মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক সম্প্রতি দাবি করেছিলেন, মন্ত্রীর নির্দেশেই নিজের স্ত্রী এবং মাকে ভুয়ো সংস্থার ডিরেক্টর করতে হয়েছিল তাঁকে। আর এবার ফের একবার মন্ত্রীকে নিয়ে মুখ খুললেন তিনি। বুধবার সংবাদমাধ্যমকে অভিজিৎ দাস জানান, রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের আপ্ত সহায়কের পদে তিনি যোগ দিয়েছিলেন ২০১১ সালে। তবে সেই কাজে তিনি অস্বস্তি বোধ করতেন। এই আবহে পারিপার্শ্বিক চাপে পড়েই নাকি ২০১৪ সালে তিনি মন্ত্রীর আপ্ত সহায়কের কাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন। এই আবহে তাঁর দাবি, এক সময়ে মন্ত্রীর আপ্ত সহায়ক হলেও দুর্নীতির সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই। (আরও পড়ুন: খোলা বাজা﷽রে বিক্রি হয়েছে বাংলার গরিব মানুষের ৩০% রেশন, দাবি করল ইডি)
তিনি গতকাল এই নিয়ে বলেন, '২০১১ সালে আমি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের আপ্ত সহায়ক হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিলাম। পরে আমার মনে হয়েছিল, ওই জায়গায় কাজ করা আমার পক্ষে সুবিধাজনক নয়। মন্ত্রীর কাছে নান꧙া ধরনের মানুষের আনাগোনা লেগে থাকত। সেই পরিবেশ কিছুটা অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছিল আমার জন্য। তাই বেরিয়ে এসেছিলাম।' এদিকে মন্ত্রীর হয়ে কাজ করায় 'অস্বস্তি'র উল্লেখ করলেও তা নিয়ে খোলসা করে কিছু বলেননি অভিজিৎ দাস।
এদিকে সম্প্রতি তল্লাশি চালিয়ে অভিজিতের বাড়ি থেকে একটা মেরুন ডায়েরি বাজেয়াপ্ত করেছিল ইডি। সেই ডায়েরিতে অনেক জায়গায় উল্লেখ রয়েছে 'বাল💫ুদা'-র। সেই ডায়েরি যে তিনিই লিখতেন তা স্বীকার করেছেন অভিজিৎ। ডায়েরি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, 'আমি ডায়েরি লিখতাཧম। ওটা আমার কাছে রেখেছিলাম। তবে ওই ডায়েরির বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। ঘটনার তদন্ত করছে ইডি।'
প্রসঙ্গত, রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে একের পর এক ডায়েরি সামনে আসছে বলে জানা গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে এই মামলায় সামনে এসেছিল 'মেরুন ডায়েরি'। মন♐্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রাক্তন আপ্তসহায়ক অভিজিৎ দাসের থেকে মিলেছিল সেই ডায়েরি। সেই ডায়েরিতে নাকি ছিল এই দুর্নীতির আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত অনেক তথ্য। এদিকে ইডির দাবি, অভিজিতের কাছ থেকেই উদ্ধার হয়েছে আরও তিনটি ডায়েরি। সেই সব ডায়েরিতেও আছে প্রচুর তথ্য।
এমনকী এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকেও একটি ডায়েরি উদ্ধার হয়েছে। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই ডায়েরিতেই মন্ত্রীকে পাঠানো ব্যবসায়ীর মাসিক টাকার হিসেব মিলেছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে বালু সহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে জি🐽জ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একটি ডায়েরি মিলেছে। সেই ব্যবসায়ী আবার মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত। জানা গিয়েছে, সেই ডায়েরিতে দুর্নীতির চাল, আটা কেনার হিসেব রয়েছে। কত টাকা দিয়ে সেই সব খাদ্যদ্রব্য কেনা হত, তা উল্লেখ করা রেছে। কোন কোন ব্যবসায়ীকে আবার সেই দুর্নীতির চাল, আটা বিক্রি করা হয়েছে, তাও লেখা রয়েছে সেই ডায়েরিতে। একাধিক প্যাকেজিং সংস্থার নাম রয়েছে সেই তালিকায়। জেরার মুখে সেই ব্যবসায়ী নাকি মেনে নিয়েছেন যে এক দশক ধরে বেআইনি ভাবে তিনি চাল, আটা কিনে তা বিক্রি করতেন। রেশন দ্রব্য কেনা বেচার কোনও লাইসেন্সও তার নেই। এদিকে এই ডায়েরিতে যাদের নাম রয়েছে, তাদের নিয়ে তদন্তে নেমেছ ইডি। এছাড়া সেই ডায়েরিতে ‘মাসোহারা’ দেওয়ার হিসাব রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। অবশ্য, ওই ডায়েরিতে লেনদেনের যে হিসাব রয়েছে, তাতে কোনও স্বাক্ষর নেই। তাই এই ডায়েরিকে প্রমাণ হিসেবে ধরা যাবে না। তবে তদন্তের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করবে এই সব ডায়েরির পাতা।
এদিকে ইডি সূত্রের দাবি, ১০ জনেরও বেশি ব্যক্তির নাম রয়েছে ওই ডায়েরিতে। জানা গিয়েছে, কেন তাঁরা মন্ত্রীকে নগদ টাকা পাঠাতেন এবং সেই টাকার উৎস কী, ইডিꦑ তা জানতে চাইবে তাঁদের কাছে। রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ইডির দাবি, ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রাজ্যের ১২ হাজারেরও বেশি ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটর, রেশন দোকানের মালিকের নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছিল। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই এক দশকে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ ইডির। আর তদন্তকারীরা বলছে🐬ন, এই গোটা নেটওয়ার্কের মাস্টারমাইন্ড নাকি মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক নিজেই।