প এসেছে? প্রতি বছর লাখ লাখ ছেলেমেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বেরোচ্ছে। তারপর! সেই তো ছুটছে বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, গুরগাঁও—এটাই ছিল তাঁর সংবাদমাধ্যমে শেষ সাক্ষাৎকার। কারখানা বন্ধ হয়েছে, তার বিকল্প কারখানা আনতে জান লড়িয়ে খেটেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। হলদিয়া পেট্রোকেম, অন্ডাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, সল্টলেক আইটি হাব—তাঁর হাত ধরেই এসেছিল। কলেজ জীবনে রাজনীতিতে যোগদান। তারপর সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য। সিপিআই(এম) কেন্দ𝔉্রীয় কমিটির সদস্য এবং সিপিআই(এম) পলিটবু্রোর সদস্য।
আরও পড়ুন: সাতসকালেই প্রয়াত হলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, 💦বামফ্রন্ট সরকারের শেষ মুখ্যমন্ত্রী চিরনিদ্রায়
১৯৭৭ থেক🐎ে ২০১১ পর্যন্ত বুদ্ধবাবুকে ইনসাল্লা বা জয় শ্রীরাম বলতে কেউ শোনেননি। কোনও ইফতার আ🌟র পুজোয় যোগ দেননি। তাঁর কথায়, ‘মন্দির–মসজিদের রাজনীতি কখনও নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে না। গরিব ছেলে–মেয়েদের চাকরি দরকার। তাই রাজ্য কলকারখানা প্রয়োজন। সেসব হলে এই রাজ্যের ছেলে–মেয়েদের অন্য রাজ্যে যেতে হবে না কাজ করতে। আমাদের ছেলে–মেয়েরা ইংরেজিটা জানে। কম্পিউটারটা শিখেছে। তাদের হাতে চাকরি দরকার। এখন অস্ত্র নিয়ে মিছিল করে নতুন ধর্ম–ব্যবসায়ীর দল।’
সরকারি নিয়োগ আর ভারী শিল্প ছাড়া রাজ্য বাঁচবে না। আর সেটার পথ দেখিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাই, সেই দিনটা ২০১১ সালের ১৩ মে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে দেখা গেল, পশ্চিমবঙ্গের এক শ্বেতশুভ্র রাজনীতিবিদ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিলেন। রাজভবন থেকে যখন বেড়িয়ে এলো তাঁর কনভয় তখন তিনি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। সেদিন তার চোখে﷽র জলের ছবি অনেকেই দেখাতে পারেনি। তবে তার অভিমান আজও রাজ্যের মানুষ বুঝতে পারছেন। হ্যাঁ সত্যি। বুদ্ধবাবুর অভিমান রয়েছে রাজ্যের মানুষের প্রতি। তিনি তো নিজের জন্য কিছু করতে চাননি। চেয়েছিলেন রাজ্যের বেকারের মায়ের চোখের জল মোছাতে। তাঁর শিল্পায়নের পদ্ধতিগত কিছু ত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু সেদিন শুধু বিরোধীরা নয়,বামফ্রন্টের কয়েকটি শরিক যেভাবে বুদ্ধবাবুর কাজের পথে বাঁধা সৃষ্টি করেছিলেন, তাঁদের দ্বারাও বুদ্ধবাবু মানসিকভাবে আহত হয়েছিলেন।